সাজ তৈরি করে সংসার চলে যাঁদের
মানিকগঞ্জ থেকে আব্দুর রাজ্জাক
আসছে বৈশাখ, আসছে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা। আর গ্রামীণ মেলায় বিন্নি ছাড়া কল্পনাই করা যায় না! গ্রাম তো বটেই শহরেও মেলার দিন গাভীর দুধ দিয়ে বিন্নি বাতাসা না খেলে কি আর বাঙালির রসনা তুপ্তি মেটে?। গ্রামীণ মেলাকে কেন্দ্র করে বিন্নির সাথে, বড় বাতাসা, ঘোড়া, হাতি, মটুক, পাখি ও নৌকার সাজ ছাড়া যেন চলেই না! আর এ সাজ তৈরি করেই সংসার চালাচ্ছেন মানিকগঞ্জের প্রায় অর্ধশত পরিবার। বৈশাখী মেলা উপলক্ষে সাজ কারিগড়দের সময় কাটছে ব্যস্ততায়।
মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটীর ভাটারা গ্রামের কয়েক বণিক পরিবার প্রায় ১৫০ বছর ধরে বিন্নির সাজ তৈরি করে সংসার চালাচ্ছেন। ঘিওরের পয়লা, সিংগাইরের চান্দহর আর হরিরামপুরের ঝিটকা, কালোই, সরুপাই গ্রামের সাজ তৈরির কারিগড়রদের এখন দম ফেলার সময় নেই। গ্রাম কিংবা মেলার মধ্যে বিন্নির সাথে সাজ যেমন বড় বাতাসা, ঘোরা, হাতি, মটুক, পাখি ও নৌকা প্রয়োজন পড়ে। এ সাজ মানিকগঞ্জ ছাড়াও টাঙ্গাইল, ঢাকার জেলার বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাটুরিয়া উপজেলার ভাটারা গ্রামের শ্যামল, দিলিপ বণিক এ সাজ তৈরিতে মহা ব্যস্ত সময় পার করছেন। সাজ সর্ম্পকে তারা জানান, বিন্নি হচ্ছে কিছুটা মুড়ির মত, বিন্নি খেতে হলে দুধ লাগে আর মিষ্টির জন্য এ সাজের প্রয়োজন পড়ে। সাজ শুধুমাত্র চিনি দিয়ে বানানো হয়। আর বড় বাতাসা বানাতে গেলে চিনির সাথে আখের গুড় লাগে। দিলিপ বণিক আরো জানান, প্রথমে বিশেষভাবে তৈরি করা পাতিলে চিনি জাল করা হয়, চিনি গলে গেলে, সে গরম চিনির পানি, ঘোরা, হাতি, মটুক, পাখি ও নৌকার কাঠের ফর্মায় ডালা হয়। মিনিট ১০ পরেই তা আবার ফ্রেম থেকে খুলে ফেলা হয়। আর তৈরি হয়ে যায় সাজ।
আর কদমা বানাতে গেলে চিনির জাল করে আবার তা ঠান্ডা করে, বিশেষভাবে বড় রশির মত তৈরি করা হয়, পড়ে তা চিকন সুতা দিয়ে ছোট ছোট আকারে কাটা হয়, তখন তৈরি হয়ে যায় কদমা। বৈশাখ মেলা উপলক্ষে প্রায় ৫ প্রকার সাজ তৈরি করা হচ্ছে।
এ সাজ করিগর ভগবত বণিক বলেন, “আমাদের বাপ-দাদারা এ ব্যবসা করতেন, তাতে কম করে হলেও প্রায় ১৫০ বছর ধরে এ ব্যবসা করে আসছি। আমরা বতর্মানে ৫টি পরিবার এ সাজ তৈরি করে আসছি। মানিকগঞ্জের শুধুমাত্র আমরাই এ ব্যবসা করে আসছি।”
দিলিপ বণিক বলেন, গত বছরের পহেলা বৈশাখে আমরা প্রায় ৩০০ মুন সাজ তৈরির অর্ডার পেয়েছিলাম। আমরা প্রতি কেজি সাজ পাইকারী বিক্রি করছি ৭০ টাকা, আর মেলার দিন তারা ১০০-১২০ টাকা কেজি বিক্রি করে থাকেন। এক মণ সাজ তৈরি করতে খরচ হয় ২ হাজার ২ শত টাকা, আর পাইকারী বিক্রি করা যায় ২ হাজার ৮ শত টাকা। বড় বাতাসা ১দিনে ২ মণ তৈরি করা যায়, আর সাজ তেরি করা যায় ৪ মণ পর্যন্ত।
চলতি শীতের মৌসুমে বিজয় মেলাসহ চলছে বিভিন্ন ওরশ ও মেলা। আর এ মেলাকে কেন্দ্র করে বর্তমানে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এ সাজ কিনতে ভীড় করছে পাইকাররা। মেলা শেষ হলে সারাবছর শুধু বাতাসা ও তাল মিস্ত্রি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। মেলার মৌসুম ছাড়া প্রতিটি পরিবার সপ্তাহে ৪-৫ মণ বাতাসা ও মিস্ত্রির চাহিদা থাকে।