করোনাভাইরাস ও অনিরাপদ ব্যবসা: শুধু লাভ নয় মানবতাকেও গুরুত্ব দিন
রাজশাহী থেকে শহিদুল ইসলাম
বিশ্বের মধ্যে ভয়ংকর এক আতংকের নাম করোনা ভাইরাস। সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বের প্রায় সকল দেশে কম বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও এর ভয়াবহতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরকারি তথ্য মতে, এখনো করোনা ভাইরাস নিয়ে মৃতের সংখ্যা দুই। বিগত ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ( ডব্লিউএইচও) এর প্রধান ড. ট্রেড্রস আ্যাডহানম গ্রেব্রেইসুস সংবাদ সম্মেলনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আমাদের দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। কিন্তু এক শ্রেণীর মানুষ লাভের আশায় অনিরাপদ ব্যবসার মধ্যে দিয়ে নিজেকেও অনিরাপদ করে তুলছে এবং জনসাধারণের ক্ষতিও করছে। বিভিন্ন সেবাদানকারী এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখনো জনসমাগম করে করেনা ভাইরাস প্রচারণা চালাচ্ছে, যা মোটেও কাম্য নয়। অবশ্যই নিরাপদে থেকে আমাদের সবাইকে সেবাসমূহ দিতে হবে এবং নিতেও হবে।
বাংলাদেশের করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে কিছু ব্যবসার রমরমা অবস্থা। হ্যান্ডসেনিটাইজার তৈরি ও বিক্রি, মুখোস, মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোবসসহ আরো অনেক কিছুর ব্যবসা এখন জমজমাট। এসব ব্যবসাকে কেন্দ্র করে কিছু তরুণসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ যুক্ত হয়েছে। অনেকে কিছু টাকা লাভের কথা ভেবে ছুটছেন নিরাপত্তাহীনতাভাবে। নিজেও নিরাপত্তাহীনভাবে ঘুরছেন আবার এই ব্যবসার সাথে যারা জড়িত তাঁরাও অনিরাপদে এই ব্যবসা করছেন। এই সকল পণ্য নানা হাত ঘুরে চলে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের হাতে। কোন কারণে এই পণ্যের মধ্যে দিয়ে যদি করোনা ভাইরাসের জীবাণু সাধারণ ক্রেতা সাধারণের মধ্যে ডুকে পড়ে তাহলে সেটা কেতাটা ভয়াবহতা ঢেকে আনতে পারে যা কল্পনা করলেও গা শিউড়ে উঠে।
যারা এই ব্যবসা করছেন তাঁরা আসলে কতোটা নিরাপদ। তাঁদের মধ্যেও ছড়াতে পারে এই করোনাভাইরাসের জীবাণু। বাজারগুলোতে গেলে দেখা যাচ্ছে, একজন মানুষ দোকানে পণ্য কেনার সময় নড়েচড়ে ভালোভাবে হাত দিয়ে ধরে দেখে দেখে পণ্য কিনছেন। জানিনা এর মধ্যে যদি কোন ভাইরাস আক্রান্ত মানুষ থেকে থাকে তাহলে কতোটা ভয়াবহতা ডেকে আনছি আমরা নিজেই। ব্যবসায়ী অনেকেই কোন নিরাপত্তার দিকগুলো ব্যবহার করছেন না। যত্রতত্র হাঁচি-কাশি দেয়া হচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির সময় তার নাক মুখ দিয়ে যে জলীয় কণা বা ড্রপলেট বাতাসে বের হয়ে আসে তার মাধ্যমেও কোভিড-১৯ এর জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে।
একজন মাস্ক বিক্রেতার দোকানে ক্রেতাগণ নেড়ে চেড়ে মাস্ক দেখার পড় মাস্কটি কিনে নিচ্ছেন। আমরা জানিনা এর মধ্যে কার হাতে করোনা ভাইরাসের জীবাণু আছে।
কে, কোথায় কিভাবে সবকিছু ধরছি, ছুয়ে দিচ্ছি তার নেই কোন ইয়ত্তা বা হুশ। ঔষধের দোকানে গিয়ে ডেস্কে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। লোহার বা স্টিলের দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকছি। এমন আরো কতো কি।
গবেষণা তথ্য অনুযায়ী, যে সকল তথ্য আমরা জানতে পারি তা হলো- করোনা ভাইরাস মানবদেহের বাইরেও কিছু জিনিসের মধ্যে বেঁচে থাকতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে আরো যেসব করোনাভাইরাস আছে, যেমন সার্স ও মার্স, যেগুলো লোহা, কাঁচ এবং প্লাস্টিকের গায়ে ৯ (নয়) দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। আবার কোনো কোনো ভাইরাস ঠাণ্ডা জায়গায় ২৮ দিনও বেঁচে থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেলথের একজন ভাইরোলজিস্ট নিলৎজে ফান ডোরমালেন তার সহকর্মীদের নিয়ে গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন কোভ-২ বা সার্স ভাইরাস কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে। তাতে দেখা গেছে, কাশি দেওয়ার পর থেকে ড্রপলেটের মধ্যে এই ভাইরাসটি তিন ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। ক্ষুদ্র ড্রপলেটে, যার আকার ১ থেকে ৫ মাইক্রোমিটার (মানুষের চুলের ৩০ গুণ চিকন) সার্স ভাইরাস কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকে।-(সূত্র বিবিসি)।
এখন প্রশ্ন হলো আমরা যারা করোনাভাইরাস কেন্দ্রিক যেসকল ব্যবসাবাণিজ্য করছি স্থানীয়ভাবে সেগুলো কতোটা নিরাপদ। হাটে বাজারে নেই কোন সচেতনতামূলক কার্যক্রম। আবার এই করোনা ভাইরাস কে কেন্দ্র করে পণ্যের দাম রাখা হচ্ছে বেশি, যা মোটেও মানবিক নয়। এই মহামারির সময়ে আসুন আমরা সবাই মানবিক দায়িত্ব পালন করি। শুধু ব্যবসা নয়। এর মধ্যে দিয়ে বৈশ্বিক মহাসংকটে সবাই সবার পাশে এসে দাঁড়াই। লাভকে গুরুত্ব না দিয়ে তাই প্রয়োজন এবং মানবিকতাকে গুরুত্ব দেই। যদি আমরা তা না করি, জেনে রাখবেন সেই ভয়াবহতা আপনাকেও ছাড়বেনা। আসুন আমরা সার্বিক দিক দিয়ে সতর্ক ও সচেতন হই। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে নিজে নিরাপদ থাকি, আরেকজনকেও নিরাপদ রাখি সততার সহিত।