দেশীয় জাতের প্রাণিম্পদ বিলুপ্তির মুখে: প্রাণিসম্পদ সমীক্ষা ফলাফল

ঢাকা থেকে এবিএম তৌহিদুল আলম

প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে প্রাণিসম্পদ পারিবারিকভাবেই লালন-পালন করা হয়। প্রাণিসম্পদ ভূমিহীন জনগোষ্ঠীর জীবিকার একটা বড অবলম্বন। পারিবারিক প্রয়োজন মেটানো ও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী গবাদি প্রাণিও হাঁস-মুরগি প্রতিপালন করেন। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পালিত প্রাণিসম্পদের ভূমিকা যথেষ্ট গুর”ত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ২০% সরাসরি ও ৫০% পরোক্ষভাবে গবাদিপ্রাণিও হাঁস-মুরগি পালন ও প্রজনন কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জিডিপিতে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ছিল ১.৮৭% এবং প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২.৮৩%। আর মোট কৃষিজ জিডিপিতে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান প্রায় ১৪.০৮%। (সূত্র: এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো, ২০১৩-১৪)। আমিষের চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে প্রাণিসম্পদ খাত অতি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে গবাদি প্রাণির মধ্যে উল্লেখযোগ্য গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, মহিষ ও ভেড়া। এসব প্রাণিসম্পদ কৃষি কার্যক্রমসহ বিভিন্ন কাজের চালিকা শক্তি, জমিচাষ, ভারবহন, গোবর সার ও জ্বালানি হিসাবে কাজে লাগে এবং জনসংখ্যার বৃহৎ অংশের মাংস ও দুধের প্রধান উৎস। তদুপরি, প্রাণির চামড়া, হাড়, নাড়িভুড়ি ও পালক বৈদেশিক মুদ্রা আয়েরও সহায়ক।

সমীক্ষা সময়কাল, এলাকা ও পদ্ধতি
বারসিক বিগত মার্চ-এপ্রিল, ২০১৭ সময়ে কর্মএলাকার নেত্রকোণা, সাতক্ষীরা, মানিকগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকায় দেশীয় জাতের প্রাণিসম্পদের বর্তমান অবস্থা জানার জন্য একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে। যেসব গ্রামে গবাদিপ্রাণি বেশি পরিমাণে প্রতিপালন করা হয় এই ধরনের গ্রামই সমীক্ষা কর্মের জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে নির্বাচিত করা হয়। সমীক্ষাকর্মটি পরিচালনার জন্য নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রাম, কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া ইউনিয়নের ভূগিয়া গ্রাম, আটপাড়া উপজেলার সরমুশিয়া ইউনয়নের দূর্গাশ্রম, রামজীবনপুর গ্রাম ও নেত্রকোনা সদর উপজেলার চল্লিশা ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুর গ্রাম নেওয়া হয়। রাজশাহী কর্মএলাকার তানোর উপজেলার তালন্দ ও তানোর পৌরসভাধীন আড়াদিঘী, গোকুল মথুরা গ্রাম, গোদাগাড়ি উপজেলার গ্রোগ্রাম, রিশিকুল ইউনিয়নের বরশীপাড়া, রিশিকুল গ্রাম ও পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রাম নেওয়া হয়। সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলাধীন গোপালপুর, চন্ডীপুর গ্রাম, ভুরুলিয়া ইউনিয়নের কাশিমপুর গ্রাম, কাশিমারী ইউনিয়নের খুটিকাটা গ্রাম ও ইশ্বরীপুর ইউনিয়নের ধুমঘাট গ্রাম সমীক্ষায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়। আর মানিকগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বেতিলা মিতরা ইউনিয়নের আউটপাড়া, হরিরামপুর উপজেলার ল্যাছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের পাটগ্রাম চর ও সিংগাইর উপজেলার বায়রা ইউনিয়নের চরতারা ভাংগা, নয়াবাড়ী আদর্শগ্রামও ব্রি কালিয়াকৈর উত্তর নওয়াপাড়া এই সমীক্ষায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

