করোনার মহামারিতে ‘হৃদয়ে কেন্দুয়া যুব সংগঠন’র উদ্যোগসমূহ
নেত্রকোনা থেকে রুখসানা রুমী:
প্রকৃতিকে রক্ষা করলে প্রকৃতিই আমাদের রক্ষা করবে। ষাটের দশকের পর থেকে বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ ও উন্নয়নের নামে প্রাণবৈচিত্র্য ও পরিবেশ বিধ্বংসী বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে স্থানীয় উদ্ভিদ, ধান, সবজি, মাছ ও অন্যান্য প্রাণীসহ সকল প্রাণবৈচিত্র্য আজ বিপন্ন। উন্নত কৃষির নামে আমাদের কৃষকদের আপন জ্ঞান অভিজ্ঞতায় গড়া স্বনির্ভর, পরিববেশবান্ধব, কৃষক নিয়ন্ত্রিত কৃষিকে করে তোলা হয়েছে সার ও কীটনাশকসহ রাসায়নিক নির্ভর পরনির্ভরশীল বাণিজ্যিক কৃষিতে। যেখানে কৃষকের দীর্ঘদিনের জ্ঞান অভিজ্ঞতাকে করা হয়েছে অবমূল্যায়ন। ফলে প্রকৃতি আজ হয়ে পড়েছে বিপন্ন প্রায়।
তবে এত বিপন্নতা আর বিনাশকালে এখনও বৈচিত্র্যময় শস্যফসল চাষ করে, পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে স্বনির্ভর কৃষি ব্যবস্থাসহ প্রাণবৈচিত্র্যকে সংরক্ষণের নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া ইউনিয়নের আশুজিয়া গ্রামের কৃষকগণ ও ‘হৃদয় কেন্দুয় যুব সংগঠন’। পড়ালেখার পাশাপাশি নিজেদের সমস্যা, গ্রাম ও এলাকার বিভিন্ন অসংগতি দূরীকরণে সংগঠনের যুবরা কিছু করার তাড়না অনুভব করে। এ তাড়না থেকেই যুবরা করোনাকালীন সময়ে গ্রামের পরিবেশ সুরক্ষায়, গ্রামের দরিদ্র ও অসহায় জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানো, দরিদ্র শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষায় সহায়তা, গ্রামের ছেলে-মেয়েদেরকে বিভিন্ন আসক্তি ও সমাজ বিরোধী কার্যকলাপ থেকে বিরত রাখা ও গ্রামীণ সংস্কৃতি চর্চায় বিভিন্ন আয়োজন করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। করোনাকালীন সময়ে ‘হৃদয়ে কেন্দুয়া যুব সংগঠন’র গৃহীত উদ্যোগসমূহের মধ্যে ছিল সংগঠনের নিজস্ব উদ্যোগে আশুজিয়া গ্রামে ৩০০টি ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ। পবিত্র ঈদুল আযাহা উপলক্ষে আশুজিয়া ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামে ৫০০টি দরিদ্র পরিবারকে চাল, সেমাই, চিনি ও তেল দিয়ে সহযোগিতা করা, গ্রামের ৮০ ভাগ লোককে বিশেষভাবে যুবদেরকে কৃষি কাজের সাথে যুক্ত করে বীজ বিতরণ ও বিনিময়ের আয়োজন করা, গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষা উপকরণ (খাতা, কলম) সহায়তা প্রদান করা, গ্রামের যুবকদেরকে মাদকাসক্তি, মোবাইল আসক্তি ও সমাজ বিরোধী কার্যকলাপ থেকে বিরত রাখতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা পরিচালনা ও গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন করাসহ আরও অনেক সেবামূলক কাজ তারা করেছে।
এ সকল কার্যক্রম ছাড়াও গ্রামের যে সকল রাস্তায় বর্ষাকালে অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে সাধারণ জনগণের পায়ে হেটে, রিকশা, ভ্যান, সাইকেল ও মটর সাইকেলে চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে এমন রাস্তা চিহ্নিত করে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধির (মেম্বার) সহযোগিতা নিয়ে গ্রামের সকল শ্রেণীর জনগোষ্ঠীর স্বেচ্ছাশ্রমে মাটি কেটে ও কালভার্ট স্থাপন করে গ্রামের প্রায় ৫ কিলোমিটার রাস্তা মেরামত করেছে। রাস্তায় ভরাটের জন্য পূর্ব থেকেই নির্ধারিত স্থান থেকে অপেক্ষাকৃত বড় যুবরা মাটি কেটে এবং ছোটরা মাটি বহন করে রাস্তার ভাঙা স্থানগুলোতে নিয়ে ফেলে ভাঙা স্থানগুলোতে মাটি ভরাট করেছে। গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিরা প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ দিয়ে যুবদের গৃহীত এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছে। করোনার মহামারিতে বাড়ির চারপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে যুবদের গৃহীত উদ্যোগ গ্রামের সকল শ্রেণীর ও পেশার লোকদের নিকট দিন দিন বেশ প্রশংসানীয় হয়ে উঠেছে।
আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের নিজ নিজ প্রাকৃতিক জগতকে ভালোবাসতে, প্রাকৃতিক উপাদানগুলো রক্ষা করতে, প্রকৃতির সাথে যে মানুষের নির্ভরশীলতা আছে তা বুঝতে হবে, তবেই প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানের সুরক্ষার উদ্যোগ সাফল্য পাবে।