আমার পুরষ্কার পাওয়া গাছে ফল ধরেছে
তানোর রাজশাহী থেকে মো. শহিদুল ইসলাম শহিদ
২০১৪ সালে পুরষ্কার কারের পাওয়া পেয়ারা গাছটিতে এখন ফল ধরেছে। আনন্দে আত্মহারা মাহফুজ। দীর্ঘ দুই বছর যত্ন ও লালন-পালন করেছেন তিনি পেয়ারা গাছটির! আজ সেই গাছে ফসল দেখে তার ভালো লাগার অনুভুতি প্রকাশের ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। ২০১৪ সালে পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে সে তিনটি গাছের চারা পেয়েছে। তিনটি চারাই সে বাড়ির বসতভিটায় লাগিয়েছে। প্রতিদিন পানি দিয়েছে, আগাছা পরিষ্কার করেছে। স্কুল থেকে ফেরার পর প্রথমেই ওই তিনটি চারা গাছে যায় সে! দেখে গাছগুলো কতটা বেড়ে উঠেছে, গাছে পানি দেওয়ার দরকার কিনা। তবে মাহফুজের বসতভিটা পরিমাণ খুবই কম। নতুন ঘর মেরামত করার জন্য তাই তাকে বাধ্য হয়ে দু’টি চারাগাছ তুলে ফেলতে হয়েছে। সবেধন নীলমণী হিসেবে রয়েছে পেয়ারা গাছটি! এই পেয়ারা গাছকে সে দীর্ঘ দুই বছর রক্ষা করার চেষ্টা করে আসছে। আজ তার পরিশ্রম স্বার্থক হয়েছে। এই গাছে ফল সে নিজে খেয়েছে, বন্ধু ও পাড়াপ্রতিবেশীদের সাথে সহভাগিতা করেছে! এ প্রসঙ্গে মাহফুজ বলে, “আমার পুরুষ্কারের গাছে এখন ফল ধরছে। দু’বছর আগে আমি তিনটি চারা গাছ পেয়েছিলাম। তিনটি গাছই সুন্দরভাবে হয়েছিল। কিন্তু আমাদের বাড়ির জায়গা সংকট থাকার কারণে গত বছর সেই স্থানে আমাদের ঘর তুলতে হয়েছে আর সেই কারণে গাছ দুটি তুলে ফেলতে হয়।” সে আরও বলে, “গাছগুলো তুলে ফেলার সময় আমার চোখে পানি এসেছিল। কারণ গাছগুলো আমি নিজ হাতে রোপণ করেছি. সন্তানের মতো যন্ত করেছি। গাছগুলোর প্রতি আমার ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল। এখন পেয়ারা গাছটি আমার একমাত্র উপহারের স্মৃতি বহন করছে।”
রাজশাহী তানোর উপজেলার যোগীশো গ্রামের বাসিন্দা মাহফুজ। বয়স মাত্র ১৮ বছর। আব্দুল করিম সরকার ডিগ্রী কলেজে বর্তমানে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে সে। ২০১৪ সালে বিশ্ব পরিবেশ দিবস মেলায় অংশগ্রহণ করেন। তখন মাহফুজ স্কলের ছাত্র ছিলো। সেই মেলায় বিভিন্ন ধরনের বীজ, ফল, চারা, বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ ও জৈব সারের স্টল তার চোখে পড়ে। ওই মেলায় পরিবেশ ও প্রতিবেশ ওপর রচনা প্রতিযোগিতায় মাহফুজ একটি রচনা লিখে পুরষ্কৃত হয়। ওই সময় পুরষ্কারের সাথে তাকে তিনটি গাছের চারাও দেওয়া হয়। ওই তিনটি চারা তিনি যত্নসহকারে বসতভিটায় রোপণ করেছে। সন্তানের বৃক্ষপ্রেমী হওয়া প্রসঙ্গে মাহফুজের মা বলেন, “আমার ছেলে এখন কলেজে পড়ে। কলেজ থেকে ফিরে গাছে পানি দেয়া ও গোড়ার মাটি আলগা করার কাজটি সে নিজ হাতে করে থাকে। এই গাছগুলো রোপণের পর থেকে আমি দেখছি আমার ছেলের গাছ লাগানোর ও গাছের পরিচর্যার প্রতি অনেক আগ্রহ বেড়েছে, যা ইতিপূর্বে চোখে পড়েনি। ”
গাছ আমাদের সবার বন্ধু। এই বন্ধুকে জীবনের শুরু বা ছাত্র জীবনেই বরণ করে নিতে হয়। তাহলে বন্ধুত্বের শিকড় মজবুত হয় এবং আজীবন টিকে থাকে। মাহফুজ শিক্ষাজীবন থেকে গাছের প্রতি ভালোবাসা ও মমতা প্রদর্শনের সুযোগ পেয়েছিলেন একটি অনুষ্ঠানের অংশগ্রহণের পর। অথচ নিত্যজীবনে হয়তো তিনি অনেকবার অনেক গাছের সংস্পর্শে এসেছেন কিন্তু এ গাছের প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করতে পারেননি। তাই নতুন প্রজন্মদের মাঝে গাছের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে হবে। যাতে করে তারা গাছের প্রতি যতœবান হয় এবং গাছসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে রক্ষা করার উদ্যোগ নেয়।