‘দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক

[su_slider source=”media: 16,17″]

উন্নয়ন সহযোগী ডিয়াকোনিয়ার সহযোগীতায় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা বারসিক ও স্থানীয় দৈনিক পত্রদূত এর আয়োজনে অফিসার্স ক্লাব, সাতক্ষীরায় দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের বৈচিত্র্যময় সংষ্কৃতি বিষয়ে আমাদের করণীয় শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়। গোলটেবিল বৈঠকে  আলোচকরা এই অঞ্চলের মানুষের নদী, বনকেন্দ্রিক সংগ্রামী জীবনচর্চা এই অঞ্চলের মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধ, বিশ্বাস ও সংস্কৃতি, তাদের নিজস্ব অধিকার, নিজস্ব চিন্তা চেতনা ও ভাবনা  এবং  সম্মান ও মর্যাদা বিষয়গুলো তুলে ধরেন। তারা বলেন,  উপকূলীয় মানুষের নিজস্ব চর্চার ভেতর দিয়ে গড়ে ওঠে তাদের আপন সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতিতেই রয়েছে মা বনবিবির পুজা- যাকে কেন্দ্র করে এখনো সকল ধর্মের মানুষেরা বনের মধ্যে যায় জীবন জীবিকার টানে। এই সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে সে কারণেই এই অঞ্চলের সকল মানুষের কর্তব্য ধরে রাখবার, টিকিয়ে রাখবার। সার্বিকভাবে আলোচকরা আরও বলেন, আমরা আজকের গোলটেবিলের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতির আধার ছড়িয়ে দিতে চাই। ছড়িয়ে দিতে চাই স্থানীয় সচেতন সাংস্কৃতিক কর্মী, রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, লেখক, কবি, সাহিত্যিক এবং যুব সমাজের মধ্যে। আজকের আয়োজনের মধ্য দিয়ে একটি মানবতাবাদী সংস্কৃতির কথাই বলবো যা আমাদের নিজস্ব আচরণের গতিকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আর সেই এগিয়ে নেবার সংগ্রামে সকলকে সাথী হবার আহবান  জানান সকলেই।  

 

দৈনিক পত্রদূত এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ এর সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নজরুল ইসলাম, রাজনীতিক, সৈয়দ ইফতেখার আলী, রাজনীতিক, প্রফেসর সুুকুমার দাশ, প্রফেসর আব্দুল হামিদ, প্রফেসর নিমাই মন্ডল, অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, পল্টু বাশার, শিক্ষক ও সাহিত্যিক, কল্যাণ ব্যানার্জি, সাংবাদিক, কবি শুভ্র আহমেদ, হাফিজুর রহমান মাসুম, শিক্ষক ও সংগঠক, ইদ্রিস আলী, রাজনীতিক, এম. কামরুজ্জামান, সাংবাদিক, কবি গাজী শাহাজান সিরাজ, হেনরী সরদার, সাংস্কৃতিক কর্মী, মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল, সাংবাদিক, মোহাম্মাদ সানোয়ার, কর্মকর্তা, বারসিক, মনিরুজ্জামান ছট্টু, আবৃত্তিকার
কবি সালেহা আক্তার, শহীদুল ইসলাম, সাংবাদিক, সাঈদুর রহমান, শিক্ষার্থী । বৈঠকের স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ফেরদৌসি আকতার রিতা, সমন্বয়ক, জেন্ডার ও উন্নয়ন সেল, বারসিক। গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্যের সারসংক্ষেপ নিন্মে তুলে ধরা হলো-

অধিকার ও সম্মান রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে
ফেরদৌসি আকতার রিতা, সমন্বয়ক, জেন্ডার ও উন্নয়ন সেল, বারসিক

