সাম্প্রতিক পোস্ট

পাহাড়ি প্রতিবেশের সৌন্দর্য বর্ধনে ভ্রমরা গাছ

কলমাকান্দা, নেত্রকোনা থেকে খায়রুল ইসলাম অপু

নেত্রকোনা জেলা কলমাকান্দা উপজেলা রংছাতী ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তবর্তী ছোট একটি গ্রাম চন্দ্রডিংঙগা। এ গ্রামে ৩টি (বাঙালি, গারো, হাজং) সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর বসবাস। গ্রামটি কলমাকান্দা উপজেলা থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পাহাড়বেস্টিত গ্রামের জনগোষ্ঠী নানাভাবে তাদের জীবন ও জীবিকার জন্য পাহাড়ের উপর নির্ভরশীল। পাহাড় তাদের জন্য জ্বালানি, ঘর বাড়ি তৈরির উপকরণ, অচাষকৃত শাকসবজি, অচাষকৃত ফল, খাবার পানি, গবাদি পশুর খাদ্য প্রভৃতি উপহার দেয়। অচাষকৃত ফলের মধ্যে ভ্রমরা একটি উল্লেখযোগ্য ফল। যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ধন, জ্বালানি, বসতভিটে ও ফসলি জমি রক্ষার বেড়া দেওয়ার উপকরণ, ক্ষধার্ত রাখাল বালকসহ পথচারী সকল মানুষের সুস্বাদু ফল ও পুষ্টি যোগাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

Khai
ভ্রমরা গাছে সারাবছর ফুল ও ফল হলেও বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসে ফুল ফল দেখা যায়।  ফুলের রঙ হালকা বেগুনি। এর ফুল ভ্রমর, প্রজাপতি, মৌমাছিদের খাদ্য যোগায়। তবে ভ্রমরদের বিচরণ বেশি দেখা যায় বলে স্থানীয়রা এর নাম দিয়েছেন ভ্রমর গাছ। পাতা দেখতে তেজপাতার মত। তবে খসখসে। ফলের রঙ লালচে সবুজ। কিন্তু পেকে গেলে উপরের খোলস আলগা হয়ে যায়। ফলের ভিতরের কোষটি ৪টি ভাগে বিভক্ত। এর স্বাদ মিষ্টি তবে কিছুটা কষযুক্ত। তবে ফলের অংশটি দানাদার। রৌদ্র পেলে ফলটি আরো মিষ্টি হয়। অনেক শিশু পাহাড়ে গরু চড়াতে গিয়ে ক্ষিদে পেলেই এই ফলটি খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করে। আবার যেহেতু পাহাড়ি রাস্তার ধারে এই গাছটি জন্মে তাই পথ চলতে চলতে সব বয়সের পথিক গাছে পাকা ফল দেখলেই পেড়ে খেয়ে নেন। ফল খাওয়ার পর দাঁত, ঠোট, জিহ্বা কালো হয়ে যায়। শুধু মানুষ নয় সব ধরনের পাখিকেই এর পাকা ফল খেতে দেখা যায়।

এ গাছ বাড়ির আঙ্গিনায়, পুকুরের পাড়ে, ক্ষেতের আইলে, পাহাড়ের কিনারে সমতল ভূমি সর্বত্রই জন্মে। এ গাছ অধিক পানি ও অধিক খরা সহ্য করতে পারে। শিকড়সহ গাছ উপরে না ফেললে সহজে মরে না। এগাছের গুঁড়ায় বা শিকড় থেকে যে চারা বের হয় সেখান থেকেই গাছ হয়। আবার এর বীজ থেকেও গাছ হয়। পাখি ভ্রমরা ফলের বীজ Khai-1খাওয়ার পর মল ত্যাগ করলে সেখান থেকেও চারা গজায়।

এই গাছের ডাল জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করে পাহাড়ি এলাকার অনেক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। ছোট ছোট ডালগুলোই জ্বালানির উপযুক্ত হয়ে ওঠে। ডালপালা কাটার পর আরো দ্রুত ডালপালা গজায়। তাই শিকড়সহ উপড়ে না ফেললে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না। এই গাছের ফুলের রয়েছে ঔষধি গুন। স্থানীয় কবিরাজ ঘৃটেন সাংমা বলেন, “কুকুর কামড় দিলে  মাত্র তিনটি ফুল এক দমে ছিড়ে খেয়ে নিলে উপকার পাওয়া যায়।”

আদিবাসীরা এই গাছ সংরক্ষণ করেন জ্বালানি, ফল, ঔষধি ও সীমানা বেড়া দেওয়ার জন্য। তাতে শুধুমাত্র এর সুফল মানুষই ভোগ করছে না। অন্যান্য প্রাণী ও পোকামাকড়ও উপকৃত হচ্ছে। এছাড়া পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যও বজায় থাকছে। শোনা যায়, এই ফুল যেখানে বেশি পরিমাণে জন্মে সেই মাটি চা উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত।

happy wheels 2

Comments