কলাগাছের আপদমস্তক উপকারিতায় মোড়া
মানিকগঞ্জ থেকে নীলিমা দাস
“নামটি আমার কলাগাছ- যেথায় সেথায় বাড়ি,
আদর কিবা লাঞ্ছনায় বেঁচে থাকতে পারি।”
ইতিহাস বলে খ্রিষ্টপূর্ব ৮ হাজার বছর আগেও কলাগাছ পাওয়া যেত। পৃথিবীর ১০৭টি দেশে কলাগাছ জন্মায়। কলাগাছ কয়েক প্রকার হয়ে থাকে যেমন সবরি, মদনা, সাগর, আনাজি, বীচি কলা, কবরি কলা প্রভৃতি। কলাগাছের প্রয়োজনীয়তা বললে শেষ হবার নয়। কলাগাছের ফুল, ফল, কান্ড, মোচা সবকিছুই খাওয়া যায়। পাতা ব্যবহার করা হয় বাসন হিসেবে। কলাগাছ হাতির প্রধান খাদ্য। কলা বানর মহারাজের প্রিয় খাদ্য। কলাগাছ না হলে গনেশ ঠাকুরের কলাবৌ হবে কে? কলা ছাড়া পুজোর ঘটটি যেন ভালো লাগে না। পুজোর মধ্যে কলাগাছের মাইজ পাতা না হলে কেমন জানি অসম্পূর্ণ মনে হয়। কলাগাছের ভাদাইল (থোড়) ছারা নিরামিষটিও মজা হয় না। দুধ-ভাতে কলা খেলে পেটটি ভরে যায়।
খাওয়ার পাশাপাশি কলা গাছ দিয়ে বিয়ের মন্ডপ, বিয়ের গেট, কলাগাছের পাতা দিয়ে গ্রাম অঞ্চলে বাড়ির বাউন্ডারি দেওয়া হয়, ছোটছোট ছেলেমেয়েরা কলাপাতাদিয়ে মধুর বাঁশি তৈরি করে, এমনকি হাতের ঘড়ি কিংবা চোখের চশমাও তৈরি করে। শুকনো কলাপাতা জ্বালানি হিসাবে কাজে লাগে। শুকনো কলাাগাছ পুড়িয়ে ছাই করে তার সাথে এঁটেল মাটি মিশিয়ে কাপড়-চোপড়, থালা-বাসন পরিস্কার করতেন নানি-দাদী এমনকি মায়েরাও। আগের মানুষ সোডা বা সাবানের পর্রিবর্তে এগুলো ব্যবহার করতেন। কলা গাছ দিয়ে সওদাগর ভাইয়েরা ভাদ্র মাসের শেষ বৃহস্পতিবারে ভেউরা (ভেলা) বানিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেন। কলা গাছ দিয়ে ভেলা বানিয়ে এ প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্ত ছুটে চলে। কলাগাছকে জড়িয়ে ধরে অনেকে সাঁতার শিখে।
এমনকি কলাগাছ জড়িয়ে রয়েছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে। যেমন কলাগাছ রয়েছে আমাদের দৈনন্দিন উপহাসের উপমা হিসেবে। উদাহরণ হিসেবে কেউ কেউ ব্যঙ্গ করে বলে কাঁচকলা, বা কলাগাছের মত দাঁড়িয়ে আছো কেন? কলার নানাবিধ গুনাবলী সম্পর্কে ভারতীয় পুষ্টিবিদ সন্ধ্যা গুগনানি বলেন, “পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন ‘সি’ ইত্যাদিতে ভরপুর এই ফল। পাশাপাশি ভিটামিন ‘বি’ এবং আয়োডিন, লৌহ, সেলেনিয়াম এবং দস্তা এই খনিজগুলো প্রতিদিন কলা খেলে মিলবে।” বিভিন্ন খাদ্যগুণ এর পাশাপাশি এটি হৃদযন্ত্র, পেট এবং হাড় ভালো রাখে। এমনকি যারা ওজন কমাতে চাচ্ছেন- তারা প্রতিদিন কলা খেতে পারেন। চুলের উজ্জলতা বাড়াতে কলা দই মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। পা ফাঁটা রোধ করতে কলা ও হলুদের মিশ্রণ মাখতে পারেন। কলাগাছের কোন কিছুই উচ্ছিষ্ট নয়। গরু-ছাগল কলার খোসা খেতে ভালোবাসে। কলা গাছ পচে জৈব সার তৈরি হয়। কলা গাছের মধ্যে বাস করা লাল ধরনের কেঁচো; যা কেঁচো সার তৈরি করতে সহায়তা করে।
কলাগাছের জন্য আলাদা কোন জমির প্রয়োজন পরেনা। বাড়ির আনাচে কানাচে কিংবা পতিত জমিতে কলাগাছ ভালোভাবেই জন্মে। পাশাপাশি কলাগাছের জন্য প্রয়োজন নেই আলাদা পরিচর্যার। তাই আমাদের সবার এই মূল্যবান গাছটিকে যত্ন নেয়া জরুরি। প্রতিটি বাড়ির খালি জায়গায় একটি করে পছন্দমত কলাগাছ লাগাই ।