বারসিক শুরু থেকেই বাংলাদেশের বৈচিত্র্যের ভিন্নতা নিয়ে কাজ করে আসছে। বৈচিত্র্য ভিন্নতায় রয়েছে এদেশের মানুষের সৃষ্টির উৎস, গঠনের প্রক্রিয়া, তার সংস্কৃতি তার আচার-আচরণ প্রভৃতি। বাংলাদেশ ভৌগলিক দিক থেকে ৩০টি ইকোলোজিক্যাল অর্থাৎ কৃষি প্রতিবেশ অঞ্চলে বিভক্ত। এই বিভক্ত অঞ্চলের মধ্যে সাতক্ষীরা লবণাক্ত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত যা অন্যান্য অঞ্চল থেকে ভিন্ন। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের এ জনপদকে বাসযোগ্য করেছিলেন রাজা প্রতাপাদিত্য। এ অঞ্চলে যারা বসতি গড়ে তুলেছিলেন তাদের ছিলো আলাদা কৃষ্টি, আলাদা কালচার। সে সংস্কৃতি হাজার বছর ধরে গর্বের সাথে লালন করে আসছেন। আমাদের সংস্কৃতি বিকাশের সাথে নারীর জ্ঞান, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। নারী তার মেধা ও মনন দিয়ে গড়ে তুলেছেন এই আপন ভূ-খ-। এই অঞ্চলের মানুষের নদী, বনকেন্দ্রিক সংগ্রামী জীবনচর্চাই এই অঞ্চলের মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধ, বিশ্বাস ও সংস্কৃতিকে অসাম্প্রদায়িক করে গড়ে তুলেছে। তাদের নিজস্ব অধিকার আছে। তাদের নিজস্ব চিন্তা চেতনা ও ভাবনা আছে। আছে সম্মান ও মর্যাদা। উপকূলীয় মানুষের নিজস্ব চর্চার ভেতর দিয়ে গড়ে ওঠে তাদের আপন সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতিতেই রয়েছে মা বনবিবির পূজা- যাকে কেন্দ্র করে এখনো সকল ধর্মের মানুষেরা বনের মধ্যে যায় জীবন জীবিকার টানে। এই সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে সে কারণেই এই অঞ্চলের সকল মানুষের কর্তব্য ধরে রাখবার, টিকিয়ে রাখবার। যেখানে এই সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখার কথা বলা হচ্ছে সেখানে নারীকে আরো প্রান্তিক করে রাখার পরিকল্পনা হচ্ছে যার ফলে এই সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতির উপর একটি বড় ধরণের আঘাত আসার সম্ভাবনা রয়েছে যা এড়িয়ে যাবার উপায় নেই। আমরা আজকের গোলটেবিলের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতির আধার ছড়িয়ে দিতে চাই। ছড়িয়ে দিতে চাই স্থানীয় সচেতন সাংস্কৃতিক কর্মী, রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, লেখক, কবি, সাহিত্যিক এবং যুব সমাজের মধ্যে। আজকের আয়োজনের মধ্য দিয়ে একটি মানবতাবাদী সংস্কৃতির কথাই বলবো যা আমাদের নিজস্ব আচরণের গতিকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আর সেই এগিয়ে নেবার সংগ্রামে সকলকে সাথী হবার আহবান জানাই।

সংস্কৃতি একটি জাতির লালিত ঐতিহ্য
নজরুল ইসলাম, রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব

ভূমি, ভূমির গঠন, জীব বৈচিত্র্য, নারী নেতৃত্ব, সাংস্কৃতিক কর্মকা-সহ বিষয় নিয়ে আমাদের গৌরবময় ইতিহাস। আমরা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। সংস্কৃতি একটি জাতির লালিত ঐতিহ্য। সংস্কৃতির বিকাশ ছাড়া সভ্যতার বিকাশ কল্পনা করা যায় না। মানুষের আচার-আচরণ, বিশ্বাস-মূল্যবোধ, ধর্মীয় চেতনা, সামাজিক রীতিনীতি ইত্যাদি বিষয়কে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয় সংস্কৃতির। যে জাতি যত বেশি অহিংস এবং অসাম্প্রদায়িক সে জাতি ততবেশি তাদের সংস্কৃতিকে চর্চা করে। সংস্কৃতি রক্ষায় পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট অত্যন্ত জরুরী। সংস্কৃতির সাথে অপসংস্কৃতি জড়িয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে আমাদের পরিত্রাণ পেতে হবে। আগের মতো সেই প্রবাহমান নদী আর আমরা ফিরে পাবো না। গরুর গাড়ি-পালকি আর ফিরে আসবে না। গ্রামে টেলিভিশন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট মোবাইল ফোন তো আছেই। আগে গ্রাম্য মেলায় পুতুল নাচ হতো। এখন অপসংস্কৃতির কারণে আমাদের সংস্কৃতি ক্ষত বিক্ষত। আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। অপসংস্কৃতি, অপরাজনীতি, সন্ত্রাসবাদ মুক্ত সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চার সময় এসেছে। এজন্য দরকার আমাদের মানসিকতার ইতিবাচক পরিবর্তন। দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন। মানবতা বোধের উন্মেষ। তবেই আমাদের সংস্কৃতি পূর্ণতা পাবে। বিকশিত হয়ে সৌরভ ছড়াবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

