বরেন্দ্র অঞ্চলের জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় নারী
বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে শহিদুল ইসলাম
বরেন্দ্র বাংলাদেশের অত্যন্ত খরাপ্রবণ অঞ্চল। ভৌগোলিক দিক দিয়ে অঞ্চলটি খরাপ্রবণ হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের আঞ্চলিক প্রভাব খরাকে আরো প্রসারিত করছে। প্রাকৃতিক জলাধারসহ ভূগর্ভস্থ পানির যৌক্তিক ব্যবহারের অভাব পানির স্তর দিনে দিনে নিচে নেমে যাচ্ছে। একদিকে জলাবায়ু পরিবর্তনের সংকট অন্যদিকে প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের অভাবে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষিতে নেমে আসছে অস্বাভাবিক পরিবর্তন। কৃষকরা পরিবর্তনশীল আবহাওয়ার সাথে লড়াই করে নিজেদের রক্ষার জন্যে শস্য ফসল চাষের সময় ও শস্য ফসলের জাত বাছাইয়েও পরিবর্তন করছেন। আর কৃষির এই কাজে সার্বিক সহযোগিতা করছে নারী কৃষকরা ।
রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছী ইউনিয়নের প্রায় ৫১ জন নারী তাঁদের অতীত অভিজ্ঞতা দিয়ে বর্তমান সময়ে আবাহাওয়ার উপযোগী কৃষির চর্চাগুলো করছেন। স্থানীয় আবহাওয়া উপযোগী দেশীয় প্রজাতির বীজগুলো তারা নিজেদের মধ্যে বিনিময় করছেন। একই সাথে চাষাবাদের জন্যে অন্যান্য নারী ও পুরুষ কৃষককেও সহায়তা করছেন। চলতি রবি মৌসুমে কম পানিনির্ভর শস্য ফসলের বীজের তথ্য ও তা নিজেরদের ইউনিয়নে ছড়িয়ে দিতে তারা বীজবৈচিত্র্যের মেলার মাধ্যমে বীজ বিনিময় করেন। একই সাথে জৈব কৃষির অভিজ্ঞতাগুলো সকলের সাথে সহভাগিতা করেন।
বড়গাছী ইউনিয়েনের মাধবপুর গ্রামের পূর্বাশা নারী সংগঠনের সদস্য ও নারী কৃষক মোছাঃ মনিরা বেগম বলেন, “আমারা সবজিতে জৈব সার ব্যবহার করছি, এতে করে রোগবালাই কম হচ্ছে, একই সাথে এখনকার বৈরী আবহাওয়াও সহ্য করতে পারছে।” তিনি আরো বলেন, “আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি যে, দেশী জাতের সবজিগুলো রোগ, পোকা এবং বৈরী আবাহাওয়া বেশি সহ্য করতে পারে।”
নারীরা একই সাথে বাড়ির আশপাশসহ সব জায়গায় বিভিন্ন ধরনের ফলজ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষ রোপণ করেও নিজেদের খাদ্য নিরাপত্তাসহ পরিবেশ ও বৈচিত্র্য রক্ষা করেন। তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে ঘরের মধ্যে উপযোগী শস্য ফসলের বীজ সংরক্ষণ করেন। প্রয়োজনীয় তাপ এবং সবকিছুর কারিগরি দিকটি একজন নারী কৃষকই ঠিক করে থাকেন। একজন নারী কৃষক তার অভিজ্ঞতা দিয়েই বীজকে জীবিত রাখেন। প্রয়োজনীয় সময়ে পুরুষ কৃষককে বীজ দিয়ে সহায়তা করেন। শুধু তাই নয়; বরেন্দ্র অঞ্চলের অত্যন্ত খরা এবং শীতের প্রকোপ থেকে বাড়ির সবজি গাছকে রক্ষা করতে তারা নিজেরা কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরি করে ব্যবহার করছেন। একই সাথে প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে বাকিটা বিক্রি করে নিজের আর্থিক উন্নয়ন ঘটাচ্ছেন।
বরেন্দ্র এলাকার নারীরা একদিক দিয়ে যেমন তাঁদের অভিজ্ঞতা দিয়ে স্থানীয় শস্য ফসলগুলো রক্ষা করে জলবায়ু দুর্যোগ থেকে কৃষিকে রক্ষা করছেন। অন্যদিকে তারা পরিবেশ সুরক্ষায় অবদান রাখছেন। বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় গ্রামের এই নারী কৃষকরাই সকলের অজান্তেই সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন নিজের পরিবার, সমাজসহ দেশ ও বিশ্বকে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কৃষি অভিযোজন উদ্যোগে নারীর অবাদান ও স্বীকৃতির প্রয়োজন ।