প্রকৃতি মানুষকে টিকে থাকতে সহায়তা করে
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে মুকতার হোসেন
আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য দিবস ২০২০ এর প্রতিপাদ্য বিষয় ‘আমাদের সমাধান প্রকৃতির মাঝে’। প্রকৃতি সকল সৃষ্টিকে আপন মনে যতœ করে করে যাচ্ছে নিঃস্বার্থভাবে। প্রকৃতির এই অভূতপুর্ব অবদান আমাদের অস্বীকার করার উপায় নাই। স্তরে স্তরে সাজিয়ে একটি উদ্ভিদ অন্য আরেকটি উদ্ভিদের সহায়তা নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। কিন্তু মানুষ প্রকৃতির এই বন্ধনকে টেনে হেচড়ে, ভেঙেচুরে তছনছ করে নিজের স্বার্থের জন্য। এই প্রসঙ্গে মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার একজন কৃষক আব্দুর করিম (৬২) বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পাশে জঙ্গল (আড়া) ছিল। সেখানে অনেক ধরনের পশুপাখি যেমন: শিয়াল, খেকশিয়াল, বেজি, খাটাস এবং অনেক জাতের পাখি বাস করত। এছাড়া ও আড়ার আশেপাশে অনেক জাতের ফলের গাছ ছিল যা এখন আর বেশি দেখা যায় না। সে সময় বেতের ফল, ক্ষুদিগাম, ছাগল নাদি ফল, ডইয়া গাছ, তিতি জাম ছোট বেলায় আমরা ঘুরে বেড়াতাম আর খেতাম । কিন্তু এ সকল গাছ গাছালী কম চোখে পড়ে। প্রকৃতির মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছুই আমাদের টিকে থাকতে সহায়তা করে।’
আব্দুর করিম জানান, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অনেক অচাষৃকৃত খাদ্য, প্রাণী আমাদের মাঝ থেকে কমে যাচ্ছে। খাল বিল, ডোবা, জলাশয়, মাটাল সংরক্ষণের অভাবে কমে যাচ্ছে। হরিরামপুর চরাঞ্চলে খাল বিল ডোবায় রয়েছে নানান প্রজাতির স্থানীয় জাতের মাছ তথা বোয়াল, টাকি, টেংরা, মোয়া, গুতুম, রয়না, পুটি, বাইং, ষোল, বাতাসি, নওলা, ইচা, বাইলা ও গোইনা এখন খুবই কম দেখা যায়। অতীতে দেখা যেত মানুষ তাদের লোকায়ত চর্চা দীর্ঘ দিনের স্থানীয় অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান নিজেদের তৈরি করা পলো, উচাজাল, খেওজাল, তুইরাজার, ছিপজাল, দউজাল, চাকজাল, হোসেজাল, দোয়ারী দিয়ে এ সকল মাছ শিকার করত। তবে বর্তমানে স্থানীয় জাতের অনেক মাছ কমে যাচ্ছে। তিনি জানান, সেচ দিয়ে মাছ ধরা, বিষ প্রয়োগ করা, পোনা মাছ ধরা, কারেন্ট জালের ব্যবহার করার কারণে এসব স্থানীয় প্রজাতির মাছ কমে গেছে। উন্মুক্ত জলাশয়গুলোও প্রভাবশালীরা দখল করে সেখানে মাছ চাষ করছেন। ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিশেষ করে জেলেরা বেশি সমস্যাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য প্রান্তিক মানুষগুলো প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
করোনা ভাইরাসের কারণে পুরো বিশ^ আজ থমথমে। শহরে যারা অবস্থান করছেন তারা প্রাকৃতিক সম্পদ স্বল্পতার কারণে নানান সমস্যায় রয়েছেন। ভাইরাস সংক্রমণের রোধের জন্য সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে বাস্তবায়নও করছে। শহর, বন্দরগুলোও লকডাউনের আওতায়। দিন আনে দিন খায়-ধরনের মানুষগুলো কাজের অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন, বিশেষ করে যারা শহরাঞ্চলে রয়েছে। তবে গ্রামাঞ্চলের মানুষগুলো কিন্তু তেমনভাবে সমস্যাগ্রস্ত নয়। কারণ তাদের সামনে প্রকৃতি আছে। এই প্রসঙ্গে হরিরামপুর চরাঞ্চলের কৃষক আতিয়ার রহমান বলেন, ‘চরে আমরা খাদ্য নিয়ে তেমন সমস্যা নাই। আমরা চরে সব ধরনের ফসল চাষ করি, বাড়িতে গরু পালন করি, দুধ মাংস পাই, শাকসবজি চাষ করি, মসলা, ডাল জাতীয় জাতীয় ফসল থেকে শুরু করে অনেক বৈচিত্র্যময় ফসল চাষ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা পূরণ করছি। প্রকৃতির সৃষ্টি মাটি, পানি বাতাস, আলো গাছপালা, পশুপাখি সবই আমাদের উপকারে কাজ করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সকলের দায়িত্ব প্রকৃতিকে টিকে রাখতে সহায়তা করতে হবে। বারসিক এলাকায় প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় জনগোষ্ঠীকে সহায়তা কাজ করে যাচ্ছে। পরিবেশ ও পাখি রক্ষায় তাল, খেজুর, বট, পাইকর, ফলজ, বনজ ও শোভা বর্ধনকারী বৃক্ষ রোপণ করা, নদী খাল বিল জলাশয় পরিস্কার করা ইত্যাদি বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছে।’