নগর দরিদ্র নারীদের স্বাবলম্বীকরণে বাটিক গহনা তৈরির কর্মশালা অনুষ্ঠিত
রাজশাহী থেকে অমিত সরকার
‘আমার স্বামী রিক্সা চালিয়ে যা আয় করেন তা দিয়ে আমাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। আবার এই নগরে মেয়েদের কাজের ক্ষেত্রেও নানা সমস্যা হয়। বারসিক’র মাধ্যেমে বাটিক গহনা তৈরি কাজের বিষয়ে জানার পরে আমি এই কাজ শিখার আগ্রহ জানাই। আমার মতন আরও ৫ জন আমাদের বস্তির এই কাজ শেখার আগ্রহ জানায়। আমরা এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন ডিজাইনের বাটিক গহনা বানানো শিখেছি। বিভিন্ন কালারের কাপড়, চুমকি, কড়ি, কাঁচ দিয়ে বিভিন্ন ডিজাইনের হাতের চুড়ি তৈরি করতে পারি। আমরা এখন বাড়িতে বসে অবসর সময়ে এই গহনা তৈরি করে রাজশাহী ইউনিভারসিটি, মহিলা কলেজ রাজশাহী কলেজ পদ্মার পাড়ে বসে বিক্রি করতে পারবো। এতে করে আমাদের আয় বাড়বে আবার আমাদেরও একটা কর্মসংস্থান হলো।’
উপরোক্ত কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহী নগরীর জামালপুর বস্তিতে বসবাসকারী আফরোজা খাতুন।
রাজশাহী শহরাঅঞ্চলে বসবাসকারী বিপুল সংক্ষক দরিদ্র মানুষের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নগরের বস্তিগুলোতে বসবাস করে। যারা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দূর্যোগ, কর্মহীনতা, অর্থনৈতিক কারণে এবং জীবিকার নির্বাহের জন্য বাধ্য হয়ে শহরে চলে আসে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০% নগর বা শহরাঅঞ্চলের বস্তিতে বসবাস করে। বস্তি হলো একটি শহরের সেই অংশ যেখানে অধিকাংশ মানুষই দরিদ্রের মধ্যে বা দারিদ্রের কাছাকাছি বসবাস করে। মূলত বস্তি এলাকাগুলো নি¤œ আয়ের সাথে দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা এবং দুর্বল স্বাস্থ্যর উচ্চ হারকে চিহ্নিত করে।
নগর দরিদ্র বস্তিবাসীরা নগরের অনানুষ্ঠানিক শ্রমে নিযুক্ত যেখানে পরিবারের সকল সদস্যকেই আয়বর্ধনমূলক কাজের সাথে যুক্ত থাকতে হয়। বারসিক রাজশাহী সিটির বস্তিতে বসবাসকারী নগর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর টিকে থাকার লড়াইয়ে সহযোগী হওয়ার পাশাপাশি নগরের নি¤œ আয়ের যুবদের (নারীরা অগ্রগণ্য) কর্মমূখী প্রশিক্ষণ,ও আয়বর্ধনমূলক কাজের সাথে যুক্ত হতে সহায়তা করে আসছে। সেই লক্ষেই রাজশাহী নগরীর ছোটবন গ্রাম এলাকার হাতে তৈরি বিভিন্ন ধরনের কাপড়, পাট, পুতি দিয়ে তৈরি গহনার কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নগর দরিদ্র পরিবারের জান্নাতুল ফারহানার কাজ ও বাজারের তার তৈরি গহনার চাহিদা এবং মাসিক আয়ের বিষয়ে রাজশাহী নগরীর জামালপুর বস্তিতে বসবাসকারী মানুষের সাথে আলোচনা করা হলে সেই বস্তির ৬ জন দরিদ্র নারী এই কাজ শিখে নিজেদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে অর্থনৈতিক আয় বৃদ্ধির জন্য বারসিক’র কাছে আবেদন জানান।
এর ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ৫দিন ব্যাপি নগরীর ছোট বোনগ্রাম এলাকায় জান্নাতুল ফারহানার বাড়িতে তার সহযোগিতায় জামালপুর বস্তির ৬ জন নারীকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণের মাধ্যেমে উক্ত কাজ শিখিয়ে ছয়জন নগরদরিদ্র নারীর দারিদ্রতা বিমোচনে সহায়ক হওয়ার জন্য এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। উক্ত প্রশিক্ষন কর্মশালায় বারসিক কিছু উপকরণ সহায়তা করে। সেই উপকরণ দিয়ে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীরা ৩৮ সেট বিভিন্ন ডিজাইনের চুরি সেট তৈরি করেন। প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণকারী এক সেট করে চুরি উপহার পেয়েছেন।
জান্নাতুল ফারহানা প্রশিক্ষক বলেন, ‘আমি একজনের থেকে এই কাজটি শিখে এই কাজটি শুরু করেছিলাম। আমার পরিবারের পক্ষে এই কাজের জন্য টাকা দিয়ে সহায়তা করার মতন পরিস্থিতি ছিলনা। অল্প পুঁজি নিয়ে আমি শুরু করি। এখন আস্তে আস্তে মোটামুটি ভালো বাজার তৈরি হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি এখন এই কাজ করে আয় করে নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেই বহন করি। আমি এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তৈরি চুরি সেটগুলো রাজশাহী শহরে বিভিন্ন মেলায় স্টল নিয়ে ও বাজারের এই ধরনের দোকানগুলোতে স্যাম্পল হিসেবে প্রদর্শন করে অর্ডার অনুযায়ী এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীদের সহযোগিতায় তৈরি করে বাজারজাত করবো। এতে করে আমারও আয় বাড়বে পাশাপাশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীরাও আয় করতে পারবেন।