স্বপ্ন পূরণে সবুজ ব্যাংকিং সেবা
রাজশাহী থেকে শহিদুল ইসলাম, অমৃত কুমার সরকার, শহিদুল ইসলাম শহিদ
বরেন্দ্র অঞ্চলের এলাকা উপযোগী সবুজ কৃষি নিয়ে সব সময় কাজ করেন রাজশাহীর তানোর উপজেলার কলমা ইউনিয়নের বহড়া গ্রামের কৃষক মো. আব্দুল হামিদ। নিজের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন বিশাল আকারের কেচোঁ কম্পোস্ট তৈরির কারখানা। এই সার নিজের জমিতে ব্যবহার করেন এবং বিক্রি করেও নিজে আয় করছেন। ফসল ফলান জৈব পদ্ধতিতে। ২০১৪ সালে পরিবেশবান্ধব কৃষি চর্চার লক্ষ্যে তিনি কেঁচো কম্পোস্ট তৈরি শুরু করেন। একই সাথে তিনি জৈব পদ্ধতির নানা দিকগুলো নিজেই চর্চা করেন। কৃষক মো. আব্দুল হামিদ এখন এই অঞ্চলের একজন দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী কৃষক। তাঁর মাধ্যমেই অনেক কৃষক এখন কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরির অভিজ্ঞতা নিয়ে নিজেরাও তৈরি ও ব্যবহার করছেন। কৃষক মো. আব্দুল হামিদ বরেন্দ্র অঞ্চল উপযোগী শস্য ফসলের পরীক্ষামূলক চাষেও অবদান রাছেন। বিগত মৌসুমে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে জিরা চাষ করে প্রাথমিকভাবে সফলতা পান।
এলাকার বাস্তবতা এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় দিনে দিনে পরিবেশবান্ধব কৃষি এবং পরিবেশ ভাবনাগুলো নিয়েও চিন্তা করেন কৃষক আবদুল হামিদ; চলে তাঁর নিরন্তর গবেষণা। তার ধারাবাহিক সবুজ চিন্তার আরেকটি বাস্তব প্রতিফলন হলো বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করা। ঘরে গরু নেই, প্যানেল তৈরির জন্য অর্থও নেই তাঁর কিন্তু থামার পাত্র তিনি নন! তাঁর এ সবুজ চিন্তার একটি বাস্তব প্রতিফলন দিতে বদ্ধপরিকর। এই ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য অবশেষে তিনি সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সবুজ ব্যাংকিং সেবার জন্যে যোগাযোগ করেন। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন বারসিক। বারসিক সবুজ ব্যাংকিং সেবাগুলো নিয়ে জনসংগঠন পর্যায়ে আলোচনা ও মতবিনিময় করার ফলে বিষয় সম্পর্কিত দিকগুলো অংশগ্রহণকারীগণ জানেন। কৃষক মো. আব্দুল হামিদ সবুজ ব্যাংকিং এর সেবার জন্যে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে যোগাযোগ করেন। এভাবে তিনি বায়োগ্যাস প্লান্ট, ভার্মী কম্পোস্ট তৈরি এবং গরু ক্রয়ের জন্যে দুই লাখ নব্বই হাজার টাকা শর্তসাপেক্ষে সহযোগিতা পান। এবার তার স্বপ্ন পূরণে অবদান রাখবে সবুজ ব্যাকিং সেবা।
সবুজ ব্যাংকিং সেবা বিষয়ে আলোচানা দরকার গ্রাম পর্যায়ে
পরিবেশ রক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সবুজ ব্যাংকিং সেবা আর্থিক সহায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১১ সালে এক সার্কুলারের মাধ্যমে সবুজ ব্যাংকিং কার্যাবলী পরিচালনার জন্যে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে। এরপর থেকে সরকারি ও বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্নভাবে সবুজ ব্যাংকিংকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। সবুজ ব্যাংকিং বলতে ব্যাংকার ও গ্রাহকদের যৌথ প্রচেষ্টার সাহায্যে বায়ু দূষণ, পানি দূষণ ও শব্দ দূষণ থেকে পরিবেশকে রক্ষা করাকে বোঝানো হয়। সবুজ ব্যাংকিং এর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সব সময় গ্রাম পর্যায়কেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কিন্তু তথ্য এবং নিয়মের জটিলতার কারণে প্রান্তিক মানুষগুলো সেবার পুরোটাই নিতে পারেন না। সরকারের প্রতিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানেই সবুজ ব্যাংকিং সেবা হিসেবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উপকরণ তৈরি, ক্রয়, সৌর প্যানেল স্থাপন, বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি, ভার্মী কম্পোস্ট তৈরি ও সহায়তা হিসেবে গবাদি পশু ক্রয় ও পালনসহ এবং পরিবেশবান্ধব কৃষি উৎপাদনে সবুজ ব্যাংকিং সেবা দিয়ে থাকে। সবুজ ব্যাংকিং সেবা বিষয়ে গ্রাম পর্যায়ে প্রান্তিক মানুষগুলোর তথ্য প্রাপ্তির লক্ষ্যে নিবিড়ভাবে কাজ করা দরকার। একই সাথে শর্তগুলো শিথিল করলে প্রান্তিক কৃষক গ্রামের মানুষগুলো বেশি উপকৃত হবে।