সাবিনা আক্তারের ব্যবসার গল্প
সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের ঘোপের পাড়া গ্রামের সাবিনা আক্তার (৩৫) একজন উদ্যোগী নারী। বিয়ের পর থেকে দারিদ্র্যতা জয়ের সংগ্রামের যুদ্ধে নামতে হয় তাকে। স্বামী ও তিন সন্তানের সংসার তার। দিনমজুর স্বামীর একার আয়ে সংসারের সকল চাহিদা পূরণ হয় না। এজন্য স্বামীর পাশাপাশি নিজের আয়ের পথ খুঁজতে থাকে। বাড়িতে একটি সেলাই মেশিন ছিল, সেটা থেকে খুব সামান্য কাজ হত। অল্প আয় হলেও তাতে সাবিনার সন্তুষ্টি আসেনি। স্বামীর বসতি ঘরটুকু ছাড়া অতিরিক্ত ভিটা ও জমি নাই তাদের। স্বামী স্ত্রীর আয়ের উপর কোন রকমে সংসার চলে। স্বামী জহুর আলী (৪০) বছরের অধিকাংশ সময় বাইরে দিনমজুরের কাজ করেন।
২০২১ সালে অক্টোবর মাসে নেটজ পার্টনারশিপ ফর ডিভেলপমেন্ট জাস্টিস’র সহযোগিতায় বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প শুরু হলে গাবুরা ইউনিয়নের ঘোপের পাড়া গ্রামে দোবেকী সিএসও দলে যুক্ত হয় সাবিনা আক্তার। যুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক দলীয় আলোচনায় সভায় অংশগ্রহণ করেন। দলে যুক্ত হওয়ার কিছুদিন পরে বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে তার পারিবারিক ও ব্যবসায়িক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। যার প্রেক্ষিতে উৎপাদনশীল হিসেবে সীটকাপড় সহযোগিতা করা হয় তাকে। পরিবেশ প্রকল্প থেকে তাকে একই সাথে একটি কদবেল ও সবেদার চারা ও চারটা হাঁস সহযোগিতা দেওয়া হয়। এরপর বারসিক এর নিয়মিত আলোচনা, প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও সহযোগিতায় তার ক্ষুদ্র ব্যবসাকে বৃহৎ পরিসরে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা করেন।
এ বিষয়ে সাবিনা আক্তার জানালেন, ‘আমি বারসিক থেকে সীটকাপড় নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। আগে থেকেই আমার একটি সেলাইমেশিন ছিল। তেমন কোন কাজ হত না। এখন কাজ বেশি হয়। দুই কারণে মানুষ এখানে আসে। সীট কাপড় কিনতে একইসাথে আমার কাছে পেশাক বানাতে দেয়। সেলাই কাজ ও সীটকাপড় বিক্রি করে মাসে আনুমানিক তিন হাজার টাকা আয় হয়। তাছাড়া আমার বাড়িতে হাঁস মুরগি পালন করে বছরে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা আয় করতে পারি।’
গ্রামের মানুষেরা দূরে বাজারে না গিয়ে বাড়ির পাশে সাবিনা আক্তার এর কাছে একই দামে পছন্দমত সীটকাপড় কিনতে পারছেন। একই সাথে পোশাকগুলো তার কাছ থেকেই তৈরি করতে পারায় তার বিক্রিসহ কাজ বেড়েছে। তার এই আয় থেকে বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসাটি বড় পরিসরে পরিচালনা শুরু করেছেন। কাপড় বিক্রি শেষে টাকা সঞ্চয় করে তিনি স্থানীয় উপজেলার পাইকারী বাজার থেকে কাপড় কিনে আনেন। এভাবেই ঘুরতে থাকে তার ব্যবসার চাকা। এছাড়া পরিবেশ প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি নিয়মিত সঞ্চয় ও এসফোরআই জমা করছেন। এভাবেই সাবিনা আক্তার নিজের ব্যবসাকে আরো বড় করার চিন্তা করছেন।
সাবিনা আক্তার এর মত উপকূলীয় অঞ্চলের নারীরা নিজেদের আগ্রহ ও প্রচেষ্টায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ভিন্ন ভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে নিরলস প্রচেষ্টা করে সফলতার দিকে অগ্রসর হচ্ছেন, যা কিনা সমাজ ও দেশ উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখবে।