ভালো বীজ হলে ভালো ফলন পাবো

সাতক্ষীরা থেকে মনিকা পাইক
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের বুড়িগোয়ালিনী গ্রামে বাস করেন মাধবী রানীর বয়স (২৯)। স্বামী নিমাই গাইন (৩৬) পেশায় একজন দিনমজুর। এক ছেলে ও এক মেয়ে বয়স এবং বৃদ্ধ শাশুড়ি নিয়ে মোট ৫ জন সদস্য নিয়ে মাধবীর সংসার।
তাঁর স্বামীর ভিটা মাটি বলতে ৬ শতক জায়গা আছে। বাইরে কোন জায়গা জমি নেই। বসত ঘরটা খাস জায়গায়। বিয়ের পর তিনি স্বামীর সাথে সবজি চাষে সময় দিতেন। বিয়ের এক বছর পর থেকে সংসারে অবস্থা বুঝে স্বামীর হাত ধরেই তাঁর সবজি চাষের হাতেখড়ি। স্বামীর শারীরিক সমস্যা থাকায় সব ধরনের কাজ করতে পারতো না। তার স্বামী দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন তাতে সংসার খুব টেনেটুনে চলতো। মাধবী রানী ঠিক করলেন, এভাবে তো চলতে পারে না। একজনের আয়ে চলবে কিভাবে। পাশাপাশি তাঁরও কিছু করা প্রয়োজন।


মাধবী রানী বাড়ির সামনে কিছু জায়গায় বিভিন্ন ধরনের সবজি তৈরি করতেন। কিছু লতানো সবজি ঘরের চালে উঠালেন এবং জাল দিয়ে মাচান করে দিলেন। কিন্তু প্রথমদিকে তিনি ব্যবহার করতেন রাসায়নিক সার। পরে জৈব সার তৈরির প্রশিক্ষণ অংশ নিয়ে তিনি রাসায়নিক সার ব্যবহার বন্ধ করে জৈব সার ব্যবার করেন। পরিবারে খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিবেশী দের সহযোগিতা করার পরেও অবশিষ্ট সবজি বিক্রি করে তিনি বেশ টাকা উপার্জন করলেন। সাথে সাথে কিছু হাঁস মুরগি পালন করেন। স্বামীকে অর্থ দিয়ে সাহায্যে তার পাশাপাশি ছেলে মেয়ের পড়াশুনার খরচ চালাতে পেরে সবজি চাষে তার আরও মনোবল বেড়ে গেল। তিনি চিন্তা করলেন অন্যের বাড়িতে কাজ না করে আমি সবজি চাষ করে সংসার চালাবো ।এভাবে আস্তে আস্তে তিনি সবজির জায়গা বাড়াতে লাগলেন। তার স্বামীও খুব অনুপ্রাণিত হয়ে কাজে সাহায্য করতেন।


২০১৭ সাল থেকে তিনি বারসিক’র শতবাড়ির সদস্য হিসেবে কাজ শুরু করেন। বিভিন্ন প্রশিক্ষণে যোগদান করে তিনি জৈব সারের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন সম্পর্কে অবগত হন। তখন থেকে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে জোর দেন। তিনি বর্জন করেন রাসায়নিক সার। বারসিক’র পরামর্শ অনুযায়ী তিনি নিজেই জৈব সার তৈরি করেন। তিনি সবজিতে জৈব সার এর ব্যবহারের গুনাগুণ সম্পর্কে জানতে পারলেন। বারসিক থেকে প্রশিক্ষণ পেয়ে তিনি ২টি জৈব সারের গর্ত তৈরি করে বাড়ির ময়লা, আবর্জনা, বাগানের পরিস্কার করা ঘাস, তরকারির খোসা মুরগির বিষ্টা দিয়ে জৈব সার তৈরি করেন।


পাশাপাশি মাধবী রানী বিভিন্ন বীজ সংরক্ষণ করেন। তিনি যেখানে যান ভালো জাতের বীজ পেলে তা সংগ্রহ করেন। মাধবী রানী বলেন, ‘বীজ খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভালো বীজ হলে ভালো ফলন পাবো।’
মাধবী রানী বলেন, ‘আমার মত নারীরা কাজ করে সামনের দিকে আগাতে পারবেন। তারা যেন বিষমুক্ত বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করে রোগমুক্ত জীবনযাপন করতে পারে। বাজারের সার ব্যবহার করতে করতে মাটি একদিন পাথর হয়ে যাবে। তখন আর ভালো ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে না। তাই নিরাপদ খাদ্যেও জন্য কৃষকের ঘরে বীজ সংগ্রহ রাখা ্এবং জৈব সার দিয়ে সবজি উৎপাদন করা। গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে।’

happy wheels 2

Comments