গ্রামীণ ঐতিহ্য জাতা প্রায় বিলুপ্তির পথে
নাচোল, চাপাঁইনবাবগঞ্জ থেকে অনিতা বর্মণ
আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের কারণে মানুষের জীবন যাত্রা দিন দিন বদলে যাচ্ছে। সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। এই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের একটি হচ্ছে ‘জাতা’। আগে গ্রাম বাংলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে দেখা যেত এই জাতা। এক সময় জাতা নারীদের কাছে খুব প্রয়োজনীয় একটি গৃহস্থালি উপকরণ ছিলো। কিন্তু সময়ের কাছে এবং আধুনিক যন্ত্রের কাছে মার খেয়ে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে জাতা।
চাপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের খড়িবোনা গ্রামের মোসা: মাতুয়ারা বেগম (৩৮) বলেন, “আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ২৮/২৯ বছর। সেই থেকে জাতার ব্যবহার শুরু করেছি। তার আগে আমার শাশুড়ি ব্যবহার করতেন। জাতাতে চালের আটা, ছাতু তৈরি করে কৃষাণদের লাহারি (সকালের নাস্তা) বানিয়ে খাইয়েছি। এই জাতা দিয়ে আমাদের গ্রামের হিন্দু ও মুসলিম পরিবারের নারীরা চাল, গম, আটা-ময়দা তৈরি করে ব্যবহার করত। এছাড়া জাতা দিয়ে ভাঙানো হতো খেসারি, মটর, মসুর, মাস কালাই,প্রভুতি রকমের ডাল”। তিনি আরো বলেন, “আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ১৪ জন, আমাদের পরিবারের সকলে এই জাতায় পিসা আটা, ছাতু খেয়ে থাকি। তাছাড়া অসময়ে এই জাতা বন্ধু হয়ে পাশে দাঁড়ায়। বাড়িতে যদি আটা বা ছাতু না থাকে তাহলে খুব সহজে জাতা থেকে আটা তৈরি করে খাবার তৈরি করা যায়। এক কেজি চালের আটা তৈরি করতে প্রায় ১৫/২০ মিনিট সময় লাগে। শুধু আটা, ছাতু, ডাল নয় মরিচ, ধনিয়া, গোলমরিচ, গরমসলা ও পিসে খাওয়া হয়।”
জাতা তৈরির মূল উপাদান চিকটা মাটি, অইলোন, ধানের গুড়া, পাথর মসৃণ দুই খন্ড, পাথর কেটে গোল করে জাতা তৈরি করা হতো। একটি জাতা প্রায় ১৪/১৫ বছর ব্যবহার করা যায়। মাতুয়ারা বেগম জানান, পাথরের তৈরি জাতা দিয়ে যখন কাজ হয় তখন মিষ্টি এক ধরনের শব্দ হয়। এখন আর তা চোখে পড়ে না, সচরাচর জাতার ব্যবহার উন্নত ধরনের মেসিন তৈরি হওয়ার কারণে সুখ প্রিয় বাঙালি আর কষ্ট করে জাতা চালাতে চায় না। তারপর গ্রামঞ্চলের অনেক পরিবার জাতাকে ঐতিহ্য হিসেবে ধরে রেখেছে। পরিবেশবান্ধব এই গৃহস্থ উপকরণ কেবল আমাদের ঐতিহ্য নয়-এটির ব্যবহার বৃদ্ধি হওয়া দরকার আমাদের প্রয়োজনেই।