চারটি জেলার প্রতিটি থেকে পাঁচটি করে গ্রাম নিয়ে প্রতিটি গ্রাম থেকে ২৫টি করে মোট ১২৫টি পরিবার হিসাবে চারটি জেলার সর্বমোট ৫০০টি পরিবারের কাছ থেকে নির্ধারিত ফরমে তথ্য সংগ্রহ করে তা সন্নিবেশন ও বিশ্লেষণ করা হয়। সমীক্ষায় প্রাপ্ত দেশীয় জাতের প্রাণিসম্পদের পরিচিতির জন্য বৈশিষ্ট্য সম্বলিত সচিত্র তথ্য নির্ধারিত তথ্যশীটে সংরক্ষণ করে ডাটাবেজ তৈরি করা হয়।

সমীক্ষা ফলাফল
দেশীয় জাতের প্রাণিসম্পদের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বারসিক’র কর্মএলাকাধীন সমীক্ষাভূক্ত চারটি জেলার ২০টি গ্রামে শুধুমাত্র এক ধরনের দেশীয় জাতের গরু, দুই ধরনের ছাগল, ছয় ধরনের মুরগি আর দুই ধরনের হাঁস পাওয়া গেছে। পাশাপাশি সমীক্ষায় গ্রামগুলোতে পাঁচ ধরনের দেশীয় জাতের কবুতর থাকলেও শুকর, ভেড়া, মহিষ, ঘোড়া ও খরগোশ পাওয়া গেছে মাত্র এক ধরনের।

সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গবেষণাধীন এলাকার মধ্যে সাতক্ষীরায় সর্বোচ্চ ৮৩.২% গৃহস্থ বাড়িতে গরু পালন করা হয়। অন্যদিকে সর্বনিম্ন পাওয়া গেছে মানিকগঞ্জে ৭০.৪% পরিবার যারা গরু পালন করেন।1. Razia-W600 নেত্রকোণা ও রাজশাহীতে এই হার একই যা ৮১.৬%। মানিকগঞ্জের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৫০.৪% পরিবারে ১-৩টি করে গরু রয়েছে। আর ১৫.২% পরিবারে ৪-৮টি করে গরু প্রতিপালন করা হয়। মাত্র ৩.২% পরিবার ৯ টি থেকে ১১টি করে গরু প্রতিপালন করেন। অন্যদিকে নেত্রকোনার ৬৭.২% পরিবারে ১-৩টি করে গরু রয়েছে। আর ১৯.৪% পরিবার ৪-৮টি করে গরু প্রতিপালন করেন। তবে ১০টির বেশি গরু প্রতিপালন করেন এমন কোনো পরিবার নেত্রকোনা এলাকায় পাওয়া যায়নি। সাতক্ষীরার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৫২.৮% পরিবারে ১-৩টি করে গরু রয়েছে। আর ৪-৮টি করে গরু প্রতিপালন করা হয় ২৬.৪% পরিবারে। ৯-১৬টি করে পালন করে সাতক্ষীরার মাত্র ৪% পরিবার। অন্যদিকে রাজশাহীর ৬৪.৮% পরিবারে ১-৩টি 6. দেশী মুরগীকরে গরু রয়েছে। আর ৪-৮টি করে প্রতিপালন করে ১৬.২% পরিবার। রাজশাহীতে ৮টির বেশি করে গরু পালন করে এমন কোনো পরিবার সমীক্ষায় পাওয়া যায়নি।

ছাগল পালন করেন রাজশাহীর ৬৯.৬% পরিবার, সাতক্ষীরায় ৬৫.৬% পরিবার, মানিকগঞ্জের ৫২.০% পরিবার ও নেত্রকোনার ৩৮.৪% পরিবার।  রাজশাহীর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সর্বোচ্চ ১২.৮% পরিবার ৩টি করে ছাগল পালন করেন এবং ১০টির 11. পাঁতিহা সবেশি ছাগল পালন করে থাকেন মাত্র ০.৮% পরিবার। সাতক্ষীরার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৪.৪% পরিবারে ৩টি করে ছাগল পালন করা হয় এবং ২.৪% পরিবার ১০টির বেশি ছাগল পালন করে থাকেন। মানিকগঞ্জের সর্বোচ্চ ১৮.৪% পরিবারে ২টি করে ছাগল পালন করে থাকেন এবং মাত্র ০.৮ পরিবার ১০ টির বেশি করে ছাগল পালন করে। নেত্রকোণার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সেখানে সর্বোচ্চ ১৬.৮০% পরিবারে ১টি করে ছাগল পালন করেন এবং ৭ টির বেশি ছাগল পালন করে থাকেন মাত্র ০.৮% পরিবার ।

