বালুচরে মিষ্টিকুমড়ার পরীক্ষামূলক চাষাবাদ: আশাবাদী কৃষকেরা
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে মাসুদুর রহমান ও মুকতার হোসেন
আপন গতিশীলতায় নদীর বুকে অথবা মোহনায় পলি জমাট বেঁধে জন্ম নেয় চর। সীমিত ভূ-ভাগের এ দেশে নদীর বুকে জেগে ওঠা চরগুলো প্রায়ই নতুন কৃষিজমি তৈরির সুযোগে করে দেয়। পদ্মা নদীর করালগ্রাসে নিম্নগঙ্গা প্লাবনভূমি কৃষিপরিবেশের অন্তর্গত মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে লেছড়াগঞ্জ, আজিমনগর, সুতালড়ি ও ধুলশুড়া এই চারটি ইউনিয়ন এক সময় পদ্মায় সম্পূর্ণ বিলীন হলেও পরবর্তীতেএ সকল ইউনিয়নগুলো কিছু অংশ নদীর বুকে দ্বীপচর হিসাবে জেগে ওঠে। জেলার হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ, বয়রা ও রামকৃষ্ণপুর এই ৩টি ইউনিয়নে ১০ জন কৃষক বিগত ২০২০ রবি মৌসুমে দ্বীপচরের ৬৫৭ শতক বালুময় জমিতে বারসিক’র কারিগরী সহায়তায় প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক মিষ্টিকুমড়া চাষ করে লাভবান হয়েছেন।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2021/06/202249748_389715092449328_5987292282674342617_n1.jpg)
নদীর ভাঙা-গড়া আর প্লাবনের সাথে চরের অধিবাসীদের জীবন ও আর্থ-সামাজিক অবস্থা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। অবস্থানগতভাবে দ্বীপচরের এই ইউনিয়নগুলো বছরের সব সময়ই পানিবেষ্টিত থাকে এবং খুবই দুর্যোগপ্রবণ। প্রতিবছর এখানে নদীর ভাঙা-গড়ার খেলা চলে। বর্ষায় পানির নীচে চরের অধিকাংশ তলিয়ে যায়। বর্ষা শেষে জেগে ওঠা বালুচর অনেকটা ধু ধু মরুভূমির মতোই দেখায়। বালুচরের এই বিরান পতিত জমিতে সব ফসল চাষাবাদ করা সম্ভব নয়। বিপুল বিস্তৃীর্ণ এই পতিত জমির ব্যবহার বিষয়ে বারসিক স্থানীয় কৃষকদের সাথে তৃণমূল বৈঠকে মতবিনিময় করে। পরবর্তীতে স্থানীয় কৃষকদের আগ্রহের ভিত্তিতে এলাকার বালুচরে মিষ্টিকুমড়ার পরীক্ষণমূলক চাষাবাদে প্রয়োজনীয় তথ্য ও কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করে।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2021/06/157929829_263415315368865_4670579008194960428_n-1024x768.jpg)
বালুচরের সঠিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ ও ব্যবস্থাপনা গ্রহণের ফলে প্রথম পরীক্ষামূলক চাষাবাদেই কৃষকরা যথেষ্ট ভালো ফলাফল পেয়েছেন। ফল ছিদ্রকারী পোকা, মাছি পোকার নিয়ন্ত্রণে তারা ফেরোমেন ফাঁদ ব্যবহার করেছেন। বালুচরে প্রথমবারের মতো মিষ্টিকুমড়া চাষী পাটগ্রামের মাইনুদ্দিন তার ৩৩ শতক জমি তৈরি, পরিবহন, জৈবসার ব্যবস্থাপনা, বালাই ব্যবস্থাপনাসহ মোট খরচ করেছেন ৪ হাজার চারশ’ ৭৫ টাকা। তিনি উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেছেন ৭ হাজার ৮শ’ ২৫ টাকায়। কার্যক্রমে অন্তর্ভূক্ত ১০ জন কৃষক তাদের মোট ৬৫৭ শতাংশ জমিতে ৪৭ হাজার ৬শ’ ৫০ টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে উৎপাদন পেয়েছেন প্রায় ৬ হাজার ২শ’ ৮০ কেজি মিষ্টিকুমড়া যা থেকে সর্বমোট আয় হয়েছে এক লাখ,২৭ হাজার ২শ’ টাকা।
দ্বীপচরবাসীরা তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে নানা ধরনের প্রতিকূলতা ও দুর্যোগ ঝুঁকির সম্মুখীন হন। এরপরও কৃষিকে পুঁজি করেই চলে তাদের জীবন-জীবিকা ও সংগ্রামী জীবন। বালুচরের অনাবাদি জমিতে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর মিষ্টিকুমড়ার চাষাবাদ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ভঙ্গুর পরিবেশে বসবাসকারী মানুষদের আশাবাদী করে তুলেছে।