মোশরফ হোসেনের কৃষিবাড়ি
কলমাকান্দা নেত্রকোনা থেকে মুন্না রংদী
কলমাকান্দা উপজেলার লেঙ্গুরা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা ফুলবাড়ী গ্রামে বাস করেন মোশারফ হোসেন। যিনি একজন যুব কৃষক এবং শতবাড়ীল মডেল এর একজন সদস্য। ছোট বেলা থেকেই কৃষি কাজের সাথে জড়িত তিনি। ছোটকাল থেকেই বাবার সাথে কৃষি কাজের হাতেখড়ি হয় তার। পারিবারিক সমস্যার কারণে বেশিদূর লেখাপাড়া করতে পারেননি। যখন অষ্টম শ্রেণীতে লেখাপড়া করতেন তখন তার বাবা মারা যান। এরপর থেকে আর লেখাপড়া করতে পারলেন না। বাধ্য হয়ে সংসারের হাল ধরতে হল তাকে। ৯ সদস্যের সংসারের সকল দায়িত্ব তিনি ছোট বেলা থেকে এখন পর্যন্ত পালন করে আসছেন।
তার পরিবারের মূল আয়ের উৎস হল কৃষি। সারাবছর ধাপে ধাপে বিভিন্ন ধরণের শাকসব্জি চাষ করে বাজারে বিক্রি করে তার সংসার চালাতে হয়। শাকসব্জিগুলোর মধ্যে লালশাক, ডাটাশাক, পুইশাক, মূলা, বেগুন, মরিচ, ঢেড়স, শসা, ঝিঙ্গা, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, করলা, কুমড়া, লাউ, শীম, আলু ইত্যঅদি। বাড়ির সামনে ৩২ শতাংশ জমিতে তিনি এসব শাকসব্জি উৎপাদন করেন। ধান আবাদ করার মত ৯৬ শতাংশ জমি নিজস্ব ও ৯৬ শতাংশ জমি বন্ধক নেওয়া। এই জমিতে আমন ও বোর মৌসুমে ধান চাষ করে সারা বছরের খোরাক হয়ে যায়।
কৃষি কাজ করার জন্য তিনি জৈব সার/গোবর ব্যবহার করেন। তিনি গ্রামের বিভিন্ন জনের কাছ থেকে গোবর কিনে সেটা দিয়ে শাকসব্জি চাষ করেন। এ বছর তিনি ৫ হাজার টাকার গোবর ক্রয় করেছেন। কৃষি ক্ষেত্রে দেখা দেয় নানান রোগবালাই। এসব রোগবালাই দূর করার জন্য জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে থাকেন। পাশপাশি বারসিক এর কর্মী ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তিনি এ বছর কিছু সব্জি বীজ সহযোগিতা পান।
এ বছর তিনি ২৪ শতাংশ জমিতে করলা চাষ করে ২৫ হাজার টাকার আয় করেন। শসা বিক্রি করেন আয় করেন ১২ হাজার টাকা এবং কচু ও লতা বিক্রি করে এ পর্যন্ত আয় করেছেন ৪ হাজার টাকা। এখনো জমি যে পরিমাণ কচু ও লতা আছে তাকে আরো অনেক টাকার বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান। কচু চাষে লাভ বেশি বলে জানান। তাই আগামীতে বেশি পরিমাণে কচু চাষ করবেন বলে জানিয়েছেন।
সব্জি চাষ ছাড়াও বাগানের চারপাশে বয়েছে সারিবদ্ধভাবে বৈচিত্রময় ৫ জাতের কলার গাছ। সেখান থেকেও তিনি ভালো টাকা আয় করেন। কলার ছরি বিক্রি করেন এ পর্যন্ত ৩ হাজার টাকা আয় করেছেন তিনি। দীর্ঘদিনের কৃষি অভিজ্ঞতা থাকার কারণে যারা নতুন চাষী তারা তার কাছ থেকে কৃষি বিষয়ে বিভিন্ন ধরণের যুক্তি পরামর্শ নিতে আসেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি যা জানি অন্যের কাছে বললে যদি তার উপকার হয় তাহলে সমস্য কি? আমার একার বাগান ভালো থাকলে তো হবে না। আশপাশের সবার বাগান ভাল থাকলে আমার বাগানও ভালো থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগে আমিসহ কয়েকজন কৃষি কাজ করতো তখন বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হতো। কিন্তু এখন মোটামুটি অনেকজন করলা, চিচিঙ্গা, কুমড়ার বাগান করেন। ফলে পাইকার বাগানে এসে সব্জি কিনে নিয়ে যায়। এতে করে আমাদের বহন খরচ বাঁচে আর বাগানের সব ফল একসাথে বিক্রি করতে পারি।’