জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তিতে জেয়ালা গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা
সাতক্ষীরা থেকে ফজলুল হক
‘জেয়ালা গ্রামটি এক সময় ছিল সোনার গ্রাম। গ্রামে যেন সোনা ফলত। এমন কোন কিছু ছিল না যে জেয়ালা গ্রামে হতো না। জেয়ালা গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু দিনে দিনে জলাবদ্ধতা সব কিছু শেষ করে দিয়েছে। বছরের অর্ধেক মাসই থাকে জলাবদ্ধতা।’ উপরোক্ত কথাগুলো বলছিলেন প্রবীণ ব্যক্তি ফকির চাঁদ ঢালী।
সম্প্রতি বারসিক’র সহযোগিতায় সাতক্ষীরা সদরের জেয়ালা গ্রামে জলাবদ্ধতার তথ্য জানা, জানানো এবং সমাধানের উপায় সম্পর্কে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি। আলোচনা সভায় কৃষক-কৃষাণী, শিক্ষার্থী, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ ২৪ জন নারী ও ৩ জন পুরুষ মোট ২৭ জন অংশগ্রহণ করেন।
আলোচনা সভায় প্রবীণ ব্যক্তি ফকির চাঁদ ঢালী বলেন, ‘২০-৩০ বছর আগে কোন জলাবদ্ধতা হতো না ভারী বর্ষণেও। আর এখন অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। যতই দিন যাচ্ছে ততো জলাবদ্ধতা বেশি হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের গ্রামের পাশে ছিল বেতনা নদী আর বিলের মধ্য দিয়ে ছিল খাল। তখন বৃষ্টি হলে পানি খালের ভেতর দিয়ে বেতনা নদীতে যেতো কিন্তু সেটা এখন আর হয় না। বেতনা নদী ও খাল দখল, ঠিকমত পানি প্রবাহ হয় না। পলি পড়ে এলাকা ছাড়া উচু হওয়া, চারিদিকে আটকিয়ে মৎস্যচাষ করার কারণে আজ আমাদের এই দূর্দশা। এই দূর্দশা যেন অভিশাপে পরিণত হয়েছে।’
শিক্ষার্থী কেয়া বলেন, ‘জলাবদ্ধতা বৃদ্ধির কারণে আমাদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বর্ষাকাল আসলেই আমাদের যত চিন্তা, ঠিকমত ফসল চাষ করতে পারে না কৃষকরা, রান্না করা চুলায় পানি ওঠে, গবাদি পশু পাখিরাও চলাচল করতে পারে না, খাদ্যের সংকট হয়, ভালো রাস্তা খারাপ হয়ে যায়, চলাচল করা যায় না, রাস্তায় হাটু পানি থাকে, স্কুল-কলেজে যাওয়া যায় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘অতিরিক্ত জলাবদ্ধতার কারণে টয়লেটগুলোও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে ওঠে, দীর্ঘদিন পানি জমে থাকার ফলে পানিটা নোংরা হয়ে চুলকানী, ঘা পাঁচড়া হয়। সব মিলিয়ে চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে আমাদের জীবনযাত্রায়।’
উপস্থিত সকলে মনে করছেন, জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করতে হলে প্রথমে বেতনা নদী খনন ও দখলমুক্ত করতে হবে। বিলের মধ্যে খালগুলোর ইজারা বাতিল করতে হবে এবং অপরিকল্পিভাবে আটকিয়ে মৎস্য চাষ করা বন্ধ করতে পারলে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পাবে গ্রামবাসীরা।