মৃৎ শিল্পীদের জীবন সংগ্রাম
ভাঙ্গুড়া (পাবনা) থেকে মো. মনিরুজ্জামান ফারুক
ওরা মৃৎশিল্পী। সংসারে ওদের অভাব-অনটন লেগেই আছে। সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে যা রোজগার হয় তা দিয়ে পেট চালানোই দায়! সরকারি পৃষ্টপোষকতার অভাব ও দেশে আধুনিক তৈজসপত্র বাজার দখল করে নেওয়ায় পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক মৃৎশিল্পী পরিবারের জীবন-জীবিকার দূরাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, এক সময় চলনবিল অধ্যুষিত এ উপজেলার গ্রাম-গঞ্জের মানুষ মাটির হাঁড়ি, পাতিল, কড়াই ও থালাবাসন ব্যবহার করত কিন্তু আধুনিকতার ছোয়ায় প¬াস্টিক শিল্পের ব্যাপক প্রসারের ফলে মাটির তৈরি জিনিসপত্র আর কেউই ব্যবহার করতে চাইছে না। ফলে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য এ মৃৎশিল্প আজ ধ্বংসের পথে। আর সেই সাথে এ শিল্পের সাথে জড়িত মানুষগুলোর রুটি-রোজগারের পথও প্রায় বন্ধের দিকে। এছাড়া মাটি, রঙ, লেবার, খড়ি প্রভৃতির সংগ্রহ মূল্য বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। সে অনুযায়ী মাটির জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি।
কথা হয় পৌরসভার পাল পাড়ার মৃৎ শিল্পী অসীম পালের সাথে। তিনি জানান, এটি তার পিতৃ পেশা। ছোট বেলা থেকেই তিনি এ পেশার সাথে জড়িত। তিনি জানান, আগের মতো মাটির জিনিসপত্র আর চলে না। তাছাড়া আগের মত মাটি ফ্রি পাওয়া যায় না। কোনো মতো এ পেশাকে তিনি ধরে রেখেছেন।
শ্রী বাসন্তী। বয়স ৫০ বছর। স্বামী গোপাল বাদ্যকর। তিনিও মৃৎ শিল্পের সাথে জড়িত। তিনি জানান, সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে যা আয় হয় তা দিয়ে তার সংসার চলে না। শ্রী নবচন্দ্র পাল। তাঁর বয়স ৬০ বছর। এ বয়সেও তিনি পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে মাটির জিনিসপত্র তৈরি করেন। তারপরও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় ।
উপজেলার মেন্দা পালপাড়া ও অষ্টমনিষায় এ রকম প্রায় অর্ধশতাধিক মৃৎ শিল্পী পরিবার রয়েছে। এখনও তাদের প্রধান পেশা এটি। শুধু বেঁচে থাকার তাগিদে অনেক কষ্টে এখনও তারা তাদের বাপ দাদার এ পেশা আঁকড়ে ধরে আছেন। আমাদের নিজেদের স্বার্থেই এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে এর সাথে সংশি¬ষ্টদের জীবিকার পথ প্রসারিত করতে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।