গ্রামের মতো শহরেও বিধবা ভাতা চালু করা জরুরি

রাজশাহী থেকে তহুরা খাতুন লিলি ও শহিদুল ইসলাম

দিনে দিনে নগরায়ন বেড়েই চলেছে। নগরে যে তুলনায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই তুলনায় নগরের নাগরিক সুবিধাগুলো সুরক্ষিত হচ্ছেনা। জীবন-জীবীকা, নিরাপত্তা, সুখের আশায় গ্রাম থেকে ছুটে আসা দরিদ্র মানুষগুলো শহরে এসে আবার আরেক ধরনের সমস্যায় পড়েন। নাগরিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন বিভিন্ন সময়। সরকার এই প্রান্তিক মানুষগুলোর জন্য নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। বর্তমান জনবান্ধব সরকার সকল পর্যায়ের প্রান্তিক মানুষের সুযোগ সুবিধাগুলো গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করছেন। সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির মাধ্যমে প্রান্তিক এবং অসহায়, দরিদ্র মানুষের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকেন। এই সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী রাষ্ট্র কর্তৃক দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে আর্থিক বা অন্যকোন সহায়তা দানের ব্যবস্থা। বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের জাতীয় বাজেটের অধীনে একশত পঞ্চাশটিরও বেশি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কর্মসূচি রয়েছে। বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রবীণ প্রতিবন্ধী ভাতাসহ নানা ভাতা দেয়া হচ্ছে।

সরকার গ্রামের বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীদের সেই ভাতার ব্যবস্থা করলেও নিয়মের কারণে তা শহরের নারীগণ পান না। নগরে বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশন এলাকার বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীরা এই ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দীর্ঘ দিন থেকে শহরের স্বামী পরিত্যাক্তা এবং বিধবা প্রান্তিক নারীগণ সংকটের মধ্যে দিন পার করেন। রাজশাহীসহ বাংলাদেশের সিটি কর্পোরেশন এলাকার নারীগণ নিয়মের বা আইনের বাধার কারণে এই ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দীর্ঘ দিন থেকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকার প্রান্তিক নারীগণ এই ভাতা চালু করার দাবি জানিয়ে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে ‘শহরেও বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা চালু’ করার দাবিতে নগরীর শতাধিক বিধবা ও স্বামী নিগ্রহীতা গণ মানববন্ধনের আয়োজন করেন।

এই আয়োজনে সংহতি ও সহযোগিতা করে বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও স্থানীয় তরুণ সংগঠন সমাজ কল্যাণ সংস্থা। সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন সমাজ সেবক দেবাশিষ প্রামাণিক দেবু, মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অঞ্জনা সরকার, বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চল সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম, সমাজ কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক স¤্রাট রায়হান। মানবন্ধনে নিজেদের দাবি তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন -বিধবা ও প্রান্তিক নারী মোসা. সাখি খাতুন, আয়শা খাতুন, আমেনাসহ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। শহরের চকপাড়ার প্রান্তিক ও বিধবা নারী মোসা. সাখি খাতুন বলেন, ‘আমরা গ্রাম থেকে শহরে এসেছি নানা কষ্টের কারণেই, আবার কেউ এই শহরেই জন্মগ্রহণ করে শহরেই মানবেতর জীবনযাপন করছি। স্বামী মারা গেছে অনেক বছর আগে। কোনমতে কষ্টে দিন পার করছি, গ্রামের বিধবা নারীদের জন্য বিধবা ভাতা চালু থাকলেও শহরের নারীদের জন্য সেই সুবিধা নেই। একই রাষ্ট্রে সুবিধার বৈষম্য আমরা চাইনা, শীঘ্রই শহরের নারীদের বিধবা ভাতা চালু করা হোক।’

উল্লেখ্য যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে সরকার প্রথম ১৯৯৮-৯৯ অর্থ বছরে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা কার্যক্রম শুরু করে। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের আর্থ-সামজিক উন্নয়ন ও সামজিক নিরাপত্তা বিধান; পরিবার ও সমাজে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি; আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে তাঁদের মনোবল জোরদার করা; চিকিৎসা সহায়তা ও পুষ্টি সরবরাহ বৃদ্ধিতে আর্থিক সহায়তা প্রদানই এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। ভাতা প্রদানের নিয়মনীতির কারনে এই ভাতা গ্রামের বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তা দুস্থ মহিলাগণ পেলেও শহরের নারীগণ পায়না। শহরের নারীদের এই সুযোগ তৈরী করে আইন পাশ করা এখন সময়ের দাবি।

happy wheels 2

Comments