সাম্প্রতিক পোস্ট

রেবেকা খাতুন এর স্বপ্ন

সাতক্ষীরা থেকে ফাতিমা আক্তার

কেউ কেউ বলেন, স্বপ্ন দেখা হচ্ছে মানুষের একটি বড় ক্ষমতা। মানুষ ছাড়া আর কোন জীব স্বপ্ন দেখে কি না তা এখনও জানা সম্ভব হয়নি। স্বপ্ন থেকেই জন্ম একটি পরিবারের। স্বপ্ন আছে বলে মানুষ সেই স্বপ্নকে তাড়া করতে চায়। আর সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য মানুষ অদম্য ইচ্ছা শক্তি ও কঠোর পরিশ্রমে তারা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছে যায় খুব সহজেই।

বারসিক পরিবেশ প্রকল্পের তেমনি একজন অংশগ্রহণকারী শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দাতিনাখালী গ্রামের রেবেকা খাতুন (৩০)। স্বামী আল-আমীন (৩৮)। তিন সন্তানের মধ্যে মেয়ে আরিফা (১৩) ৭ম শ্রেণীতে পড়ে। বড় ছেলে ঈসরাফিল (১০) হাফিজিয়া মাদ্রাসায় পড়ে, ছোট ছেলে ঈসমাইল (৬)শিশু শ্রেণীতে পড়ে। স্বামী জঙ্গলে মাছ কাঁকড়া ধরে ও দিন মজুরি দিয়ে ৫ জনের সংসার চালায়। অতি দরিদ্র বনজীবী সংসারে নুন আনতে পানতা ফুরায় বললেই চলে। রেবেকা খাতুনের মাত্র ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যখন এ সংসারে আসেন তখন ও সংসারের অবস্থা খুব ভালো ছিলো না। সংসারে এসে অনেক পরিশ্রম করতে হয় তাকে। ২০০৯ সালে যখন উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আইলা হয় তখন রেবেকা খাতুনের ঘর ভেঙে যায়। আয় করে খাওয়ার মতো কোন কাজই ছিলো না। তখন তারা পরিবারসহ রাঙামাটি পাড়ি জমায়। ভেবেছিলো রাঙামাটি এসে খেয়ে পরে ভালোভাবে বাঁচতে পারবে। কিন্তু আসলে সেটা সম্ভব হলো না। ৪ বছর পর আবারো এলাকায় ফিরে আসতে হয় তাদের। ফিরে এসে অনেক কষ্টে একটা ঘর তৈরি করে এখানে বসাবাস করতে লাগলো। সংসার ভালোভাবে তো চলতোই না এজন্য বেরেকা খাতুন চাইতো স্বামীর পাশাপাশি সংসারে কিছু করার। তিনি খুব উদ্যোমী একজন নারী। বাড়িতে থেকে তিনি ছাগল পালন এর পাশাপাশি হাঁস মুরগি পালন করতেন, সেখান থেকে কিছু টাকা জমিয়ে একটা সেলাই মেশিন ক্রয় করে অল্প অল্প কাজ শিখতে থাকেন। এভাবেই কোনরকমে চলতে থাকে তার পরিবার।

বিগত ২০২১ সালে অক্টোবর মাসে নেটজ পার্টনারশিপ ফর ডিভেলপমেন্ট জাস্টিস’র সহযোগিতায় বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প শুরু হলে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দাতিনাখালী গ্রামে পায়রা সিএসও দলে যুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক আলোচনায় সভা, প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য কার্যক্রমে ধারাবাহিক অংশগ্রহণ করে আসছেন। দলে যুক্ত হওয়ার কিছুদিন পরে বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে উৎপাদনশীল মূল সম্পদ হিসাবে তাকে একটি গরু সহযোগিতা করা হয়। এছাড়াও তাকে একটি কদবেল ও সবেদার চারা, কিছু বর্ষাকালীন বীজ ও একটি হাঁস সহযোগিতা দেওয়া হয়। সহযোগিতা পাওয়ার পর থেকে গরুটি তিনি পরম মমতায় আগলে রাখেন। গরুটি একটি বাচ্চা দিয়েছে, গরু দুইটির বর্তমান আনুমানিক মূল্য ৮০ হাজার টাকা। কিছুদিন পরে মা গরুটি আবারো বাচ্চা দিবে বলে মনে করেন রেবেকা খাতুন। তিনি বলেন, ‘গরু পালনের মাধ্যমে পরিবারের আর্থিক উন্নয়নের সাথে থাকতে চাই।’ তিনি গরু বিক্রির টাকায় নিজের ঘর মেরামত ও সন্তানদের লেখাপড়া কাজে ব্যয় করতে চান।

happy wheels 2

Comments