পানি-বিদ্যুৎ জ্বালানির অপচয় রোধে তারুণ্যের উদ্যোগ
রাজশাহী থেকে শহিদুল ইসলাম
বরেন্দ্র অঞ্চলের পাতালের পানি দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আজ থেকে ৫০ বছর পরে এই অঞ্চলটিতে পানির ভয়াবহ সমস্যা দেখা দিতে পারে। অথচ আমরা কখনো ভাবিনি যে, প্রতিদিন কি পরিমাণ পানি আর বিদ্যুৎ আমরা নষ্ট (অপচয়) করি অবহেলায়। ভবিষ্যতে পানির জন্যে অনেক কষ্ট হতে পারে। আবার আমরা দেখছি, দিনে দিনে প্রাকৃতিক পানির উৎসগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে নানাভাবে। কথাগুলো বলে একটু ভাবুক হয়ে যান রাজশাহীর তানোর উপজেলার গোকুল-মথুরা গ্রামের দশম শ্রেণীর ছাত্রী ইসরাত জাহান।
একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে ইসরাত জাহান প্রথম বুঝতে পারেন যে, তারা কি পরিমাণ পানি ও বিদ্যুৎ এর অপচয় করেন। অনুষ্ঠানে এলাকার বয়োজ্যোষ্ঠ অভিজ্ঞ ব্যক্তি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, নারী পুরুষসহ নানা পেশার মানুষ বরেন্দ্র অঞ্চলের পানি শক্তি এবং বর্তমানের পানি শক্তির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করে। তাদের বক্তব্য শোনার পর ইসরাত জাহানরা অপরাধবোধে ভোগেন যে, তারা না জেনে কতটা পানি ও শক্তি অপচয় করে আসছেন। তাই তারা উদ্যোগ নিতে চান যেন কেউ এভাবে শক্তির অপচয় না করেন। ইসরাত জাহান বলেন, “তাই নিজস্ব তাগিদ থেকেই আমরা উদ্যোগে নেই এই গ্রামের প্রতিটি পরিবার পানি ও বিদ্যুতের যাতে অপচয় না করে। এই ভাবনার ধারাবাহিকতায় আমরা ১৫টি পরিবারের পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহারের উপর একটি নিরিক্ষণ চালাই এবং প্রতিমাসের বিদুৎ এবং পানির ব্যবহারের দিকগুলোর তথ্য সংগ্রহ করি।”
ইসরাত বলেন, “প্রথমে আমরা ১৫ জন শিক্ষার্থী আমাদের মাদ্রাসার সুপার ও বারসিক’র সহযোগিতায় প্রশ্নমালা তৈরি করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবহারের দিকগুলো জানার চেষ্টা করি। আমরা এর নাম দেই “আমার বাড়িতে শক্তি নিরীক্ষা ” এবং আমাদের এই কাজের অভিজ্ঞতা আলোচনার মাধ্যমে গ্রামের আগ্রহী সকলের কাছে তুলে ধরি।” তিনি বলেন, “আমাদের জরিপে উঠে আসে পানি এবং বিদ্যুতের অপচয়ের কারণে আমাদের অনেক আর্থিক ক্ষতিও হয়। আবার পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। একইসাথে এই পানি শক্তির উৎস যেমন নদী, পুকুর, খাল খাড়িগুলোও দিনে দিনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং এলাকার সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের মধ্যে আমরা আমাদের উদ্দেশ্যটি বোঝতে সক্ষম হই।” এই অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা মসজিদ পর্যায়ে শক্তির অপচয়রোধে ক্যাম্পেইন শুরু করেন। তাদের জরিপে বের হয়ে আসে একজন মানুষ সোজা ট্যাব ছেড়ে যদি ওজু করে তাহলে কম পক্ষে ১০ বদনারও বেশি পানি নষ্ট হয় অথচ এক বদনা পানিতেই তার ওযু হয়ে যাওয়ার কথা!
ইসরাত জাহান জানান, তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে শক্তির অপচয়রোধে বিদ্যুত এবং পানির যৌক্তিক ব্যবহার করছেন। নিজেদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি সোলার প্যানেলও লাগিয়েছেন। পাশাপাশি বিদ্যুৎহীন পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ পাইয়ে দিতে বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করছেন এবং করতে সহায়তা করছেন।
ইসরাতের ভাষ্য মতে, তারা একটি তরুণ দল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পানি ও বিদ্যুৎ এর অপচয় রোধ করে মানুষকে সচেতন করতে। তারা মনে করেন, পানির সুস্থ্য ব্যবস্থাপনা শস্যফসলের পাশাপাশি পারিবারিক পর্যায়েও থাকা উচিত। কারণ আধুনিক প্রযুক্তির কারণে হাতের কাছে সুইচ টিপলেই পানি পাওয়া যাচ্ছে। তাই পানির সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকলে বা সঠিক ব্যবহার না করলে পানির অপচয় বেড়ে যাবে। তাই পানি সমস্যাময় বরেন্দ্র অঞ্চলে পারিবারিক পর্যায়েও পানির অপচয়রোধে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন। এছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রাকৃতিক উৎস যেমন- নদী, নালা, খাল খাড়ি, পুকুরগুলো সংরক্ষণে কার্যকর ভূমিকাও পালন করতে হবে।