‘সামনে গড়’ থেকে শ্যামনগর
শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে আল ইমরান
শ্যামনগর উপজেলা সাতক্ষীরার সর্ববৃহৎ উপজেলা। উপজেলাটি কৃষিপ্রাণবৈচিত্র্য ও পর্যটন সর্মৃদ্ধ উপজেলা হিসেবে পরিচিত। ১৮৯৭ খ্রিঃ শ্যামনগর প্রতিষ্ঠিত হয় শ্যামনগর থানা। শ্যামনগরের নামকরণ নিয়ে রয়েছে রসালো তথ্য। প্রাচীন যুগে মোঘল আমলে, মোঘল আক্রমণ থেকে রাজধানী রক্ষার লক্ষ্যে মহারাজ প্রত্যপাদিত্যের পুত্র মহারাজ উদয় আদিত্য খাল খনন করেন, মোঘল গভর্নর ইসলাম খানের নেতৃত্বে মোঘল সেনারা এগিয়ে এলে ‘সামনে গড়’ বলে চিৎকার করে খাল সম্পর্কে সতর্ক করে দেন। ‘সামনে গড়’ এই শব্দ থেকে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ উপজেলা শ্যামনগর নামের উৎপত্তি বলে জানা যায়।
বাংলাদেশের একেবারেই দক্ষিণে অবস্থিত সুন্দরের চাদরে মোড়ানো শ্যামনগর পর্যটন কেন্দ্রের সম্ভাবনাময় একটি উপজেলা। এখানের ঐতিহাসিক স্থানগুলো কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সমুদ্রের লোনা জল বিধৌত এবং বনাঞ্চলে আবৃত বলে এই অঞ্চল প্রাচীন জনপদ বলে কখনও মনে হয়নি। কিন্তু ইতিহাস ঘাটলে চোখের সামনে যা ভেষে ওঠে তা হলো এই জনপদে কখনও বনভূমি কখনও জনভূমি ছিল। সময় সব কিছুই বদলে দেয়, এটাই নিয়তির নিয়ম। কখনো জনপদ ধ্বংস হয়ে বনভূমি গড়ে উঠেছে, আবার কখনো জনপদ গড়ে উঠেছে, আবারা ধ্বংসও হয়েছে। অবশ্যই কালের স্বাক্ষী হয়ে স্মৃতির পাতায় যেসব চিত্র চোখে পড়ে সে সব পুরাতন স্থাপনাগুলো খুব পুরানো নয়। কিন্তু প্রতাপাদিত্য যখন ঈশ্বরীপুরে যশোরেশ্বরী মন্দীর পুনরায় প্রতিষ্টা করেন তারপূর্বে সেখানে মন্দির বা জনবসতির ধ্বংসাবশেষ ছিল। সুতরাং প্রতাপাদিত্যের সংস্কারের বনভূমি ও ধ্বংসাবশেষ আরও অতীত জনপদের সাক্ষ্য দেয়।
শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামে ১২ শতকের শেষার্ধে রাজা লক্ষণ সেনের রাজত্বকালে শ্রী শ্রী যশোরেশ্বরী মন্দীর নির্মিত হয় বলে ইতিহাসবিদরা মনে করেন। রাজা প্রতাপাদিত্য রাজধানী নির্মাণকালে জঙ্গল পরিষ্কারের সময় ভগ্নাবস্থায় এই মন্দির ও কষ্ঠিপাথরের কালী মূর্তী উদ্ধার করেন। তারপর তিনি এই বিশাল মন্দিরটি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন বলে জানা যায়।
জাহাজঘাটা শামনগর উপজেলার খানপুর গ্রামে অবস্থিত রাজা প্রতাপাদিত্যের জাহাজ ঘাটা নৌ-ঘাট। যদিও এখন আর সেই যমুনা নদীর দেখা মেলেনা। যৌবন নেই যমুনায়। যেন কেউ গলা টিপে মেরে ফেলার উপক্রম করেছে যমুনার।এই যমুনা-ইছামতীর পূর্ব পাড়ে রনতরী তৈরি ও মেরামতের কাজ হতো। রাজা প্রতাপাদিত্য মূঘলদের প্রতিহত করতে শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তোলেন। এখানে তিনি তার অধিকাংশ সময় পার করতেন।বর্তমানে আংশিক ভবনের কিছু অংশ কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাত্র।
উপজেলাটি চিংড়ি চাষে দেশের রাজস্ব আয়ে ব্যাপক অবদান রেখেই চলেছে। এর সাথে সম্ভাবনার দারপ্রান্তে এখানকার পর্যটন। এখানে সুন্দরবনের মুন্সিগঞ্জ আকাশলীনা, গোপালপুর পিকনিক কর্ণার, হরিচরণ জমিদার বাড়ি, বংশীপুর শাহী মসজিদ ও বংশিপুর হাম্মাম খানাসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান রয়েছে যেটি পর্যটন বিকাশে সহায়ক হিসাবে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে। এখানে উল্লেখযোগ্য ব্যবসা কেন্দ্রগুলো হলো নওয়াবেঁকী বাজার, নকীপুর, মুন্সিগঞ্জ, ভেটখালী, নূরনগর ও হরিনগর। সরকার তৎপর হলে এলাকাটি বাংলাদেশের অন্যতম স্বনির্ভর উপজেলায় পরিণত করা সম্ভব।