বনসাই প্রেমী উৎপলের গল্প
আসাদুল ইসলাম, সাতক্ষীরা থেকে
কেউ বলে বট পাগল, কেউ বলে গাছ পাগল। আবার কেউবা তাঁকে শুধু বট গাছ বলেও মজা করতো। কিন্তু তাতে নিজের বনসাই করার বাসনা থেকে একটুও পিছপা হননি তিনি। সখ্যতা গড়ে তুলেছেন গাছের সাথে। আর নিজ স্বপ্নের বাস্তব রূপ দিতে বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন ৪১ প্রজাতির বৃক্ষের বনসাই নার্সারি। তার নার্সারিতে রয়েছে আড়াই শতাধিক বনসাই বৃক্ষ।
সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল চৌরঙ্গী মোড়ের আলাউদ্দিন খান ও নাজমুন নাহার খানের ছোট ছেলে বোরহানউদ্দিন খান উৎপল। ২৫ বছর বয়সী এই তরুণ নিজেদের বাড়ির ছাদেই গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন প্রজাতি বনসাই বৃক্ষের নার্সারি। স্কুলের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে ছোট বেলা থেকেই বাড়িতে গাছ লাগানোর অভ্যাস রয়েছে তার। যা পরবর্তীতে বনসাই করার ইচ্ছেতে রূপান্তর হয়।
সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামের পুরাতন ভবনের গায়ে জন্ম নেওয়া একটি বট গাছ দেখে বনসাই করার ইচ্ছে জাগে তার মনে। শুরু হয় বনসাই প্রেম। বাড়ির বাইরে ঘুরতে গিয়ে সংগ্রহ করে আনেন বিভিন্ন পরগাছা।
আর এভাবেই নিজের বাড়ির ছাদে ৪১ প্রজাতির আড়াই শতাধিক বনসাই বৃক্ষের সমাবেশ ঘটান তিনি।
তবে, সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয় হলো, সুন্দরবনের লোনা জলের গেওয়া গাছের বনসাই তৈরিতে সফল হয়েছেন উৎপল। তার বাড়ি মিষ্টি পানিতেই বেড়ে উঠছে গেওয়ার বনসাই।
শুধু সুন্দরবনের গেওয়া নয়, সুদূর সৌদি আরব থেকে খেঁজুর গাছ এনে তাও বনসাই করেছেন তিনি।
উৎপল জানান, তার নার্সারিতে দেশি-বিদেশি ১৫ জাতের বট বৃক্ষের বনসাই রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, দেশি বট, পাকড় বট, ঔষধি বট, লোটা বট, ক্ষুদে বট, চায়না বট, থাই বট, ভ্যায়াকাটা বট, সাইকাস বট ও বাটারফ্লাই বট।
এছাড়া তার বনসাই নার্সারিতে রয়েছে দু’জাতের কামিনী, বকুল ফুল, বুজগাছ, চেরী, জেদী, ছেতিন, সেড়া, পাইন, ছাপোলা, সিলবারডাস্ট, শ্বেত চন্দন, জুই, শিমুল, ঝাউ, টগর, জ্যাকেট ও রাবার বৃক্ষের বনসাই। ফলজ বৃক্ষের মধ্যে তেতুল, ছফেদা, দু’জাতের পেয়ারা, খেজুর, চায়না কমলা, অস্টেলিয়ান কমলাসহ বেশ কয়েক প্রজাতির ফল বনসাইও রয়েছে। যার অধিকাংশেই ধরেছে ফল।
বারসিক নিউজকে উৎপল জানান, বনসাই ভালো হয় পরগাছাতে। পড়াশুনার ফাকে ফাকে বনসাইয়ের পরিচর্যা করেন তিনি। প্রথম দিকে অনেকে উপহাস করলেও এখন সবাই তার সাফল্যের গুণগান করে। শখের বশে বনসাই করতে শুরু করলেও আস্তে আস্তে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে করার ইচ্ছা রয়েছে তার।
উৎপল বলেন, “মানুষ বাড়িতে বনসাই রাখতে পছন্দ করেন। আমিও তেমন একজন। বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘুটে বনসাই করা শিখেছি। এখন অনেকেই শিখতে আসে আমার কাছে।”