শ্যামনগরে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস পালিত
সাতক্ষীরার থেকে মো. আল ইমরান এবং ফজলুল হক
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস পালিত হয়েছে। সোমবার বেলা ১১টায় উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরিতে সামসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা তারাপদ মুন্ডার সঞ্চালনায় দুই শতাধিক প্রান্তিক নারীর উপস্থিতিতে দিবসটি পালিত হয়। আদিবাদি মুন্ডা সংস্থার সহ-সভাপতি রামপ্রসাদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা এনজিও সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বারসিক কর্মকর্তা মো. আল ইমরান।
বক্তারা অনুষ্ঠানে যৌক্তিক বিষয় নিয়ে বিপ্লবী নারী আন্দোলন, কৃষিতে নারীর অবদান, খাদ্য নিরাপত্তা, সাইক্লোন শেল্টার নারীবান্ধব হোক, গ্রামীণ নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি নিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায়ের নারী শান্তি মুন্ডা বলেন, ‘সরকার আদিবাসীদের বিষয়ে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অবশ্যই আদিবাসীদের সাথে নিয়ে করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করি।’
অনুষ্ঠানে বারসিকের কর্মএলাকার বিভিন্ন প্রাণবৈচিত্র্যসমৃদ্ধ কৃষি বাড়ি নিয়ে বক্তারা আলোচনা করেন। সামসের প্রোগ্রাম অফিসার দিপঙ্কর বিশ্বাস উদহারন টেনে ধুমঘাটের কৃষাণী অল্পনা রানী মিস্ত্রির সফলতার কথা বলেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, রিবের মাঠ গবেষণা সহকারি চৈতণ্য, ফেইথ ইন এ্যাকশনের লিটনসহ সামসের বিভিন্ন কর্মকর্তা কর্মচারী বৃন্দ।
এদিকে গ্রামীণ নারী দিবস ২০১৮ উদযার্পন উপলক্ষে গ্রামীণ নারীদের অংশগ্রহণে কুড়িয়ে পাওয়া অচাষকৃত শাকের রান্না প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ (১৫ অক্টোবর) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রম্নরাজপুর ইউনিয়নের মাছখোলা গ্রামে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের সহযোগিতায় মাছখোলা বেতনা কৃষি নারী সংগঠন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা প্রত্যেক বাড়ির আঙিনা, খাল, বিল, ডুবা নালা, জলাশয় থেকে কুড়িয়ে আনা একটি করে শাক রান্না করেন।
পরে বিচারপ্রক্রিয়ায় রান্না করা শাকের স্বাদ গ্রহণ, কি কি উপকরণ দিয়ে রান্না করা হয়েছে এবং রান্না করা শাকের উপকারিতা কি? এই তিনটা প্রশ্নের ভিত্তিতে কাঁটাকচু রান্না করে ১ম স্থান অধিকার করেছেন ছকিনা খাতুন, কচুশাক রান্না করে ২য় হয়েছেন রোকসানা খাতুন, এবং পেপুল শাক রান্না করে ৩য় হয়েছেন শাহানারা বেগম।
ব্যতিক্রমধর্মী এ প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন মাছখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক গোলাম মোস্তফা ও দৈনিক সুপ্রভাত পত্রিকার সাংবাদিক এস এম নাহিদ হাসান এবং শিক্ষর্থী মুসলিমা খাতুন। পরে বিজয়ীদের মাঝে বিচারক মণ্ডলিরা পুরস্কার বিতরণ করেন।
এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন বারসিকের সহকারী কর্মসুচি কর্মকর্তা গাজী আসাদুল ইসলাম, শিক্ষা সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা টিমের প্রচার সম্পাদক নুরুল হুদা, সদস্য শারমিন আক্তার এবং বারসিকের যুব সংগঠক ফজলুল হক প্রমুখ।
ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিযোগিতার আয়োজন সম্পর্কে মাছখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘গ্রামের নারীদের নিয়ে এমন প্রতিযোগিতা আমি প্রথম দেখলাম, আমি ধন্যবাদ জানাই আয়োজকদের। তিনি আরো বলেন, ‘অংশগ্রহণকারী সকলের রান্না অনেক ভালো হয়েছে, প্রত্যেকে পুরস্কৃত করা উচিত। তবে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মিটাতে আমাদের অচাষকৃত শাকের দিকে নজর দিতে হবে বেশি,আর এটা সংরক্ষণ করতে হবে।’
বারসিক কর্মকর্তা আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া অচাষকৃত শাক হচ্ছে গ্রামীণ জনপদের পুষ্টির অন্যতম উৎস। তাই পুষ্টির উৎস অচাষকৃত উদ্ভিদ বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ এবং ব্যবহারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে এই আয়োজন করা হয়েছে।’