একজন সাদা মনের মানুষ
মানিকগঞ্জ থেকে এম আর লিটন
সময়ের প্রতি তিনি অনেক গুরুত্ব দেন, সময়ের কাজ সময়ে করতে ভালোবাসেন, একজন দায়িত্ববান, সচেতন এবং প্রাণ খোলা সাদা মনের মানুষ ।
বলছিলাম কলামিস্ট ও অধ্যাপক শ্যামল কুমার সরকার (৪৮) এর কথা। মানিকগঞ্জ জেলা শহরে গঙ্গাধরপট্টি এলাকায় বসবাস করেন । তিনি পেশায় একটি বেসরকারি ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান। কর্মজীবনের শুরু থেকেই পেশাগত সংগঠন বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকবিশিস) এর সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত আছেন। এছাড়াও লেখালেখি তাঁর নেশা। তিনি প্রাইমারি স্কুল থেকে বরাবর ছিলেন মেধাবী ও সেরা ছাত্র । তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে বিএ (অনার্স) এবং এমএ ডিগ্রি লাভ করেন । এরপর কর্মক্ষেত্রে যোগ দেন ।
তিনি বাংলাদেশ টেকনিক্যাল এডুকেশন বোর্ডের ডিপ্লোমা-ইন-এগ্রিকালচার কোর্সের ইংরেজি সিলেবাস প্রণয়ন কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি বিএড কোর্সের একজন শিক্ষক-প্রশিক্ষকও। এছাড়াও তিনি অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন । এ বিষয়ে তিনি অনেক লেখালেখিসহ ভুক্তভোগিদের সমস্যা সমাধানে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছেন। প্রাণী অধিকার নিয়ে তিনি কাজ করেন। মানবাধিকার ও শিশু অধিকার নিয়েও তিনি চিন্তাশীল। ‘এনসিটিবি’ প্রণীত উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির ‘ইংলিশ ফর টুডে’ পাঠ্যপুস্তকের মান উন্নয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ।
শ্যামল কুমার সরকার ছোট্টবেলা থেকে লেখালেখির প্রতি দুর্বল ছিলেন। এরপর ধীরে ধীরে লেখালেখি তাঁর নেশা হয়ে দাঁড়ায় । এখন তিনি স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন। তিনি প্রগতিশীল সাহিত্য সংগঠন ‘বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ’ এর সাথে জড়িত আছেন। ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর ৫টি গ্রন্থ ।
তিনি বারসিক নিউজকে বলেন, “দু’দশকের বেশি সময় লেখালেখি করছি। আমরা সবাই দেশের কাছে ঋণী। এ ভাবনাগুলো তাড়িয়ে বেড়ায় । জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় আমার শতাধিক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এ নিবন্ধের কিছু নিয়ে ‘নির্বাচিত কলাম’ নামে একটি বই প্রকাশের ইচ্ছে আছে ।” তিনি আরও বলেন, “লেখকরা এদেশে মোটেও ভালো নেই। হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া কারো কোন সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আর্থিক স্বীকৃতি নেই। নিশ্চিত ডুবতে যাচ্ছে জেনেও অনেক লেখক লিখে যাচ্ছেন। লেখালেখি এক ধরনের পাগলামি- এক ধরনের শিহরণ।”
শিক্ষার মান উন্নয়ন ও প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের সময় সচেতন ও সময়ের প্রতি গুরুত্ব শেখানোসহ তিনি নানা বিষয়ে কাজ করে যাছেন। তিনি প্রজন্মের জন্য সুন্দর একটি পরিবেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেন। প্রজন্ম সম্পর্কে বারসিক নিউজকে বললেন, “বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশ সময়ই সচেতন নয়। অনেকেই মাদকাসক্ত এবং মোবাইল-ফেসবুক-ইন্টারনেট নিয়ে মাতাল। বাস্তবতা বিচ্ছিন্ন জীবনেই এ সময়ের ছেলে-মেয়েরা নিজেদের সুখী ভাবে। ফলে মানবতাহীন ও স্বার্থপর মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।”
তবে তিনি এতে হত্যাশ নন। তাঁর ধারণা, নতুন প্রজন্মকে যদি সময়ের গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝানো হয় এবং সৃজনশীল কাজের সাথে যদি সক্রিয় করা হয় তাহলে তারাই একদিন সত্যিকারের মানুষ হয়ে ওঠবে। শ্যামল কুমার সরকার অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনায় বিশ্বাস করেন। তিনি খুব সাধারণভাবে জীবনযাপন করতে ভালোবাসেন। তাঁর জীবনযাপন ও ব্যবহারের কারণে মানিকগঞ্জ শহরে সৎ ব্যক্তি হিসেবে তিনি সর্বাধিক পরিচিত।