কৃষকদের অভিজ্ঞতা যুবকদের সমৃদ্ধ করবে
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে মুকতার হোসেন
হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে পাটগ্রাম চরে হরিরামপুর যুব টিমের সদস্য ও মানিকগঞ্জ সৃজন ওপেন রোভার স্কাউট গ্রæপের আয়োজনে “জলবায়ু পরিবর্তন (বন্যা) মোকাবেলায় চরাঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকায়নের অভিযোজন কৌশল অভিজ্ঞতা বিনিময় সফর, তালবীজ বপন, বটগাছের চারা রোপন এবং স্থানীয় কৃষক সংগঠনের সাথে মতবিনিময় সভায় ২৫ জন তরুন উদ্যোগী যুবকরা অংশগ্রহন করেন। সহযোগিতায় বারসিক হরিরাম পুর রিসোর্স সেন্টার ও লেছড়াগঞ্জ চর উন্নয়ন কৃষক সংগঠন।
মানিকগঞ্জ হরিরামপুর উপজেলা লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়ন পদ্মা নদী বেষ্টিত এলাকা। যার উত্তরে রয়েছে ঘিওর, পশ্চিমে শিবালয়, দক্ষিনে ফরিদপুর জেলা ও পূর্বে ঢাকা ও নবাবগঞ্জ উপজেলা। হরিরামপুর চরাঞ্চল নিচু হওয়ার কারনে প্রতি বছর কম বেশি বন্যার পানি প্রবেশ করে। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারনে কোন বছর বেশি আবার কোন বছর কম পানি হয়। এছাড়াও আগাম বন্যার কারনে কৃষকদের নষ্ট হয় জমির ফসল, গাছপালা, রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোগত ও পরিবেশের বিপর্যয় ঘটে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারনে প্রতিনিয়তই হরিরামপুর চরবাসীর মানুষের পরিববর্তিত পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে তাদের ভিন্ন ভিন্ন অভিযোজন কৌশল গ্রহনের মাধ্যমে তাদের জীবন জীবিকায়ন করতে হয়। হরিরামপুর লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের পাটগ্রামচরটি প্রায় ৩০ বছর ধরে বসতি গড়ে উঠেছে। চরাঞ্চলে বসবাস করে দীর্ঘ দিনের স্থানীয় মানুষের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও নিজেদের র্চ্চাকে কাজে লাগিয়ে চরের মানুষ তাদের জীবিকায়ন করে থাকেন।
চরাঞ্চলের মানুষের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তরুন যুবকরা নিজেদর সমৃদ্ধ করতে চায়। মানিকগঞ্জ সৃজন ওপেন রোভার স্কাউট গ্রæপের সদস্য ও লেছড়াগঞ্জ চর উন্নয়ন কৃষক উন্নয়ন সংগঠনের সদস্যদের উদ্যোগে পাটগ্রামচর হরিনাঘাট থেকে পাটগ্রামচর বাজার পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশে বজ্রপাত মোকাবেলা ও পাখির খাদ্য তৈরিতে একশত তালবীজ বপন করেন। চরের বৈচিত্র্যময় ফসল চাষের মধ্যে রয়েছে বন্যা মোকাবেলায় পরাঙ্গি আউশ ধানের চাষ। পাটগ্রামচরের কৃষক সিদ্দিক হোসেন যুবকদের উদ্দেশ্য বলেন, আপনাগো শেহার সময় লেহা পড়ার পাশাপাশি চরের মানুষের কাছে আইছেন আমরা অনেক খুশি হইছি। আমরা চরে থাকি কৃষি কাজ করি চরে ধান, গম, কালাই, শাক সবজি চাষ এবং গরু ছাগল, ভেড়ি বরহি পালন করে আমাগো সংসার চলে। এ বছর দেরিতে পানি আসার কারনে আমরা আউশ ধান কাটতে পারছি। এ বছর আমাদের ফলনও ভাল পাইচি।
লেছড়াগঞ্জ চরউন্নয়ন কৃষক সংগঠনের সদস্যদের সাথে দুর্যোগ মোকাবেলা, চরের ফসল বৈচিত্র্যময় ফসল চাষ, স্থানীয় জনসংগঠনের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং অভিযোজন বিষয়ক মতবিনিময় সভায় যুবকরা অংশগ্রহন করেন। লেছড়াগঞ্জ চরউন্নয়ন কৃষক সংগঠনের সভাপতি হাজেরা বেগম বলেন, আমরা নিজেরা উদ্যোগি হয়ে কৃষক সংগঠন গড়ে তুলেছি। সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে মাসিক সভা করার মাধ্যমে আমাদের সমস্যা চিহ্নিত করে নিজেরা স্থানীয়ভাবে অংশগ্রহন মুলক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করি। বারসিক আমাদের সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
সংগঠনের উদ্যোগগুলো তুলে ধরে হাজেরা বলেন, আমরা একত্রিত হয়ে একটি বীজ বাড়ী তৈরি করেছি, সেখানে আমরা বীজ রাখি এবং সদস্য ও গ্রামের মানুষের মধ্যে বীজ বিনিময় করে থাকি। সংগঠনের উদ্যোগে একটি পুকুর খনন করেছি যা এলাকার সকল মানুষ ব্যবহার করতে পারছে। বন্যা মোকাবেলায় বিভিন্ন ফসল,বাড়িতে বাড়িতে শাক-সবজি করি, ঘরে ঘরে আমরা বীজ রাখি, কৃষকদের পরামর্শ দেই নেই। বন্যা মোকাবেলায় লতা জাতীয় সবজি বীজ মাটির পাত্রে রাখি পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে আমরা লাগিয়ে দেই তাড়াতাড়ি ফলন পাই। বসতবাড়িতে হাঁসমুরগি পালন, উচু ভিটায় মরিচ, পতিত ছায়াযুক্ত জায়গায় আদা-হলুদ, চাষ সাজনা গাছ রোপন, বাঁশ রোপন, বীজ মেলা, অচাষকৃত শাকের মেলা সহ ভিন্ন কার্যক্রম করে থাকি।
কৃষক সংগঠনের সাথে মতবিনিয় সভায় আলোচনায় অংশগ্রহন করেন, মানিকগঞ্জ সৃজন ওপেন রোভার স্কাউট গ্রæপের আর এম মিজানুর রহমান (রিদয়), সোহাগ বিশ^াস, সাব্বির বিশ^াস, কৃষক সংগঠনের সদস্য শারমিন আক্তার এবং বারসিক প্রোগ্রাম অফিসার মুকতার হোসেন। আলোচকরা বক্তৃতায় বলেন, চরের মানুষের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে যে শিক্ষা গ্রহন করলাম। চরবাসীর স্থানীয় সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে টিকে থাকার যে কৌশল অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে তা অবশ্যই যুবকদের সমৃদ্ধ করতে সহায়ক হবে। অভিজ্ঞতা বিনিময় সফরে অংশগ্রহনকারি যুবকরা ভিলেজ ষ্টাডি এর মাধ্যমে গ্রামের প্রাণ-প্রকৃতি, পুকুর, নদী, খাল বিল, জলাশয়, শশ্য বিন্যাস, চরের মানুষের খাদ্য ব্যবস্থা, শিক্ষা চিকিৎসা, বাজার ব্যবস্থা সহ চরের মানুষের জীবকায়নের বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করেন।