আমাদের সংস্কৃতি আমাদেরই সংরক্ষণ করতে হবে
সৈয়দ ইফতেখার আলী, রাজনীতিক

আমাদের একটি সুস্থ সাংস্কৃতিক অবয়ব ছিলো। সংস্কৃতির বিমূখীয়তার কারণে আমরা বাঁচিয়ে রাখতে পারিনি। আমরা সবাই বলতে পারি নি, আমরা সবাই রাজা, আমাদের এই রাজার রাজত্বে। সংস্কৃতিতে আগ্রাসী চলছে। দৃঢ়তার সাথে আগ্রাসনের ক্ষেত্রগুলো শনাক্ত করতে হবে। আগ্রাসনের হুমকি স্পষ্ট করতে হবে। আমাদের সংস্কৃতি আমাদেরই সংরক্ষণ করতে হবে। শুধু সংরক্ষণ নয়, এটাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এ জনপদের সংস্কৃতি নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করছে তাদের বিরুদ্ধে জেগে উঠতে হবে। একটা আগ্রাসন অসাম্প্রদায়িক এ দেশকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা রাজনৈতিক কর্মীরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছি। কারণ আমাদের নীতি-নৈতিকতা লোপ পেয়েছে। আমরা যা বলি তা করি না। আদিবাসী-ধর্মীয় সবাই একাকার হয়ে কাজ করতে হবে। সবাই এক ফুলের মালা হয়ে কাজ করতে হবে।

যে সংস্কৃতি মাটি, মানবতা, মানুষের কথা বলে সেই সংস্কৃতি চর্চা করতে হবে
প্রফেসর আব্দুল হামিদ, অধ্যক্ষ, সাতক্ষীরা কমার্স কলেজ

আমাদের আত্মপরিচয়ের অনুসন্ধানই আমাদের সংস্কৃতির পরিচয়। আমরা এখন বিশ্বায়নের যুগে বাস করছি। বিজ্ঞানের অগ্রগতির কল্যাণে প্রযুক্তির বিকাশ হচ্ছে। একারণে আমাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের ঢেউ  লেগেছে। গরুর গাড়ি, ঢেঁকি, পালকি আর ফিরে আসবে না জানি। কিন্তু যে সংস্কৃতি আমাদের মাটির কথা বলে, মানবতার কথা, মানুষের কথা বলে সেই সংস্কৃতি চর্চা করতে হবে।

লোকজ সংস্কৃতির কথা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে
প্রফেসর সুুকুমার দাশ, প্রাক্তন অধ্যক্ষ, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ

রয়েল বেঙ্গল টাইগার যদি না থাকতো তাহলে সুন্দরবনে একটা গাছও থাকতো না। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে গেছে যে, নির্বিচারে গাছ কেটে বন উজাড় করা হচ্ছে। যেমন আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মায়ের মতো আচলের তলে রক্ষা করে। পরিবেশের ভারসাম্য তো রক্ষা করছেই। সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্যকে ঘিরে আমাদের সংস্কৃতি। সুন্দরবন রক্ষা পেলে আমাদের সংস্কৃতি রক্ষা পাবে। সুন্দরবন রক্ষায় দরকার ‘স্পেশাল সুন্দরবন এ্যাক্ট’। তৃতীয় শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উপযুক্ত ভাষা ব্যবহার করে বনের উপকারিতা সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা থাকা দরকার। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে বিশদ আলোচনা পাঠ্যপুস্তকে থাকা দরকার। সুন্দরবনকে ঘিরে আমাদের লোকজ সংস্কৃতির কথা পাঠ্যপুস্তকে থাকলে তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে পড়বে। প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে। ভ্যানের সাথে এখন মানুষ ইঞ্জিন সেট করছে। আগে যে জমিতে ৪ বস্তা ধান হতো সে জমিতে ২৪ বস্তা ধান হয়। সুতরাং বিজ্ঞান কে অস্বীকার করার উপায় নেই। যদি কেউ সেটা করে তবে আমরা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবো না। গ্রাম্যমেলা, জারি, সারি, পালাগান, কীর্তন, যাত্রাপালা, হাডুডু, লাঠিখেলা, নৌকা বাইচ ইত্যাদি বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব বলে মনে করি।