9. কাগজি কবুতরমুরগি পালন করেন নেত্রকোনার ৯৭.৬% পরিবার, মানিকগঞ্জের ৯০.৪% পরিবার, সাতক্ষীরার ৮৯.৬%ও রাজশাহীর ৭৮.৪% পরিবার। রাজশাহীতে ১০ টির বেশি করে মুরগি পালন করেন ১২.৮% পরিবার। ৫টি করে মুরগি পালন করেন মানিকগঞ্জের ১৫.২% পরিবার আর সাতক্ষীরায় ২টি করে মুরগি পালন করে ১২.৮% পরিবার।

হাঁস পালন করেন সাতক্ষীরার ৬৬.৪% পরিবার, রাজশাহীর ৬২% পরিবার, নেত্রকোনার ৩৮.৪% ও মানিকগঞ্জের ৩৬.৮% পরিবার। নেত্রকোনার ২০% পরিবার, সাতক্ষীরার ১৯.২% পরিবার, রাজশাহীর ১৩.৬% পরিবার ও মানিকগঞ্জের ১১.২ পরিবার কবুতর পালন করেন। মানিকগঞ্জের ১৮.৪% পরিবার, রাজশাহীর ১৪.৪% পরিবার, সাতক্ষীরার ৬.৪% ও নেত্রকোণার ২.৬% পরিবার ভেড়া প্রতিপালন করে। রাজশাহীর ৪.৮% পরিবার, সাতক্ষীরা ও মানিকগঞ্জের ০.৮% পরিবারে মহিষ পালন করা হয়। নেত্রকোণা এলাকায় কোনো মহিষ পালনকারী পরিবার খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঘোড়া সাতক্ষীরার ৬.৪% পরিবার ও মানিকগঞ্জের ৪% পরিবারে প্রতিপালন করা হয়। তবে রাজশাহীতে ও নেত্রকোণায় ঘোড়া প্রতিপালনকারী পরিবার খুঁজে পাওয়া যায়নি। খরগোশ রাজশাহী ও সাতক্ষীরার ০.৮% বাড়িতে প্রতিপালন করা হলেও আর নেত্রকোনা ও মানিকগঞ্জে খরগোশ প্রতিপালনকারী কোনো পরিবার পাওয়া যায়নি। তেমনিভাবে শুকর নেত্রকোনা ২.৪% পরিবারে পালন করা হলেও সমীক্ষার অন্তর্ভূক্ত মানিকগঞ্জ, রাজশাহী ও সাতক্ষীরার কোনো গ্রামে পাওয়া যায়নি।

