একুশ ফেব্রুয়ারিকে চিনি, ইতিহাস জানি
রাজশাহী, তানোর থেকে অসীম কুমার সরকার এবং নেত্রকোনা থেকে মো. অহিদুর রহমান ও হেপী রায়
একটি জাতির জন্য তার নিজস্ব ভাষা অমূল্য সম্পদ। মনের ভাব প্রকাশ করার অন্যতম মাধ্যম হলো ভাষা। এই ভাষাতেই আমরা আমাদের মনের সকল আবেগ, অনুভূতি প্রকাশ করতে পারি। বিদেশী পরাশক্তি আমাদের মুখের ভাষাকেই কেড়ে নিতে চেয়েছিল। নিজের আত্মসম্মান আর মর্যাদাকে রক্ষা করার জন্য বাঙালিরা যুদ্ধ করে নিজের ভাষার অধিকার ফিরিয়ে এনেছেন ফেব্রুয়ারির এই দিনে। তাঁদের জীবনের বিনিময়েই আমরা আজ বাঙালি, বাংলা ভাষায় কথা বলি।
শহীদের এই আত্মত্যাগ স্মরণে প্রতিবছরই অমর একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় দেশব্যাপী। তারই ধারাবাহিকতায় যথাযথ মর্যাদায় তানোর সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে রাজশাহীর তানোরে এবং বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের উদ্যোগে নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা এবং অমর একুশে দিবস পালিত হলো। দু’টি এলাকার পৃথক এই আয়োজনে নানান পেশার ও শ্রেণীর মানুষ অংশগ্রহণ করে শহীদের প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। পৃথক দু’টি আয়োজনের কর্মসূচির মধ্যে ছিলো র্যালি আলোচনাসভা, প্রভাত ফেরী, কবিতা আবৃত্তি, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতাসহ আরও বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। ভাষার প্রতি মানুষের ভেতরে ভালোবাসা, আবেগ, অনুরাগ তৈরির জন্য বারসিক’র সহযোগিতায় এ উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করেন স্থানীয় এলাকার সাহিত্য পরিষদ ও বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ।
তানোর সাহিত্য পরিষদ’র উদ্যোগে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মহান শহীদ দিবসটি পালিত হয়েছে। প্রভাত ফেরীর মধ্য দিয়ে তানোর উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। তানোর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ দিবসকে নিয়ে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিশুদের মধ্যে একুশের চেতনা ও বাংলা ভাষার গুরুত্ব নিয়ে অনুষ্ঠানে বক্তরা বাংলাভাষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে যথাযথ ব্যবহার, শুদ্ধ বানান ও উচ্চারণের উপর নানাদিক নিয়ে আলোচনা করেন। পাশাপশি বাংলা ভাষার ইতিহাস তুলে ধরা হয় ক্ষুদে শিক্ষার্থীর মাঝে।
রবিবার সকাল ১০টায় তানোসপরি’র উপদেষ্টা অধ্যাপক লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তানোর পৌরসভা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ ইলিয়াল আলী মৃধা, উপদেষ্টা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দীন, আদর্শ কৃষক নূর মোহাম্মদ, তানোসপরি সভাপতি কবি অসীম কুমার সরকার, সাধারণ সম্পাদক কবি এমদাদুল হক রেজা, প্রভাষক রাকিবুল সরকার পাপুল প্রমুখ। এছাড়া প্রবীণ কবি রেজাউল ইসলাম, কবি আইরিন ভূঁঞা, বরেন্দ্র অঞ্চল বারসিক সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম, কর্মসূচি কর্মকর্তা অমৃত সরকার, শহিদুল ইসলাম শহীদসহ স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অবিভাবকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন প্রধান শিক্ষক আক্কাস আলী। অনুষ্ঠান শেষে চিত্রাংকন, ক ও খ শাখার কবিতা আবৃত্তি এবং বিজয়ীদের মাঝে পুরুস্কার বিতরণ করা হয়।
অন্যদিকে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং নতুন প্রজন্মকে একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে নেত্রকোনার লক্ষ্মীগঞ্জের বেলাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কেন্দুয়ায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা এবং শহীদ দিবস পালন করা হয়। দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে ছিলো র্যালি, আলোচনাসভা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি, বানান প্রতিযোগিতা, নাটক মঞ্চায়ন, গ্রামীণ ছড়া পাঠ ইত্যাদি। এ আয়োজনে বিভিন্ন স্কুল থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, যুবক প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন পেশার ও শ্রেণীর মানুষ অংশগ্রহণ করেন। মায়ের ভাষাকে শুদ্ধভাবে শিখি ও লিখি এই বিষয়কে সামনে রেখে নেত্রকোনা জেলা কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া ইউনিয়নের পাড়াদূর্গাপুর গ্রামের প্রকৃতি ও জীবন সংগঠনের উদ্যোগে সবুজ শ্যামল কৃষক সংগঠন, সবুজপাতা যুব সংগঠন, শাপলা শালুক নারী সংগঠন, পাড়াদূর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর সহযোগিতায় দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দিনব্যাপী অনুষ্ঠান শেষে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। একুশে অনুষ্ঠান সম্পর্কে বেলাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জাকিরা আক্তার বলেন, “আমার বিদ্যালয়ে এ ধরণের অনুষ্ঠান কখনও হয়নি। আমার শিক্ষার্থীরা উপকৃত হয়েছে। তারা ভাষা দিবস সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় জানতে পেরেছে। পড়াশোনায় তারা আরো আগ্রহী হবে”।