মানবতাবাদী সংস্কৃতি সম্পর্কে ব্যাপকভাবে আলোচনা দরকার
নিমাই মন্ডল, ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ও কবি

সংস্কৃতি রক্ষায় বিষয়গুলো ভাগ করে বিভিন্ন লেখক, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে গ্রন্থ লেখা যেতে পারে। মানবতাবাদী সংস্কৃতি সম্পর্কে ব্যাপকভাবে আলোচনা দরকার। অসাম্প্রদায়িক, মানুষমুখী, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি আজ আক্রান্ত। বাগদীদের জীবন সম্পর্কে তাদের সমাজ, বিবাহ রীতি, শিক্ষা ধর্ম, বিশ্বাস ও মূলবোধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে। সম্মিলিত আলোচনার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। কথা ও কাজের মেলবন্ধন সৃষ্টি করা জরুরী। সারা বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়নে যে আওয়াজ উঠেছে তা অনুধাবন করতে হবে। মানবতাবোধ উন্নত করতে হবে। বর্তমান সমাজে যারা যতবেশি অসততা চর্চা করে তারা ততবেশি রেসপেক্টেড। আধুনিকতা আমাদের আধুনিক সংস্কৃতিকে জন্ম দিতে পারেনি। এজন্য মননশীলতার উন্নয়ন দরকার। দরকার পুনঃজাগরণ।

প্রকৃতি, পরিবেশ ও সংস্কৃতি একসূত্রে গাঁথা
আশেক-ই-এলাহী, অধ্যক্ষ, শ্যামনগর আতরজান মহিলা কলেজ

যে সংস্কৃতি মাটি ও মানুষের কথা বলে তা আমাদের রক্ষা করতে হবে। যে সংস্কৃতি নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর আর্থ সামাজিক নিরাপত্তার দাবি করে সে সংস্কৃতিকে আমাদের পূর্ণ সমর্থন দেয়া উচিত। যে সংস্কৃতি মানবতা বোধের বিকাশ ঘটায় সে সংস্কৃতির সৌরভ আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রকৃতি, পরিবেশ ও সংস্কৃতি একসূত্রে গাঁথা। তাই প্রকৃতি ও পরিবেশ থেকে উঠে আসা সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। তবেই হয়তো থাকবে আমাদের লালিত সংস্কৃতি।

আর্যদের সংস্কৃতি ও আরবদের সংস্কৃতির মিশ্রণে আমাদের সংস্কৃতি
শুভ্র আহমেদ, কবি ও শিক্ষক

সংস্কৃতির উপাদানগুলোর মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক ও প্রযুুক্তিগত উপাদান প্রধান। সংস্কৃতি কখনো স্থির থাকে না। নদীর স্রোতের মতো তা গতিশীল প্রাচীন আর্যদের থেকে হিন্দু এবং আরবদের থেকে ইসলাম ধর্ম এসেছে। আর্যদের সংস্কৃতি ও আরবদের সংস্কৃতির মিশ্রণে আমাদের সংস্কৃতি। সংস্কৃতির কোন কোন বিষয়গুলোকে আমরা সামাজিক স্বীকৃতি দিবো তা খুবই গুরুত্ব বহন করে। পরিবর্তন, বিবর্তনকে আমাদের মানতেই হবে। তবে অবশ্যই ইতিবাচক পরিবর্তনকে গ্রহণ করতে হবে। আমি আশাবাদী যে, অন্ধকার কখনো স্থায়ী হয় না। অন্ধকার কিছু কিছু ক্ষেত্রে আঁচড় কেটে যায়। রক্তাক্ত করে যায়। তবে এটা কেটে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

প্রকৃতি থেকে আমাদের সংস্কৃতি উঠে এসেছে
হাফিজুর রহমান মাসুম, অধ্যক্ষ, এলিক্সার ইন্টারন্যাশাল স্কুল

নারীদের সংগঠিত ও মর্যাদা না দিয়ে তাদেরকে প্রান্তিকের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। বনের গাছপালা, পশু পাখি ও নদ -নদীর মাছের আচরণ বা সংস্কৃতি থেকে আমাদের সংস্কৃতি উঠে এসেছে। ধর্ম দিয়ে মানুষের চরিত্র বিচার করা হচ্ছে। এতে একগোষ্ঠী আরেক গোষ্ঠীকে আক্রমণ করছে। বিভিন্ন স্থান ও স্থাপনার নাম পরিবর্তন করে আমাদের ঐতিহ্যকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। যারা আমাদের অধিকার রক্ষা করবে তারাই আমাদের অধিকার ক্ষুন্ন করছে।

