একজন সীমা রানী
সিংগাইর, মানিকগঞ্জ থেকে আছিয়া আক্তার
সৃষ্টির সূচনা থেকেই মানুষ একজন আরেকজনের ওপর একজন বহুজনের ওপর, আবার বহুজন বহুজনের ওপর নির্ভরশীল। এই আন্তঃনির্ভরশীলতার সম্পর্কের মধ্য দিয়ে টিকে আছে আমাদের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র। আন্তঃনির্ভরশীলতার এই যে নেট বা জালের যদি একটি সুতো ছিড়ে যায় তাহলে আবার ব্যাঘাত ঘটবে পরিবার, সমাজ, রাষ্টে। ছোট আকারে বলতে গেলে দেখা যায়, আমাদের তো দুটি হাত আছে, যদি একটি হাত না থাকে তাহলে কত সমস্যা, কত কষ্ট। আমরা ঠিক করে একটি জিনিস ধরতে পারবো না। পরিবারে নারী এবং পুরুষও তেমনি একজন আরেক জনের পরিপূরক। এমনই একজন পরিপূরক নারী সীমা রানী।
মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার বায়রা ইউনিয়নের বাইমাইল ঋষিপাড়ার বউ সীমা রানী (২৩)। ২০১৪ সালে বিয়ে হয় তাদের। স্বামী নিখিল চন্দ্র রায় (৩৬), পেশায় রাজমিস্ত্রি। তাদের দুটি ছেলে বড়টার নাম আদিত্য (৪ বৎসর) ছোট ছেলের নাম নিলয় (৮মাস)। শ্বাশুরিসহ মোট ৫ জন সদস্যের সংসার তাদের।
স্বামীর একা আয়ের সংসার। থাকার ঘর ছারা আর কোন বাড়তি জমি নেই তাদের। স্বামীর একা আয়ে শ^াশুড়ি, নিজে এবং দু’বাচ্চার দুধ, সুজি কেনা, কারেন্ট বিল, ডিস বিলসহ অনেক খরচ পরে যায় মাসে। সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয় তার স্বামীর। এসব দিক বিবেচনা করে সীমা রানী শ্বাশুরি এবং স্বামীর সাথে পরামর্শ করে একটি মুদি দোকান দিতে ইচ্ছে পোষণ করে। প্রথমে স্বামী এবং শ্বাশুরি মানা করে কিন্তু তিনি বারবার তাদের বুঝাতেই থাকেন এবং এক সময় তারা রাজি হন। প্রথমে দু’হাজার টাকা নিয়ে শুরু করে তার এ দোকান। তারপর আবার চার হাজার টাকার মাল আনেন। এভাবে বাড়াতে বাড়াতে এখন ১২ হাজার টাকার জিনিস আছে তার দোকানে।
তার দোকান থেকে প্রতিদিন শীতকালে ৫০০ টাকা আর গরম কাল অথাৎ বর্তমানে ১০০০ টাকা করে আয় হয়। সীমা রানী বেশ নরম মনের মানুষ। যার ফলে বাকিও যায় বেশ। আশপাশের পাড়া প্রতিবেশিরা বলেন, সীমার দোকান হওয়াতে আমাদের বেশ উপকার হয়েছে। একটা জিনিসের দরকার হলে স্টান্ডে যেতে হতো, বড় রাস্তা পারাপারে খুব সমস্যা, চোখের পলকেই অনেক গাড়ি চলে আসে। আর সীমার এখানে বাচ্চাদের দিয়েই জিনিস নিতে পারি। সময় কম লাগে,কষ্ট করে দুরে যেতে হয় না। আবার টাকা না থাকলে সীমা বাকিতেও বিক্রি করে।’
দোকানের পাশাপাশি তিনি মুরগি, ছাগলও পালন করেন। তার এ কাজে তার স্বামী কাজের অবসরে সাহায্য করেন। স্বামী ছাড়াও শ^াশুড়ি বেশ সাহায্য করেন। যেমন ছাগলের জন্য ঘাস কেটে আনেন। তার বাচ্চাদের গোসল কারানো, খাওয়ান ইত্যাদি।
সীমা বলেন, ‘সংসারটাকে সুখী, সুন্দর করার জন্য স্বামীর পাশাপাশি স্ত্রীদের আয়মূলক কাজ করা দরকার। আর সে জন্য প্রথমে বাধা আসবেই। কিন্তু সে বাধাকে উপেক্ষা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। পরিশেষে সফলতা আসবেই।’