একুশের চেতনায় আমাদের তরুণ প্রজন্ম
নেত্রকোনা থেকে রুখসানা রুমী
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’। ভাষা শহীদদের স্মরণে একুশের চেতনা বাস্থবায়নের লক্ষ্যে নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার নোয়াদিয়া একতা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ‘ধান-শালিক-নদী-হাওর যুব সংগঠন’র তরুণরা ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে একুশে ফেব্রুয়ারি আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন করেছে সম্প্রতি।
নোয়াদিয়া স্কুলে কোন শহীদ মিনার না থাকায় তারা কলা গাছ দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করে ২১শে ফেব্রুয়ারি ভোর রাতে একুশে ফেব্রুয়ারি প্রভাত ফেরির করে অস্থায়ীভাবে নির্মিত শহীদ মিনারে পুষ্প স্তবক অপর্ণের মাধ্যমে দিবসের কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে একে একে তারা একুশের কবিতা, রচনা, একুশের ইতিহাস, একুশের গান ও অভিনয়ের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি তাৎপর্যপূণ করে তোলে। আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসটি উদ্যাপনের ফলে এলাকার আপমর জনগোষ্ঠী একুশের মাহাত্মও ও একুশের চেতনায় জাগ্রত হয়েছে। এলাকার জনগোষ্ঠী ১৯৫২ সালে ২১ শে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের মাহাত্মভরে স্মরণ করে এবং শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং ভাষা সৈনিকদের অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞান করে।
নোয়াদিয়া স্কুলের শিক্ষক প্রেমানন্দ বিশ্বশর্মা বলেন, ‘যুব সংগঠনের উদ্যোগক্তাদেরকে এ ধরণের মহৎ উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানান। আমরাই একমাত্র জাতি যারা মাতৃভাষাকে প্রতিষ্ঠার জন্য রক্ত দিয়েছি, বাংলা ভাষা পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি পায়। মনের ভাব প্রকাশ করার অন্যতম মাধ্যম ভাষা, মাতৃভাষায় মানুষ তার আবেগ অনুভূতি প্রকাশ করে, তাই এই ভাষাকে জানতে হবে, জানতে হবে ভাষার সঠিক ইতিহাস ও ব্যবহার। তারই লক্ষ্যে একুশের অনুষ্ঠান এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমরা ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের কথা বিনয়ের সাথে স্মরণ করি।’
নোয়াদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বর্ণমালা মিছিল, শুদ্ধ বানান ও শুদ্ধ উচ্চারণ, ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে ধারণা বৃদ্ধিতে আলোচনা, চিত্রাঙ্কন, উপস্থিত বক্তৃতা ও কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। দিনব্যাপী অনুষ্ঠান শেষে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুমা আক্তার বলেন, ‘আমরা খুবই আনন্দিত একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠান এই প্রথম নিজ প্রতিষ্ঠানে করতে পেরে। ছোট ছোট বাচ্চারা একুশ সম্পর্কে, একুশের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পেরেছে। যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাংলা ভাষার সঠিক চর্চা ও মূল্যায়নে উদ্বুদ্ধ করবে। আজকের প্রজন্ম আগামীর ভবিষ্যত, তাই এই প্রজম্মকে নিজ মাতৃভাষার সঠিক চর্চা ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’ উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদির বলেন, ‘এ ধরণের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান থেকে নতুন প্রজন্মের শিশুদের শিক্ষণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। এই অনুষ্ঠানের ফলে আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে জানতে পেরেছে।’
একশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জন্য শহীদ দিবস হলেও বিশ্¦বাসীর জন্য এ দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তাই এ দিনটিতে প্রভাত ফেরী করে শহীদ মিনারে ফুল দিলেই ভাষা শহীদদের প্রতি সন্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হবে না। বাংলা ভাষাকে শুদ্ধভাবে বলা ও লেখার চর্চা করতে হবে। পাশাপাশি অপরাপর ভাষার প্রতি বাংলার ন্যায় সন্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে সকলকে। ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ভাষা শুনে তিরষ্কার করা বা ভেংচি কাটার মত আচরণ থেকে সকলকে বিরত থাকতে হবে, আর তাতেই ভাষা শহীদদের প্রতি সন্মান প্রদর্শন করা হবে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পাবে সত্যিকারের মাহাত্ম।
……..