উপকূলীয় অঞ্চলের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি হাজার বছরের ঐতিহ্য
মনিরুজ্জামান ছট্টু, আবৃত্তিকার

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য। বিশেষ করে এ জনপদের মানুষের আত্মার খোরাক এ সংস্কৃতি। সরস প্রাণের জীবন্ত উৎস তো বটে। এগুলো সংরক্ষণ করা অতীব জরুরী। কেননা এ সংস্কৃতির মধ্যে লুকিয়ে আছে আমাদের হাসি-কান্না, মান-অভিমান, আনন্দ-বেদনার প্রতিচ্ছবি। আমাদের সংস্কৃতি রক্ষায় ‘গ্রন্থরচনা; করা যেতে পারে।

সংস্কৃতির বিকাশে এ অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্য অত্যন্ত গর্বের
গাজী শাহাজান সিরাজ, কবি ও শিক্ষক

দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ঐতিহ্যময় সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে এ অঞ্চলের ভূমি, ভূমির গঠন, নদ-নদী ও সুন্দরবনকে ঘিরে। সংস্কৃতির বিকাশে এ অঞ্চলের ভূমি, ভূমির গঠন, নদ-নদী ও সুন্দরবনের ভূমিকাই বেশি। সংস্কৃতির বিকাশে এ অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্য অত্যন্ত গর্বের। সংস্কৃতি রক্ষা করতে হলে সবার আগে নদী রক্ষা করতে হবে। সুন্দরবন রক্ষায় গাছ চুরি ঠেকাতে হবে। পশু-পাখি রক্ষা করতে হবে। বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। দেশে একজন মানুষের বিপরীতে ১০টি গাছ থাকতে হবে। তবেই আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে। সাম্প্রদায়িক দানবের হিংস্রতায় আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্যময় সংস্কৃতি ধ্বংস হচ্ছে। তাই অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে যে বাজেট আসে সঠিকভাবে ব্যয় করতে হবে। তবেই আমাদের সংস্কৃতি সুরক্ষা হবে বলে মনে করি।

মা-মাটি মানুষের মনের ভাষা বুঝতে হবে
ইদ্রিস আলী, রাজনীতিক

সংস্কৃতির ক্ষেত্রে একাডেমিক ধারণা ও বাস্তব ধারণা ভিন্ন হলে সমস্যা প্রকট হয়। বাঙালি সংস্কৃতির ইতিহাস অনেক পুরনো। লালনের ভাবাদর্শ ছড়িয়ে দিতে হবে। সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলন, দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন দরকার। মাটির গভীর থেকে যে সংস্কৃতি উঠে এসেছে তা ছড়িয়ে দিতে হবে। মা-মাটি মানুষের মনের ভাষা বুঝতে হবে। তাদের আত্মার খোরাক আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে হবে।

ফিরিয়ে আনতে হবে গৌরবময় সংস্কৃতিকে
মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল, সাধারণ সম্পাদক, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের এ জনপদ একসময় পালা গান, যাত্রাগান, জারিগানে মুখরিত থাকতো। বিভিন্ন পার্বণকে উপলক্ষ করে বসতো গ্রাম্য মেলা। ঢেঁকিতে চাল বানাতো মা-বোনেরা। নদী পথে চলতো পালতোলা নৌকা। ডাঙ্গায় চলতো গরুর গাড়ি, পালকি। খাল-বিল ভরা থাকতো শোল-কৈ-চ্যাং-বেতলা মাছে। বড় সুখে ছিলো শান্তিতে ছিলো মানুষ। কিন্তু কোথায় যেনো হারিয়ে গেছে সে দিনের সেই ঐতিহ্য। কোন বিষের কারণে এসব হারিয়ে গেলো তা ভেবে দেখতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে গৌরবময় সংস্কৃতিকে। আমাদের নিজস্ব জীবনযাত্রায় যতখানি এই আধুনিকায়নের ছাপ পড়েছে সেটা অস্বীকার না করে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন আমাদের আপন ব্যবস্থা।

অসাম্প্রদায়িক চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে
ফাহিমুল হক কিসলু, রাজনীতিক