দেশীয় জাতের পশুসম্পদ পালনের সমস্যা ও সম্ভাবনা

দেশীয় জাতের প্রাণিসম্পদের বর্তমান অবস্থা জানার জন্য পরিচালিত এই সমীক্ষায় প্রাণিসম্পদ পালনকারী পরিবারগুলো চারণভূমি কমে যাওয়া ও প্রাকৃতিক খাদ্য সংকটকে প্রাণিসম্পদ পালনের প্রধান অন্তরায় হিসাবে মতামত দিয়েছেন। তারা মৌসুমভিত্তিক বিভিন্ন রোগ যেমন গরুর ক্ষুরা, তড়কা, মুরগির রানীক্ষেতও ছাগলের পিপিআর রোগের প্রকোপকে প্রাণিসম্পদ প্রতিপালন না করার অন্যতম কারণ বলে জানান। মহিষ পালনের ক্ষেত্রে জলাশয় কমে যাওয়ায় মহিষকে গোসল করানোর সমস্যাটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে। এছাড়া নি¤œমানের ঔষধ, গ্রামে প্রাণিচিকিৎসক বা সেবা কেন্দ্র না থাকা, ভ্যাকসিনেশন সুবিধার অপর্যাপ্ততা ও দক্ষ এ আই কর্মীর অভাব রয়েছে বলে গ্রামবাসীরা মতামত দেন। প্রজননের জন্য উন্নত মানের পুরুষ ছাগল না থাকাকেও ছাগল পালনের অন্যতম সমস্যা হিসাবে উঠে এসেছে। বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে ছাগলের বাসস্থানের সমস্যা হয়। গ্রামাঞ্চলে মুরগি, হাঁস, কবুতর সাধারণত উন্মুক্ত অবস্থায় পালন করা হয় বলে শিয়াল, খাটাস, চিল, বিড়াল ও বনবিড়াল আক্রমণ করে। গৃহপালিত প্রাণি অনেক সময় শস্য-ফসলের ক্ষতি করে যা প্রতিবেশিদের সাথে ঝগড়া বিবাদ সামাজিক সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। উপকূলীয় এলাকার জনগোষ্ঠীরা জানান, এলাকায় লবণ পানির ঘের বেড়েছে যা প্রাণিসম্পদ পালনের অন্তরায়। দেশীয় জাতের প্রাণিসম্পদের দৈহিক বৃদ্ধি কম, উৎপাদনও তুলনামূলক কম বলেও সমীক্ষায় মন্তব্য পাওয়া গেছে।

সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীগণ মন্তব্য দিয়েছেন যে, দেশীয় জাতের প্রাণিসম্পদ কম পরিচর্যায়, কম পরিশ্রমে, উচ্ছিষ্ট খাবার খাইয়ে পালন করা যায় বলে পালন খরচ কম। বাজারে দেশীয় জাতের চাহিদা বেশি তাই মূল্যও বেশি পাওয়া যায়। স্থানীয় জাতের প্রাণিসম্পদ পালনের জন্য আলাদা কোন ঘরের প্রয়োজন হয় না। এদের রোগবালাই কম হয় ও পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে টিকে থাকতে পারে। সমীক্ষায় গ্রামীণ নারীদের মধ্যে গবাদিপ্রাণি বিশেষত গরু মোটাতাজা করণে আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়েছ্।ে নারীরা জানান, বিক্রি করলে এককালীন টাকা পাওয়া যায় বলে অনেকে গরু মোটাতাজা করছেন। পাশাপাশি গোবর থেকে কম্পোস্ট ও খামারজাত সার তৈরি করা যায় যা ব্যবহারে ফসল উৎপাদন ব্যয় কমানো সম্ভব। অংশগ্রহণকারীরা জানান, ব্লাক বেঙ্গল ছাগল একসংগে ৪টি পর্যন্ত বাচ্চা দেয়, ছাগলের মাংসের দাম অনেক বেশি ও যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। ছাগল গরুর সাথে উন্মুক্ত অবস্থায় পালন করা যায়, ছাগল সব ধরনের খাবার খায়, মানুষের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে। একইভাবে দেশী মুরগির ডিম ও মাংসের বাজার চাহিদা বেশি যা গ্রামীণ নারীদের আয়ের অন্যতম উৎস।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত। এই খাতটিকে আরো গতিশীল করতে কৃষির প্রধান উপখাত হিসেবে প্রাণি সম্পদ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বাংলাদেশের বিরাট এক জনগোষ্ঠী এখনও প্রাণিসম্পদের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে। আমিষের চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জাতীয় আয় বৃদ্ধির কথা বিবেচনা করে সরকারও প্রাণিসম্পদ খাতকে বেশ গুরুত্বের সাথে দেখছেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান যদি দেশীয় জাতের প্রাণিসম্পদের বাজার চাহিদা ও উপযোগিতা আমলে নিয়ে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করে তবে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যেমন উপকৃত হবে তেমনি দেশীয় এই জাতগুলো ভবিষ্যৎ বিলুপ্তির হাত থেকেও রক্ষা পাবে।

happy wheels 2