আধুনিকতার প্রভাবে বিপন্নের মুখে “মৃৎ শিল্প”
মানিকগঞ্জ থেকে মো. জাকির হোসেন (রাজু)
বহু ঐতিহ্য আর ছোট বড় নানা প্রকার শিল্পে ভরপুর আমাদের এই বাংলাদেশ। শহরে রয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প, মেটাল ওয়ার্কশপের মতো বড় বড় শিল্প। তেমনি গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ছোট বড় অনেক কুটির শিল্প। যেগুলো কিনা আবহমান বাংলার গ্রামীণ ঐতিহ্যের বাহকও বটে। “মৃৎ শিল্প” যার মধ্যে অন্যতম। কুমার পল্লীতে মাটির তৈরি জিনিসগুলোই হচ্ছে “মৃৎ শিল্প” এর ফসল।
আগেকার দিনে দৈনন্দিন সাংসারিক কাজে সিংহ ভাগই মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করা হতো। যেমন ভাত রান্নার হাড়ি, পানির কলস, ভাত খাওয়ার থালা বাসন, মুড়ি ভাজার কাজে ব্যবহৃত হতো ঝানজোর ছাবনা, উনুনের ছাই নিষ্কাশনের কাজে মাটির হাতা, ভাতের মার গালার মাটির খাদা, মাটির ঢাকনা, মাছ ধুয়ার হাতানি, পাতিলসহ আরও অনেক কিছু। এমনকি পানি খাওয়ার সময় ব্যবহার করা হতো মাটির গ্লাস।
কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছুই। আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্রে এসেছে পরিবর্তন। আধুনিক যুগের মানুষ এখন আর মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করে না। মাটির তৈরি জিনিসপত্রের পরিবর্তে সবাই এখন বেছে নিয়েছে রঙ চকচকে ইষ্টিল, কাচ এবং প্লাস্টিক সামগ্রি। যে কারণে বিপন্নতার মুখে পড়েছে, আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্যের অন্যতম বাহক “মৃৎ শিল্প”। অবহেলা ও বাজার সংকোচনের কারণে মৃৎ শিল্পের পেশার সাথে জড়িত কুমাররা পূর্ব পুরুষদের পেশা ছেড়ে জীবিকার তাগিদে যুক্ত হচ্ছে অন্যান্য পেশায়। ফলশ্রুতিতে বিপন্নতার উপর সওয়ার হয়ে, আস্তে আস্তে বিলু্িপ্তর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যে ভরা মৃত শিল্প, যা কিনা কুটির শিল্পের অন্যতম একটি শাখা।
বেতিলা-মিতরা অঞ্চলের পালড়া গ্রামের পাল পাড়ার কুমার পল্লীর কয়েক জন কুমারের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, একটা সময় ছিল যখন কিনা মাটির তৈরি জিনিসপত্রের প্রচুর চাহিদা এবং কদর ছিল। সাংসারিক কাজে সবাই মাটির হাড়ি পাতিল তথা মাটির তৈরী সামগ্রী ব্যবহার করতো। কিন্তু যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথেই বদলে গেছে মানুষের রুচিবোধ এবং চাহিদা। মানুষ এখন আর মাটির তৈরি সামগ্রীর প্রতি আগ্রহী নয়। যে কারণে তারাও বাধ্য হচ্ছেন পূর্ব পূরুষদের পেশা পরিবর্তন করতে এবং ভবিষ্যতের চিন্তায়, নিজেদের সন্তানদের অন্যন্য পেশায় যুক্ত করতে।
এভাবেই আমাদের অজান্তেই হারিয়ে যাচ্ছে “মৃৎ শিল্প”সহ আরও অনেক কুটির শিল্প এবং ঐতিহ্য। আসুন আমরা আমাদের বাঙালির সত্ত্বা এবং আমাদের শিল্প ঐতিহ্য রক্ষায় সচেতন হই।