অসাম্প্রদায়িক চেতনার শক্তিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ধ্বংস করা হয়েছে আমাদের আপন সংস্কৃতি, অসাম্প্রদায়িক চেতনা। সংস্কৃতি রক্ষায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশ দরকার। নতুন প্রজন্মের মাঝে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে।

আদিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে
এম. কামরুজ্জামান, স্টাফ রিপোর্টার, এটিএন বাংলা

বনজীবী সম্প্রদায় যেমন বাগদী, মৌয়াল, মুন্ডারাই এ জনপদের আদিবাসী। তাদের হাত ধরেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশ। কিন্তু তাদের সেই হাজার বছরের লালিত সংস্কৃতিকে উচ্চ বিত্তের মানুষেরা ধ্বংস করছে। তাদেরকে পথে বসাচ্ছে। তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে ভিক্ষার ঝুলি। আদিবাসীদের রক্ষা করতে না পারলে আমাদের সংস্কৃতিকে রক্ষা করা যাবে না। আদিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। আদিবাসীরা যাতে স্থানান্তরিত না হয়ে সেদিকটি বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। তবেই হয়তো রক্ষা পাবে আমাদের সংস্কৃতি।

সুন্দরবন রক্ষা করতে না পারলে আমাদের সংস্কৃতি বাঁচবে না
কল্যাণ ব্যানার্জি, স্টার রিপোর্টার, প্রথম আলো

মডার্ন হতে হতে আমরা এমন জায়গায় পৌঁছে গেছি যে, আমাদের সংস্কৃতি কী তা বুঝি না। সুন্দরবন অঞ্চল থেকে মানুষ সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বিবর্তনের কারণে স্থানান্তরিত হবে। যশোরেশ্বরী কালি মন্দির ও শাহী মসজিদ আমাদের অতীত ঐতিহ্যের প্রতীক। শ্যামনগরকে ইসলামনগর, যতিন্দ্রনগরকে জহিরনগর করার চেষ্টা করা হয়েছে। সুন্দরবনে কোন গাছ কাটার অনুমতি নেই। কিন্তু অন্যান্য সম্পদ আহরণ করার অনুমতি ছিলো। সম্প্রতি সুন্দরবনে সব ধরনের সম্পদ আহরণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তাহলে মু-ারা এখন কোথায় যাবে? তাদের অর্থনৈতিক বিষয়টি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? পেশার উপর আঘাত করলে তাদের জীবন জীবিকায় আঘাত আসবে। সুন্দরবন রক্ষা করতে না পারলে আমাদের সংস্কৃতি বাঁচবে না। নদীর পাড়ের লোকেরা একটু সুর করে কথা বলেন। এটা আমাদের ঐতিহ্য।

অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে উঠা সংস্কৃতি রক্ষা করতে হবে
পল্টু বাশার, কবি ও শিক্ষক

পরিবর্তনকে অবশ্যই মেনে নিতে হবে। ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে পাল বংশ এ অঞ্চলের শাসনভার গ্রহণ করে। পাল বংশের লোকেরা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। বৌদ্ধরা ছিলেন অহিংস। পাল যুগের পর আসে সেনযুগ। সে যুগে এ অঞ্চলের সংস্কৃতি খ- খ- হয়ে যায়। পালযুগে মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি ছিলো। সেনযুগে সে সম্প্রীতি নষ্ট হয়। শ্যামনগরের বংশিপুরে মসজিদ-মন্দির ও গীর্জা পাশাপাশি অবস্থিত। অসাম্প্রদায়িক চেতনা থেকেই তিনটি পৃথক ধর্মের মানুষের উপাসনার জন্য এগুলো নির্মাণ করা হয়। রাজা প্রতাপাদিত্য ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। তার পদাতিক বাহিনীর প্রধান ছিলেন খাজা কামাল। সুতরাং যে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আমাদের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তা রক্ষা করতে হবে।

আদিবাসীদের হাত ধরেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশ
শহীদুল ইসলাম, শিক্ষক ও সাংবাদিক

আদিবাসীদের হাত ধরেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশ। আদিবাসীদের ভূমি বিক্রয়যোগ্য নয়। আদিবাসী মু-া সম্প্রদায়ের জমির উপর বিত্তশালীদের নজর পড়েছে। মুন্ডাদের পদবি পরিবর্তন করে অত্যন্ত সুকৌশলে সরদার বানিয়ে তাদের জমি রেজিস্ট্রি করে নেয়া হয়েছে। ফলে আদিবাসীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা স্তানান্তরিত হচ্ছে। এটা রোধ করতে হবে।

