বাদাম চরাঞ্চলের একটি অর্থকরী ফসল
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে মুকতার হোসেন
বাদাম মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চরাঞ্চলের একটি অর্থকরী ফসল। বর্ষা মৌসুমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরুর আগে সংগৃহীত এই ফসলটি চাষাবাদে বিগত কয়েক বছর যাবৎ মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ, সুতালড়ি, আজিমনগর, ধুলশুরা ইউনিয়নের দ্বীপচরবাসী প্রান্তিক মানুষ আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হচ্ছেন।
অবস্থানগত কারণে চরাঞ্চল একটি ভঙ্গুর এলাকা। প্রতিবছর নদীভাঙনে আবাদি জমি বিলীন হওয়া এখানকার একটি অতি স্বাভাবিক ঘটনা। অন্যদিকে প্রতিবছর চরাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় বালু ও পলি জমে মাটিতে। এখানকার বেলে-দোঁআশ মাটি বাদাম চাষের জন্য খুবই উপযোগি। নরম বুনটের এই মাটিতে বাদামের শিকড় সহজেই বিস্তৃত হয় বলে ফল বেশি পুষ্ট হতে পারে। বিগত ২০২০ সালের ব্যাপক বন্যায় চরের জমিতে পর্যাপ্ত পলি পড়ায় হরিরামপুর উপজেলার চরাঞ্চলের লেছড়াগঞ্জ, সুতালড়ি, আজিমনগর, ধুলশুরা ইউনিয়নের পদ্মা তীরবর্তী জেগে উঠা চরের জমিতে কৃষকরা এবছর ব্যাপক পরিমাণে বাদাম চাষ করেছেন।
লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে সেলিমপুর গ্রামের চরবাসী কৃষক মো. ইব্রাহিম মিয়া জানান, চরে আষাঢ় মাসে বৃষ্টির সাথে সাথে নদীর পানিও বাড়তে থাকে। অনেক সময়ই অধিক বৃষ্টিতে চরের নিচু জমি পানিতে তলিয়ে যায়। বর্ষা শুরুর আগেই চরে বাদাম সংগ্রহ করা হয়। চরাঞ্চলে বাদাম চাষ বিষয়ে কৃষক ইব্রাহিম মিয়া জানান, এক বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে বাদাম চাষ করতে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার মত খরচ হয়। জমির মাটি উপযোগি হলে ও ভালোভাবে পরিচর্যা করলে প্রতি বিঘা জমিতে ৫-৬ মণ পর্যন্ত বাদাম উৎপাদন হয় যা ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকায় স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা যায়।
হরিরামপুরের চরাঞ্চলে বর্তমানে চলছে বাদাম সংগ্রহের মৌসুম। চরের সেলিমপুর জয়পুর, হরিহরদিয়া, নতুনহাট, বালিয়াচক, নটাখোলা, পাটগ্রামচর এ সকল গ্রামগুলোর বাদাম চাষীদের এখন ব্যস্ত সময় কাটছে। করোনাকালীন সময়ে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় চাষীদের সন্তানরাও মাঠ থেকে বাদাম সংগ্রহের কাজে সহযোগিতা করছে। পাটগ্রামচর পদ্মার তীরবর্তী এলাকায় পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও জমি থেকে বাদাম সংগ্রহের কাজ করেন। পাটগ্রামচরের কৃষানী সেলিনা বেগম জানান, মজুরি বাদাম হিসাবে পরিশোধ করা যায় বলে বাদাম তোলার কাজে বেশির ভাগ জমির মালিক নারী কৃষকদের পছন্দ করেন। আর এই সময়ে বাড়িতে সাংসারিক কাজ কম থাকে বলে নারীরাও আগ্রহ নিয়ে বাদাম সংগ্রহের কাজ করেন। এখানকার নারীরা প্রতি ৬ কেজি বাদাম জমি থেকে তুললে মজুরি হিসাবে এক কেজি বাদাম পেয়ে থাকেন। এই কাজে একজন নারী প্রতিদিন গড়ে মজুরি হিসাবে ৫-৬ কেজি বাদাম পেয়ে থাকেন যার বাজার মুল্য প্রায় ৪০০-৪৫০ টাকা। সেলিনা জানালেন, তিনি তার ছেলেমেয়েদের স্কুলের টিফিন হিসাবে বাদাম দেন। ফলে তাদের বাইরের অস্বাস্থ্যকর বিস্কুট, চানাচুর, চিপস কিনে খেতে হয় না। এতে তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমে। অন্যদিকে বাদাম পুষ্টিসমৃদ্ধ ও সুস্বাদু বলে স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।
চরাঞ্চলে বাদাম চাষ বিষয়ে হরিরামপুরের উপসহকারী কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, ‘এখানকার বাদাম চাষিদের বীজবাদাম সহায়তা দিয়ে বাদাম চাষে উদ্বুদ্ধ করার কাজ চলমান রয়েছে। একই সাথে অধিদপ্তরের স্থানীয় অফিস থেকে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, পরিচর্যা, বালাইদমনসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়।’
উল্লেখ্য যে, বারসিক ২০১০ সাল থেকে চরাঞ্চলের পরিবেশ-প্রকৃতি, জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন, কৃষিপ্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ, লোকায়তজ্ঞান ও প্রাকৃতিক সম্পদে প্রান্তিক মানুষের প্রবেশাধিকার নিয়ে হরিরামপুর উপজেলার দ্বীপচর ও মূল ভুখন্ডের প্রান্তিক গ্রামীণ, পেশাজীবী জনগোষ্ঠি, শিক্ষার্থী, যুব-তরুণ, সাংবদিক, নাগরিক সমাজের সাথে ‘জন-নেতৃত্বে উন্নয়ন’ পন্থায় বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।