PANAP প্রতিনিধির বারসিক মানিকগঞ্জ কর্মএলাকার পরিদর্শন
সিংগাইর, মানিকগঞ্জ থেকে অনন্যা আক্তার
সম্প্রতি বারসিক সিংগাইর রির্সোস সেন্টারে আওতাধীন চঅঘঅচ প্রকল্পের এর দাতা সংস্থার প্রতিনিধি ভারতের কেরালা থেকে আগত অনুপ কুমার সরজমিনে প্রকল্পের কার্যক্রম পরিদর্শন এবং প্রতিবেশীয় কৃষি বিষয়ক অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। বারসিক’র পরিচালক পাভেল পার্থ মাঠ পরিদর্শন কার্যক্রমটি সার্বিকভাবে সমন্বয় ও পরিচালনা করেন।
প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের আলোকে প্রকৃত ফলাফল অর্জনের জন্য চলমান কাজের পরিস্থিতি ও গুণগত মান যাচাই এবং কার্যক্রম বাস্তবায়নের কৌশলগত দিক উন্নয়নে পারস্পারিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করাই ছিলো সরেজমিনে মাঠ পরিদর্শনের মূল উদ্দেশ্য।
মাঠ পরিদর্শন কার্যক্রমের শুরুতে কর্মী সমন্বয় সভার মাধ্যমে বারসিক সিংগাইর রিসোর্স সেন্টারে কর্মরত সকল প্রকল্পের কর্মীদের পরিচয়সহ প্রকল্প ভিত্তিক চলমান কাজ বিষয়ে ধারনা নেওয়ার চেষ্টা করেন পরিদর্শক অনুপ কুমার। অতঃপর বারসিক’র পক্ষ থেকে বিগত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে কি ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা স্থির চিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়।
তাছাড়া দুইদিন ব্যাপী মাঠ পরিদর্শনের মাধ্যমে অনুপ কুমার সিংগাইর উপজেলার তালিবপুর ইউনিয়নের কাশিমপুর গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলামের চাষকৃত রবি-১ জাতের পাটের প্রর্দশনী প্ল্ট, মজলিশপুর গ্রামে নুরুল হকের বাড়ি কৃষি প্রতিবেশ বিজ্ঞান শিখন কেন্দ্র, বায়রা ইউনিয়নের সানাইল গ্রামের কৃষক নিরঞ্জন বিশ^াসের পুষ্টিবাড়ি, ফসলি জমি, স্বরুপপুর গ্রামে কৃষক তাপস অধিকারীর বাড়ি কৃষি প্রতিবেশ বিজ্ঞান শিখন কেন্দ্র ও কৃষক দশরথ সন্ন্যাসীর পুষ্টি বাড়ি পরিদর্শন করেন এবং কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং পারস্পাকি অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। অন্যদিকে তিনি বায়োডাইভারসিটি এ্যাসেসমেন্ট অনুশীলনের মাধ্যমে কিছু দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। পরিদর্শন কার্যক্রমে সহায়ক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বারসিক’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায়, বারসিক কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান, শিমুল কুমার বিশ্বাস, মাঠ সহায়ক সঞ্জিতা কিত্তুর্নীয়া ও অনন্যা আক্তার প্রমুখ।
প্রতিবেশীয় কৃষি চর্চা বিষয়ক পারস্পারিক আলোচনার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী কৃষকগণ তাদের বর্তমান চাষাবাদ পদ্ধতি, উৎপাদনের বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা এবং বিষমুক্ত কৃষি চর্চার সীমাদ্ধতার কথা তুলে ধরেন। তারা বলেন, ‘বর্তমান কৃষি ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা চলে এসেছে। পরিবেশ ও মাটির স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা না করে বেশি উৎপাদনের আশায় দিন দিন কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় বৃদ্ধি পাচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত রাসয়নিকের ব্যবহার। এতে করে শুধু মাটিই নয় উপকারী পোকামাকড়সহ ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। দিন দিন সংকট বাড়ছে নিরাপদ খাদ্যের। ঝুঁকি বাড়ছে মানুষসহ সকল ধরনের প্রাণি স্বাস্থ্যের।
এমতাবস্থায় ইচ্ছা করলেও কৃষিতে রাসয়নিকের ব্যবহার কমানো যাচ্ছে না বলে মনে করেন কৃষকগণ। কারণ তারা মনে করছেন এলাকার অধিকাংশ কৃষকের জমির পরিমাণ খুবই সামান্য। তাছাড়া অনেকে বর্গা বা লিজ নিয়ে জমি চাষ করে। সেখানে উৎপাদনটাই মূখ্য। প্রকৃতিনির্ভর কৃষি চর্চা প্রসঙ্গে সানাইল গ্রামের কৃষক নিরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, “হঠাৎ করেই সার বিষ ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব না, তাই আমি ধীরে ধীরে কমানোর চেষ্টা করছি। তবে বসত বাড়িতে শাক সবজিতে আমি কোন সার বিষ দেই না। এবছর ধানে কোন রাসয়নিক সার বিষ ব্যবহার করিনি সব গোবর সার দিয়েছি। তাতে বিঘা প্রতি ৫ মণ করে ধান কম হয়েছে। কিন্তু তুলনামুলক ভাবে আমিই লাভবান হয়েছি। কারণ আমার উৎপাদন খরচ অন্যদের তুলনায় কম হয়েছে।’
কৃষকের মুখে কৃষি বিষয়ক চ্যালেঞ্জ সমূহের বিস্তারিত বিবরণ শুনে অনুপ কুমার তার জৈব উপায়ে চাষাবাদ পদ্ধতি এবং বিভিন্ন রকমের সবজি, সবজিতে আক্রমণকারী পোকা এবং পোকা দমনের চিত্র কৃষকদের দেখান ও কৃষকদের সাথে মতবিনিময় করেন। জৈব উপায়ে কীটনাশক তৈরি, উপকারী পোকা রক্ষা করে ক্ষতিকারক পোকা জমি থেকে দূর করার উপায় এবং বাড়িতে বীজ সংরক্ষণের পদ্ধতি বর্ণনা করেন তিনি। তাছাড়া তিনি প্রাকৃতিকভাবে পোকা দমন করা ও ফসলের পরিচর্যা করার জন্য সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, বালাই দমনে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার, গাছে ফল না ধরলে চারদিকে গর্ত করে অক্সিজেন পরিবহনের ব্যবস্থা করা ও খৈল পানি ও গোবর দেওয়া, গাছের পাতা হলদে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি দেওয়া, পোকা আক্রান্ত ডগা হাত দিয়ে তুলে ফেলা ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ দেন কৃষকদেরকে। পরিশেষে পরিদর্শক অনুপ কুমার এগ্রোইকোলোজি, বায়োলোজিক্যাল পেস্ট কন্টোল, জৈব কৃষি ব্যবস্থানা, উপকারী- অপকারী পোকাসহ জৈব খামার ব্যবস্থানা বিষয়ে কর্মী পর্যায়ে বিশদ আলোচনা করেন এবং এ সময়ে সকলের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে দুই দিনের মাঠ পরিদর্শন, শিখন ও সহায়তা কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘটে।