ঐতিহ্যবাহী চাবিজালে মাছ ধরা উৎসব
রাজশাহী শহিদুল ইসলাম শহিদ
আজ রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুল ইউনিয়নের খড়িয়াকান্দি হতে প্রসাসপাড়া খাড়িতে ‘ঐতিহ্যবাহী চাবিজালে মাছ ধরা উৎসব’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রিশিকুল জনসংগঠন ও বারসিক উৎসবটির আয়োজন করে। তিনটি বাঁশের লাঠির মধ্যে ছোট্ট একটি জাল লাগানো উপকরণটির নাম চাবিজাল। গোল একটি চাকের সাথে জালটি যুক্ত করে গোড়ায় সুতা লাগিয়ে হাতে ধরে ছাপিয়ে ছাপিয়ে মাছ ধরে থাকেন। এলাকার মানুষ স্থানীয় উপকরণ দিয়ে নিজে হাতে তৈরি করেছেন জালটি। এই জালের মধ্যে মাছ একবার ঢুকলে নাকি আর বের হতে পারেনা। তাই এলাকার মানুষ এই জালটির নাম চাবিজাল বলে থাকেন। সেটা দিয়ে প্রতি বছর স্থানীয় খাড়িতে দল বেঁধে মাছ সংগ্রহ করেন। স্থানীয় ৪টি জনসংগঠন একত্রিতভাবে এ বিষয়ে এলাকার মানুষের সাথে মতবিনিময় করে। এলাকার মানুষের মতামত ও প্রত্যাশার কারণেই চাবিজালে মাছ ধরা বিষয়টি আজ উৎসবে রূপ নেয়।
সরকার ২০১৭ সালে নভেম্বর মাসে সারাবছর খাড়িতে পানি থাকে এমন স্থান সেই প্রসাদপাড়া গ্রাম থেকে বিল ভর্তি মৌজা পর্যন্ত ইজারা ঘোষণা করে। পাঁচটি ক্রোস ড্যাম নির্মিত প্রায় পাঁচ কিঃ মিঃ খাড়ি, ইজারাটিতে উল্লেখ করা হয়। এলাকার জনসংগঠন ও সকল মানুষ এই ইজারা বন্ধ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে ইজারা বাতিল করেন। আর ঠিক এক বছর পর এলাকার মানুষ সেই খাড়িতেই চাবিজালে মাছ ধরা উৎসব পালন করেন। এই উৎসব প্রতিবছর এই দিনে পালন করবেন বলেও তারা ঘোষণা করেন। সবসময় সেখানে পাওয়া যায় বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির বোয়াল, বাইম, খরি, আইড়, পাতাশি, শোল, টাকি, পুটি, মাগুর শিং, রুই, মৃগেল, কাতলা, আইখড়, ফলি, ময়া, চেংড়ি সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। শুধু মাছ নয় এখানে কুইচা, ব্যাঙ, সাপসহ হাজারো উপকারী পোকার আভাস স্থল। সেই মাছ সকলে ভাগ করে মিলেমিশে খায়, এটি যেন এক প্রকৃতিনির্ভর সামাজিক বন্ধন। বর্ষার শুরুতে দুই পাড়ের বাঁশঝাড়ে হাজার হাজার বক, কক, পানকড়ি পাখি বাসা বাঁধে ও বংশ বিস্তার করে বর্ষা শেষে আবার চলে যায়। সেই সময় খাড়ির পাড় এলাকায় মনোরম এক পরিবেশ তৈরি হয়। এই মনোরম পরিবেশে বছরে আরও একটি উৎসব যোগ হলো ‘চাবিজালে মাছধরা উৎসব।’
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় পল্লী প্রাণি চিকিৎসক মো. হাসান মাহমুদ বলেন, ‘আগামী বছর একই দিনে আমরা এই মাছধরা উৎসব পালন করবো। এলাকার সমস্যা ও সংকট থাকলে আলোচনার মাধ্যমে দিন পরিবর্তন করা হবে। এবার বর্ষা কম তাই খরাতে মাছ তুলনামুলক কম হয়েছে। তাতে কি হয়েছে, আমাদের এই উৎসবটি শুরু হয়েছে তাই আমরা প্রতিবছর একসাথে আনন্দ করবো।’
উক্ত উৎসবে নবীন, প্রবীণ ও যুবকসহ সকল বয়সের মানুষ অংশগ্রহণ করেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিনের নেতৃত্বে শুধু বয়স নয় কৃষক, শিক্ষক, পল্লীচিকিৎসক, ব্যবসায়ী, কবিরাজসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ মাছধরা উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। মাছ ধরা শেষে পরিমাণে বেশি মাছ সংগ্রহ করতে পেরেছেন সেই তিনজনকে ইউপি সদস্য পুরস্কার তুলে দেন এবং বলেন, ‘এখন থেকে প্রতি বছর এই উৎসবটি সকলের অংশগ্রহণে আমরা ধরে রাখবো।’