সংস্কৃতি আজ বিপদাপন্ন
সালেহা আক্তার, কবি ও শিক্ষক

সুন্দরবন আমাদের ঐতিহ্যের প্রতীক। সুন্দরবনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতি। সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল মানুষগুলোর সেই সংস্কৃতি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। লোনা পানির ঘের তাদের জীবন ও জীবিকায় আঘাত এনেছে। ফলে তাদের লালিত সংস্কৃতি আজ বিপদাপন্ন। সাধারণ মানুষের জীবন বৈচিত্র্য রক্ষায় সুন্দরবনের বৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে।

আদিবাসীদের সংস্কৃতি পালনেও উদ্যোগ নিতে হবে
স.ম তুহিন, ছড়াকার

আদিবাসীরাই সুন্দরবনের অতন্ত্র প্রহরী। সুন্দরবনের ঐতিহ্যের সাথে তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকা-কে সরকারি বেসরকারিভাবে পালনের উদ্যোগ নিতে হবে।

নবীনরা আলোর মশাল জ্বালবেই
সাঈদুর রহমান, শিক্ষার্থী, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ

আমরা গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক সুন্দর বাংলাদেশ দেখতে চাই। ধর্ম নিয়ে কোন্দাল দেখতে চাই না। আমরা জারি-সারি-যাত্রা পালা দেখতে চাই। আমরা কেন সেই আনন্দ থেকে বঞ্চিত? এজন্য প্রবীণদের এগিয়ে আসতে হবে। প্রবীণরা পথ দেখালে নবীনরা সেই পথে আলোর মশাল জ্বালবেই।

মাটির সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিতে হবে
হেনরী সরদার, সাধারণ সম্পাদক, জেলা সাংস্কৃতিক পরিষদ

দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি রক্ষায় সুন্দরবন রক্ষার তাগিদ অত্যন্ত জরুরী। পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টিও জরুরী। মাটির সংস্কৃতিকে আকাশ সংস্কৃতির মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে হবে। আকাশ সংস্কৃতিতে যেন বিদেশী সংস্কৃতির মিশ্রণ না ঘটে। সংস্কৃতি যেনো সাংঘর্ষিক না হয়। সে দিকটা বিবেচনা করতে হবে। আমাদের লোকজ সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে।

সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে দেশত্মবোধ জাগ্রত হয়
মোহাম্মাদ সানোয়ার, কর্মকর্তা, বারসিক

দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি আমাদের প্রাণের স্পন্দন। সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে মানবতা বোধ শানিত হয়। দেশত্মবোধ জাগ্রত হয়। আত্মার সাথে আত্মার, মানুষের সাথে মানুষের মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়। এ জনপদের গৌরবময় সংস্কৃতি সুরক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। নতুন বছরের শুরতেই গ্রাম গ্রামান্তর মুখরিত করে মাঠে নামার আহ্বান জানাই।

সাংস্কৃতিক চেতনা থেকে জন্ম নেয় মানুষের মুক্তির আকাংক্ষা
আবুল কালাম আজাদ, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক পত্রদূত

সাংস্কৃতিক চেতনা থেকে জন্ম নেয় মানুষের মুক্তির আকাক্সক্ষা। অন্যায়, অসত্য, কুসংস্কার, নির্যাতন, নিপীড়ন, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষকে জাগ্রত করতে দরকার সংস্কৃতির চর্চা। সংস্কৃতিকে যত বেশি চর্চা করা হবে এসব অপরাধমূলক কর্মকান্ড তত হ্রাস পাবে। মানুষে মানুষে সৌহার্দ-সম্প্রীতি গঠনে সংস্কৃতি চর্চার বিকল্প নেই। মননশীল ও সৃজনশীল জাতি গঠনে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা অপরিহার্য। শেকড় থেকে উঠে আসা সংস্কৃতিই আমাদের প্রেরণা। দুর্যোগে দুর্দিনের সাহস আসে সংস্কৃতি থেকে। যে চেতনা নিয়েই আমাদের অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে সে চেতনা কে ধরে রাখতে হবে। চেতনা যদি রক্ষা করা না যায় তাহলে সংস্কৃতি রক্ষা করা যাবে না।

happy wheels 2