সুন্দর পরিবেশ গড়তে জনসংগঠন ও শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ
নেত্রকোনা থেকে রুখসানা রুমী
বৃক্ষ রোপণের উত্তম সময় হল জুন-আগস্ট। গ্রামের জনগোষ্ঠীর ব্যক্তিগত ও যৌথ উদ্যোগে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি থেকে বাদ যায়নি গ্রামভিত্তিক গড়ে ওঠা জনসংগঠনগুলোও। এমনই একটি গ্রামীণ জনসংগঠন নেত্রকোনা সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়নের কাইলাটি গ্রমের ‘শিকড় কিশোরী সংগঠন’।
সংগঠনটি গঠনের পর থেকেই গ্রামের পরিবেশ রক্ষা, পুষ্টির চাহিদা পুরণ, স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রাণবৈচিত্র্যের উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়ে সেগুলো বাস্তবায়ন করে আসছে। এলাকায় প্রাণবৈচিত্র্য বৃদ্ধিতে এবং গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ সুন্দর করতে বৈচিত্র্যময় গাছের চারা রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। বিগত এক বছর যাবত ‘কাইলাটি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়’র শিক্ষাথীদের সাথে কৃষি প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজনে বৈচিত্র্যময় গাছের চারা রোপণ ও অচাষকৃত উদ্ভিদ সংরক্ষণসহ পরিবেশ রক্ষায় শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও উদ্যোগ গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধকরণে সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে শিক্ষামূলক অধিবেশন আয়োজন করে আসছে।
শিকড় কিশোরী সংগঠনের সংগঠন’র উদ্যোগে নতুন প্রজন্মকে কৃষি প্রাণবৈচিত্র্য, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে সচেতনা বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক সমস্যা চিহ্নিত করে স্থানীয়ভাবে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করে। তারই ধারাবাহিকতায় সংগঠনটি কাইলাটি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এর একটি আদর্শ ও সবুজ ক্যাম্পাস তৈরির পাশাপাশি বিষমুক্ত নিরাপদ ফল উৎপাদন নিশ্চিতকরণে স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সাথে যৌথ উদ্যোগে দেশীয় ফলজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ কর্মসুচি গ্রহণ করা হয়। সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে স্কুল ক্যাম্পাসে ৮০টি ফলের চারা রোপণ করা হয়। দুইশত শিক্ষার্থী প্রত্যেকে নিজ নিজ বাড়িতে একটি করে মোট ২০০টি ফলের চারা এবং কিশোরী সংগঠনের ২০ জন সদস্য প্রত্যেকে ২টি করে ৪০টি ফলের চারা রোপণ করেছে। স্কুল ক্যাম্পাসে রোপণকৃত ফলের চারায় বাঁশের খুটি ও বেড়া দেয়াসহ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেন স্কুল ব্যবস্থাপনা কমটি।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইব্রাহিম খলিল পলাশ বলেন, “এক সময় তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ, শ্যামনগর থেকে বান্দরবন কোথাও গাছপালার কোন অভাব ছিলনা। কিন্তু বর্তমানে শিল্প কারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, ইট ভাটা, ব্যাপক সুবিধাসম্বলিত উচ্চতর আবাসন নিমার্ণে প্রতিনিয়ত বনভূমি উজাড় হচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রয়োজন প্রাণের বৈচিত্র্যতা। পরিবেশ ও প্রাণ একটি অন্যটিকে আকড়ে ধরে টিকে থাকে এবং বিকশিত হয়। গাছপালা-লতাগুল্ম ও প্রাণ পরস্পর নির্ভরশীল। কিন্তু মানুষ এদের থেকে অন্য প্রজাতির প্রাণী এবং এদেরকে ক্রমাগতভাবে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের ফলে পরিবেশ হচ্ছে বিনষ্ট এবং প্রকৃতি হচ্ছে বিরূপ। জলবায়ু তার পরিবর্তনের স্বাভাবিক গতি হারিয়ে দ্রুত গতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তণের প্রভাবে প্রকৃতিও প্রতিনিয়ত বিরূপ আচরণ করছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব ও প্রকৃতির বিরূপ আচরণ মোকাবেলার অন্যতম উপায় হল পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃক্ষের সমারোহ ঘটানো। আর এজন্য আমাদের সকলকে বেশি বেশি করে গাছ লাগাতে হবে।” তিনি কিশোরী সংগঠন ও সকল শিক্ষার্থীদেরকে প্রতি বছর নিজ উদ্যোগে কম পক্ষে ৫টি করে ফলের গাছ রোপণের আহবান জানান। স্কুলের সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সংগঠনের সকল সদস্যরা পতি বছর ৫টি করে ফলের চারা রোপণের জন্য শপথ গ্রহণ করে।
মানসম্মত শিক্ষার জন্য চাই সুস্থ পরিবেশ। শহরাঞ্চলে স্কুল ক্যাম্পাসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির তেমন কোন সুযোগ না থাকলেও গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে রয়েছে পর্যাপ্ত সুযোগ। প্রতিটি স্কুলের রয়েছে বড় বড় মাঠ। এসব মাঠের চারিদিকে বৈচিত্র্যময় ফল, ফুল, কাঠ ও সৌন্দর্য বর্ধনকারী বৃক্ষ রোপণের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এসব মাঠের চারিদিক পতিত পড়ে থাকে। শিকড় কিশোরী সংগঠন এবং কাইলাটি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়’র শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ন্যায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গ্রামে গ্রামে গড়ে ওঠা জনসংগঠনগুলো বৃক্ষ রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করলে স্কুল ক্যাম্পাস ও এলাকার পরিবেশ যেমন সুন্দর ও সংরক্ষিত হবে, তেমনি প্রাণবৈচিত্র্য বৃদ্ধি পাবে।