শরৎ এ ধরণী প্রাণ ফিরে পায়
মানিকগঞ্জ থেকে পংকজ পাল ও সুবীর সরকার
‘নীলাকাশে কে ভাসালো সাদা মেঘের ভেলা….’ কিংবা ‘শাওনও রাতে যদি’ …. গান শুনলে আর নীলাকাশে সাদা মেঘ, ভোরের শিশির ভেজা ঘাস, শিউলি আর কাঁশফুলের নয়ন ভোলানো সৌন্দর্য মনে করিয়ে দেয় শরৎ ঋতুর কথা। শরতের নয়ন ভোলানো রূপে আন্দোলিত হয় সবার মন। শরতের এই নয়ন ভোলানো সৌন্দর্যের কথা, ঋতু বৈচিত্র্যের গুরুত্ব এবং প্রাণ-প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা গানে ও আবৃত্তির মাধ্যমে তুলে ধরার জন্য বারসিক শিক্ষা সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য বিভাগের আয়োজনে গত ২৯ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জের বানিয়াজুরিতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল শরৎ উৎসব।
বানিয়াজুরি ইউনিয়ন কমপ্লেক্সের হলরুমে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে বানিয়াজুরী সৃজন সংগীত একাডেমী ও জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ, মানিকগঞ্জ এর আয়োজনে এবং বারসিক এর সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়। দুই পর্বে বিভক্ত অনুষ্ঠানটি প্রথম পর্বে ছিল আলোচনা ও দ্বিতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মুখতারুজ্জামান বাবুর সভাপতিত্বে আলোচনা পর্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন-বারসিক সমন্বয়কারী বিমল রায়। তিনি বলেন, “শরতের গুরুত্ব অপরিসীম। শরৎ যদি না থাকে ঋতু বৈচিত্র্য থাকবে না। ঋতু বৈচিত্র্য না থাকলে সুন্দর বাংলাদেশ থাকবে না আর থাকবেনা প্রাণ বৈচিত্র্য।”
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ্যাড. দীপক কুমার ঘোষ বলেন, “শরৎ হচ্ছে ঋতুর রাণী। এ ঋতুতে ধরণী যেন প্রাণ ফিরে পায়। এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য হলো প্রকৃতিকে ভালোবাসা, প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা। প্রকৃতির প্রতি দায়বদ্ধতা, প্রকৃতির প্রতি যতœশীল হওয়া। আমাদের প্রকৃতিকে ভালোবাসতে হবে আর প্রকৃতির প্রতি যতœশীল হতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক আবুল ইসলাম শিকদার বলেন, “শরৎ উৎসব মানিকগঞ্জে আমার জানামতে প্রথম। আগের সংস্কৃতি, আগের ঐতিহ্য আজ আর নেই। আজকের এই আয়োজন দেখে আমার শৈশবের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। বর্তমান অস্থির অবস্থা থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হচ্ছে- সংস্কৃতি চর্চা। ”
অনুষ্ঠানের শুরুতে সকলের সমবেত কন্ঠে “আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে” গানটি গাওয়া হয়। এরপর গানে গানে শরৎ বন্দনা করেন সৃজন সংগীত বিদ্যানিকেতনের রতন সাহা, অনন্ত সাহা, হ্যাপি, মৃদুল মন্ডল, সুমনা, সিনজিন সহ আরও অনেকে। আবৃত্তি করেন অন্তরঙ্গ সাহিত্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট কবি দেলোয়ার রহমান খান। ঘিওর হতে আগত কবি রুহুল আমিন, কবি পরিতোষ আচার্যসহ আরও অনেকে। এরপর সংগীতের মাধ্যমে শরৎকে বরণ করেন জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদের সত্যব্রত চক্রবর্তী, ইমন, শান্তি নিকেতনের শিক্ষার্থী ও বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী শিপ্রা শিকদার। শরৎ উৎসবের সাংস্কৃতিক পর্বের সঞ্চালনা করেন-সুবীর সরকার ও পংকজ পাল এবং আলোচনা পর্বের সঞ্চালনা করেন নজরুল ইসলাম।
দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই অনুষ্ঠান দেখে এলাকার মানুষ খুবই খুশি হয়েছেন আর ভবিষ্যৎ এ আরো আয়োজনের অনুরোধ করেছেন।