কষ্ট হলেও মানুষকে ভালো জিনিস খাওয়াতে পারছি
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে মো. রঞ্জু আকন্দ
খাদ্যে বিষক্রিয়া আর ভেজাল আমাদের দেশের এখন একটি নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। কিছু সংখ্যক অসাধু মানুষ ফলমূল, সবজি, মাছসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে ভেজাল মিশ্রণ করে সামান্য কিছু লাভের আশায়। কিন্তু সে জানেনা যে একদিন তার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। এই ভেজাল প্রবণতার বাইরেও অনেক মানুষ গ্রাম-গঞ্জে কাজ করে যাচ্ছে। এমনই একজন মানুষ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার কসবা ইউনিয়নের খড়িবোনা গ্রামের মো. নূরূল ইসলাম (৪০)। যিনি স্থানীয় প্রযুক্তিতে কলা পাকিয়ে থাকেন কোন ধরণের রাসায়নিক সার বা বিষ প্রয়োগ না করে।
কিছু মানুষ থাকে যারা দেশ ও মানুষের মঙ্গলের কথা চিন্তা করেন সব সময় এবং তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন নিজেদের কাজের মাধ্যমে। নুরুল ইসলাম বাবার কাছ থেকেই কলা পাকানো কাজ শিখেছিল কিন্তু তার বাবাও রাসায়নিক ব্যবহার করে কলা পাকাতো। কিন্তু নুরুল ইসলাম সে পথে যায়নি। বেছে নিয়েছেন মানুষের কল্যাণের পথ।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের কাছে কলা অন্যতম পুষ্টির উৎস বলে বিবেচিত। তবে বর্তমানে রাসায়নিক দিয়ে পাঁকানো কলায় বাজার সয়লাব যা স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ রকম ক্ষতিকর। আমি শিবগঞ্জ থেকে পরিপক্ক কলা সংগ্রহ করে খড়িবোনা গ্রামে নিয়ে এসে নিজস্ব পদ্ধতিতে পাঁকাই যাতে কোন রকম রাসায়নিক প্রয়োগ করি না। প্রতি সপ্তাহে তিন দিন কলা পাঁকানোর কাজ করি এবং বাকি সময় তা নিজেই কসবা, কালোইর, আধুইর, গোলাবাড়ি, চন্দ্রনা, রহনপুর, গোমস্তাপুর বাজারে বিক্রি করি।”
কিভাবে এই কলা পাঁকান প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “প্রথমে পরিপক্ক কলাগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে আসার পরে সেগুলো ছায়াতে রেখে বাতসের সাহায্যে শুকিয়ে নেই। এরপর সেগুলাকে ঘরের মধ্য দড়ির সাহায্যে টাঁঙিয়ে ও সারিবদ্ধ করে সাজিয়ে দেই।” তিনি আরও বলেন, “এরপর দুইটি কেরোসিন চালিত স্টোভ জ্বালিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়া দিই। দরজা বায়ুরোধী করার জন্য মাটির প্রলেপ দেওয়া দিই। মাটির প্রলেপ দেওয়ার কাজ শেষ হলে ২০-২৫ মিনিট পর স্টোভগুলো বন্ধ হয়ে যায়। স্টোভ জলার ফলে ঘর একটি নিদিষ্ট মাত্রায় গরম হয়ে যায় যা থাকে প্রায় ২৪ ঘণ্টা। এই পুরো ২৪ ঘণ্টা পর কলা নিজে থেকে নরম ও কিছুটা হলুদ রঙ ধারণ করে। এরপর দরজা খুলে ৪-৫ ঘন্টা রাখলে তা বাজারজাত করার উপযোগী হয়ে যায়।”
এ প্রসঙ্গে মো. নূরূল ইসলাম আরো বলেন বলেন, “প্রথমেরদিকে আমি এই পদ্ধতিতে কলা পাঁকাতে পারলেও ভালো রঙ না আসার কারণে ভালো বাজার পেতাম না। কিন্তু আমার খরচ কম হত বলে তখন পুষিয়ে যেত। এখন আমার এ পদ্ধতির কথা বিভিন্ন মানুষ জানার ফলে কিছুটা লাভ হচ্ছে। আমার একটু কষ্ট হলেও মানুষকে ভালো জিনিস খাওয়াতে পারছি বলে নিজের কাছেই ভালো লাগে।”
নিজের প্রচেষ্টা, দায়িত্ব আর দায়বদ্ধতার নজির রেখে চলেছে এমন অনেক সফল মানুষের গল্পই আমাদের সমাজে আছে । এই মানুষগুলোর জন্যই সমাজটা সুন্দর আর নান্দনিক।