সাম্প্রতিক পোস্ট

গিয়াস উদ্দিন গেন্দুর পারিবারিক খামার

হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে মুকতার হোসেন

“লেহাপড়া করি নাই। ছোটকাল থেকেই বাজানের সাথে চকে (ক্ষেতে) হাল বাইতাম। সহালে চকে গরু নিয়া যাইতাম সন্ধ্যায় আসতাম। আগে আমাদের ২০ পাহি (বিঘা) জমি ছিল, অনেক ধান পাইতাম কিন্তু পদ্মার ভাঙনে সব জমি চলে গেছে, তিনবার বাড়ি সরাইয়া এখন পাটগ্রামচরে বসবাস করি।” কথাগুলো বলছিলেন হরিরামপুর লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে পাটগ্রামচরে গিয়াস উদ্দিন গেন্দু (৫০)।Horiram
গ্রাম বাংলার চিরাচরিত নিয়মের মতই ছোটবেলা থেকেই গিয়াস উদ্দিন কৃষি কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। আর এজন্যই রয়েছে তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা। সে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই তিনি নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন পারিবারিক খামার। এই খামার তৈরির প্রক্রিয়াটি তার জন্য সহজসাধ্য ছিলো না। নানান চরাই-উতরাই পেরিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন তার পারিবারিক খামার বাড়ি।
তার এই পারিবারিক খামার বাড়িতে রয়েছে স্থানীয় জাতের ৫০০ হাঁস, ২৫টি কবুতর, ১৫টি মুরগি। ফলমূলের গাছের মধ্যে  রয়েছে সুপারি ৫০টি, নারকেল ৪৫টি রয়েছে ১১০টি পেপে গাছ। এছাড়া আমড়া, সফেদা, তেতুল, বড়ই, কামরাঙ্গা, আম, কাঁঠাল, জামরুল, প্যানাফলসহ  মিষ্টি কুমড়া, চালড়া, ধুন্দল শাক-সবজি। নিজ বাড়িতে এ সকল উৎপাদিত শাক-সবজি, ফলমূল পারিবারিক খাবারের চাহিদা পুরণ করেও বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

পারিবারিক খামারে প্রতিষ্ঠার বিষয়টি সম্পর্কে গিয়াস উদ্দিন বলেন, “আমি ২০১৪ সালে  নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগে থেকে  ঝিটকা বাজারের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১২৫ টি হাঁসের বাচ্চা কিনে পালন শুরু করি।  তার মধ্যে ২৫টি হাঁস রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ১০০টি হাঁস ডিম দেওয়া শুরু করে। এই হাঁস থেকে আমি মোট ৭০০০ টাকার ডিম বিক্রি করি এবং ডিম দেওয়া শেষে ১৫০০০/- হাঁস বিক্রি করি। সেই টাকা দিয়ে বাড়িতে একটি টিনের ঘর নির্মাণ করি।”
Horiram.jpg-1
হাঁস পালনের সম্পর্কে গিয়াস উদ্দিনের কোন প্রশিক্ষণ নেই তারপরও লোকায়ত জ্ঞান প্রয়োগ করে হাঁসসহ অন্যান্য পশু-পাখি পালণ করে সফলতা লাভ করেছেন। তবে চরাঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে চারদিকে পানিতে পরিপূর্ণ হওয়ায় অনেক সময় হাঁসসহ অন্যান্য পশু-পাখি হারিয়ে যায়। আবার এলাকায় শিয়াল, খাটাসের আক্রমণ থেকে সতর্ক থাকতে হয়। এসব সমস্যার পরও তিনি নিজের উদ্যোগেই এসব হাঁস বা মুরগিসহ অন্যান্য গবাদি পশু পালন করেছেন এবং অন্যকেও উৎসাহিত করছেন। তাঁর গড়ে তোলা পারিবারিক খামারটি দেখাশুনার দায়িত্ব পালন করেন স্বামী স্ত্রী দু’জনই।

গিয়াস উদ্দিনের উদ্যোগ এলাকায় ৫জন ব্যক্তি নিজ বাড়িকে বিভাবে একটি উৎপাদনমূখী বাড়ি হিসেবে তৈরি করা যায় সেই ভাবনা তাদের মধ্যে জাগ্রত হয়েছে। অনেক লোকজন তার বাড়িতে আসে শুধুু হাঁস মুরগি পালন, ফলের বাগান দেখতে এবং পরামর্শ নিতে।
গিয়াস উদ্দিন এখন একজন সফল মানুষ হিসেবে গ্রামের মানুষের কাছে দৃষ্টান্ত। তিনি চান আরো মানুষ তার এই উদ্যোগ থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাক। সমাজ থেকে অভাব-দারিদ্রতা দূর হোক।

happy wheels 2