ইউনিয়ন পরিষদের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ
শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে বাবলু জোয়ারদার
উপকূলীয় সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবনের কোলঘেঁষা ইউনিয়ন বুড়িগোয়ালিনী। বারোটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত শ্যামনগর উপজেলা। বারোটি ইউনিয়নের মধ্যে ৯নং বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দুই বিঘা জমির উপর নির্মিত ইউনিয়ন পরিষদ ভবন। মাত্র কয়েক বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটি ছিল শুধুমাত্র একটি ভবন। তবে কিছু দিনের ব্যবধানে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। ভবনটির উপরে ছাদ বাগান আর ভবনের নিচে চারপাশে উৎপাদিত হচ্ছে পরিকল্পিত কৃষি ফসল। সাথে পুকুরে রয়েছে স্থানীয় শোল, কৈ, শিং, মাগুর, মৈরল্যা, পুটি,রুই, কাতলাসহ প্রজাতির বিভিন্ন রকমের মাছ।
ইউনিয়নের ভবনটিতে রাসায়নিক ও কীটনাশকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য উৎপাদন করা হচ্ছে জৈব কম্পোস্ট। ইউনিয়ন পরিষদের সবজি বাগানে, ফল, ফুলের গাছে ব্যবহার করা হচ্ছে এই জৈব কম্পোস্ট। ভবনটির ছাদে রয়েছে আমলকি, আপেল, জামরুল, পেঁয়ারা, করমচা, বেদানা, চালতা, কাঁঠাল, কুল, গাব, কদবেল, কলা, আঙ্গুরসহ প্রায় ৬১ প্রকারের ফল গাছ। এসব গাছে ব্যবহার করা হচ্ছে জৈব কম্পোস্ট।
ফল গাছের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফুল, অচাষকৃত উদ্ভিদ ও ঔষধি গাছসহ প্রায় ১৪৩ প্রকারের গাছ। এ প্রসঙ্গে বর্তমান চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল বলেন, “চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনকে সাজানোর চেষ্টা করি। শ্যামনগর এগ্রোটেকনোলজি পার্ক দেখে উদ্বুদ্ধ হই এবং এতে উপজেলা কৃষি অফিস বিভিন্ন এনজিওসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা নিয়ে তিনি প্রথমে ছাদ বাগান করার পরিকল্পনা করি।” তিনি আরও বলেন, “লবণাক্ত এলাকায় যেখানে সবজি চাষ করা অনেক কষ্টসাধ্য ছিল, সেখানে বৃষ্টির পানি পুকুরে সংরক্ষন করে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে গেলে এই লবণাক্ত এলাকায় কৃষি বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।”
এমন ধরনের উদ্যোগকে এলাকার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সকলেই স্বাগত জানান। কারণ একজন তরুণ, চিন্তাশীল ও সৃষ্টিশীল ব্যক্তির দ্বারা এ ধরনের উদ্ভাবনী কার্যক্রম সম্ভব। এখন এলাকায় অনেক বাড়িতে ও ছাদ বাগান তৈরি করার চেষ্টা করছেন। এমন অভাবনীয় উদ্যোগ গ্রহণের ফলে পরিবর্তন দেখে এলাকায় অনেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে পরিকল্পিতভাবে সবজি চাষ করার চেষ্টা করছেন। উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তন ও আবহাওয়ার সাথে নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে কৃষি ও সবজি উৎপাদন করা যায় সে রকম প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেই উক্ত ইউপি ভবনকে সকল প্রকার রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মুক্ত উৎপাদন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। জৈব বালাইনাশক ও জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমেই সেখানে সকল প্রকার উৎপাদন করা হচ্ছে। প্রতিদিন সেখানে এলাকার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক, ছাত্র/ছাত্রী আসেন দেখার জন্য এবং এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে বাড়িতে গিয়ে এমনভাবে লাগানোর চেষ্টা করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের ফলে জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। জনগণ ইউনিয়ন পরিষদে কাজের জন্য এলে আগে চুপ করে বসে থাকতে হত। আবার অনেক সময় চেয়ারম্যানের ব্যস্ততার কারণে বিরক্ত হয়ে চলে যেতেন কিন্তু এখন পরিষদে এসে কাজ করতে দেরি হলেও কিছুটা সময় ছাদ বাগান ও সবজি বাগানে সময় কাটান। এখান থেকে অনেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের বাড়িটিকে পরিকল্পিতভাবে সাজানোর চেষ্টা করছেন। মোটামুটি বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ বিনোদন কেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থানে পরিণত হচ্ছে।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পাশাপাশি উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদে এমন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করলে এই উপজেলায় কৃষি বিপ্লব ঘটবে বলে আশা করা যায়। পরিকল্পিতভাবে মাছ, কৃষি, ফলজ ও বনজ গাছের সমন্বয়ে গড়ে তুললে এলাকায় তথা বাংলাদেশের মধ্যে মডেল ইউনিয়ন পরিষদ হিসেবে পরিচিতি পাবে। যার মাধ্যমে উপকূলীয় প্রাণ, প্রকৃতি ও বৈচিত্র্য সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে।