খেজুর গাছ বজ্রপাতের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে
সত্যরঞ্জন সাহা, হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ
হরিরামপুর উপজেলার উপর দিয়ে পদ্মা নদী বয়ে যাওয়ায় একটি অংশ মেইনল্যান্ড অপরটি চরাঞ্চল। পদ্মা নদীর যেমন মানুষের জীবন ও জীবিকার সাথে সম্পর্কিত তেমনি নদী ভাঙনে ছোট হয়ে আসছে ফসলি কৃষি জমি ও বসতি স্থান। হরিরামপুরে পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতি, নদী দখল করে নিচ্ছে তার বিস্তৃত জায়গা। এখানে পদ্মা নদী ভাঙন, মৌসুমে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভাঙন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যায় রাস্তা ঘাট ভাঙন, বজ্রপাত প্রতি বছরের ঘটনা। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষি ফসল ও জনগণের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ক্ষতির থেকে রক্ষার জন্য জনগণ গাছপালা রোপণসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জনগণের জানমাল রক্ষায় হরিরামপুর স্বেচ্ছাসেবক টিমের উদ্যোগে খেজুর বীজ বপন করেন গত ৫ বছর ধরে।
‘লোকসংগীত আর হাজারীগুড় মানিকগঞ্জের প্রাণের সুর’ হরিরামপুরের হাজারীগুড় বাংলাদেশে বিখ্যাত। কিন্তু বড় দুঃখের বিষয় হলো পুরাতন কিছু গাছ দেখা গেলেও নতুন খেজুর গাছ চোখে পড়ে কম। খন্দকার মিজান বলেন, ‘বিশ বছর আগে খেজুর গাছ কাটার লোক ছিল বেশি, বর্তমানে গাছি কম। ফলে খেজুর গাছ কাটার লোক নেই, এ জন্য খেজুর গাছ কেউ বুনেন না। আমরা গাছিদের উদ্যোগে কিছু খেজুর বীজ বপন করছি। তবে যুব স্বেচ্ছাসেবক টিম খেজুর বীজ বপন করছেন। স্বেচ্ছাসেবক টিমের সাথে আমরা যুক্ত আছি। বিগত দশ বছর দেখা যায় প্রতিবছরই পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেয়ে গ্রামে প্রবেশ করে। বিশেষ করে পানিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। খেজু বীজ বপন করা হয় জুন-জুলাই মাসে কিন্তু বন্যা পানি হয় জুলাই আগস্ট মাসে, ফলে খেজুর বীজ পানিতে পচে যায়। হরিরামপুর নিচু ও নি¤œাঞ্চাল হওয়ায় যেখানে বন্যার পানি প্রবাহিত হয় সেখানে খেজুর গাছ হয় না।’ এ অবস্থায় হরিরামপুর স্বেচ্ছাসেবক টিম উঁচু জায়গা নির্ধারণ করে হরিরামপুরের ঝিটকা সিকদার পাড়া ও বাহিরচর গ্রামের উঁচু রাস্তায় ও বাড়িতে খেজুর বীজ বপন করেন।
উপজেলার উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুল ছালাম বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যায় রাস্তাঘাট ভাঙন, বজ্রপাত মোকাবেলায় খেজুর গাছ সহায়কের ভূমিকা পালন করবে। রাস্তার দুই পাশে খেজুর বীজ বপনের মাধ্যমে মাটির ক্ষয় রোধে সহায়ক। হরিরামপুরের চর এলাকায় খেজুর গাছ নেই বললেই চলে ফলে বজ্রপাতে প্রতিবছর মানুষসহ ও প্রাণি সম্পদের ক্ষতি হয়। চরে খেজুর বীজ বপনের মাধ্যমে প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা হবে। রাস্তার দুই পাশে খেজুর গাছ হলে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। হরিরামপুরে আগে প্রচুর পরিমাণে খেজুর গাছ ছিল। বর্তমানে বারসিক ও সহযোগি সংগঠনের উদ্যোগে রাস্তার পাশে তাল, খেজুর বীজ বপন করছেন। তবে বর্তমানে খেজুর গুরের দাম ৫০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত হওয়ায়। খেজুর গুরের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষক পর্যায়ে খেজুর বীজ বপন করতে দেখা গেছে। খেজুর গাছ পরিবেশ স¤œত ও পাখি খাবারের সহায়ক। হরিরামপুর নিচু এলাকা ও নদী ভাঙন থাকায় খেজুর গাছ এলাকার জন্য খুবই উপযোগি।’
হরিরামপুর যুব স্বেচ্ছাসেবক টিম ও পদ্মাপাড়ের পাঠশালা উদ্যোগে হরিরামপুরে রাস্তার পাশে খেজুর বীজ বপন করেন। যুবকদের উদ্যোগ দেখে কৃষকগণ স্বেচ্ছায় খেজুর বীজ বপন করছেন। স্বেচ্ছাসেবক টিমের সদস্য ও ছাত্র যুবকগণ খেজুর বীজ সংগ্রহ করে বপন করছেন। যুবকদের উদ্যোগে খেজুর বীজ রাস্তায় পাশে বপন করায় তাল, খেজুরের গাছ ছোট ছোট গাছ দেখা যাচ্ছে। গাছগুলো বড় হলে আজকের ছোট ছোট উদ্যোগগুলো আগামীতে খেজুর গুড় উৎপাদনে ও খাদ্য নিরাপত্তায় সহায়ক হবে। খেজুর গুড় তৈরি ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক হবে। টিমের সদস্য বৃক্ষ রোপণের পাশাপাশি নিয়মিত খেজুর ও তাল বীজ বপন করছেন।
হরিরামপুর উপজেলায় প্রাকৃতিক দূর্যোগ নদী ভাঙন, রাস্তাঘাট ভাঙন, বজ্রপাত মোকাবেলায় খেজুর বীজ বপন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বারসিক এলাকার ছাত্র-যুবক, ক্লাব, কৃষক সংগঠন ও কৃষক-কৃষাণিদের অংশগ্রহণে খেজুর বীজ বপনে উদ্যোগ গ্রহন করেন। বিগত পাঁচ বছর ধরে খেজুর ও তাল বীজ বপন করায় ভাঙন রোধ, পাখি থাকার আবাসস্থল এবং খাবারের সহায়ক হবে।