পরিবারে নিজেদের অবস্থানের পরিবর্তন করেছেন যেভাবে…

নেত্রকোনা থেকে হেপী রায়
মানুষ স্বপ্ন দেখে এবং ধীরে ধীরে সেই স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যায়। স্বপ্ন পূরণ করতে লাগে অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর একটু সহযোগিতা। সেভাবেই এগিয়ে গেছেন ‘মিলেমিশে কাজ করি’ কৃষাণী সংগঠনের সদস্যরা।
২০১৮ সালের শুরুর দিকে ১৫জন সদস্য নিয়ে লক্ষীগঞ্জ ইউনিয়নের দরুন হাসামপুর গ্রামে উক্ত সংগঠনটি গড়ে উঠে। এই সংগঠন গড়ে উঠার মূল উদ্যেশ্য ছিল নারীরা যেন তাঁদের পরিবারে অবস্থান মজবুত করতে পারেন এবং পাশাপাশি বীজের প্রতি নিজেদের অধিকার টিকিয়ে রাখতে পারেন।


অন্যান্য গ্রামের মতো এই গ্রামেও একক আলোচনা, পরিবার ভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ ইত্যাদির আয়োজন করা হতো। সেই আলোচনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৫ জন নারী একত্রিত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। তাঁদের সেই ইচ্ছার প্রতিচ্ছবি হচ্ছে আজকের এই সংগঠন। সংগঠিত হওয়ার পর তাঁরা প্রথম চিহ্নিত করেন তাঁদের বীজের সমস্যা। কারণ গ্রামে সব্জি চাষ হলেও তা ছিল বাজারের বীজ। কৃষাণীরা নিজেদের ইচ্ছেমতো সব্জি চাষ ও বীজ রাখতে পারতেন না। তাই বারসিক থেকে কিছু স্থানীয় বীজ সংগ্রহ করে তাঁদের সহযোগিতা করা হয়েছিল। সেই থেকেই তাঁরা নিজেদের আঙিনায় নানা ধরণের সব্জি চাষ শুরু করলেন।


এখন গ্রামের যেদিকে তাকানো যায়, সেদিকেই চোখে পড়ে শুধু সবুজ আর সবুজ। প্রতিটি বাড়ির উঠানের মাচায় শোভা পায় চালকুমড়া, ঝিঙ্গে, চিচিঙ্গা, পুঁইশাক, ডাটা আরো অনেক সব্জি। এই সব্জি কৃষাণীরা বাড়িতে থেকেই বিক্রি করতে পারেন। বিক্রির টাকা তাঁরা নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী জিনিসপত্র কেনাকাটা করেন। তাছাড়া ছেলেমেয়েদের প্রয়োজন মেটানো, সংসারের খুঁটিনাটি জিনিসও কিনতে পারেন। আত্মীয়দের মাঝেও বিতরণ করেন।


সংগঠনের নারীরা এখন নিজেদের প্রয়োজনে বাজারে যেতে পারেন। পছন্দমতো কেনাকাটা করতে পারেন। আগে তাঁরা বাড়ির বাইরে তেমন বের হতে পারতেন না। নিজেদের প্রয়োজনে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ, সুযোগ সুবিধা আদায় করতে পারেন। করোনাকালীন সময়ে পরিষদে যোগাযোগের মাধ্যমে বিভন্ন ধরণের উপকরণ সহযোগিতা আদায় করেছেন।


নিজের বাড়ির আঙিনায় সব্জি চাষ ছাড়াও প্রাণিসম্পদ পালন শুরু করেছেন। শুধু বিক্রি নয় এসব প্রাণিসম্পদ তাঁদের পরিবারের পুষ্টির চাহিদাও পূরণ করে। অচাষকৃত উদ্বিদের ব্যবহার ও সংরক্ষণ করতে শিখেছেন তাঁরা। নিজের আঙিনায় বউত্তা শাকের চাষ করাসহ অন্যান্য শাক সংগ্রহ করে খেয়ে থাকেন।


প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে নিজেদের আঙিনায় বিভিন্ন ধরণের ফলজ, ঔষধি গাছের চারা রোপণ করেন। খাদ্যাভাসেও এসেছে তাঁদের পরিবর্তন। শাকসব্জি, মাছ, মাংস, ফল ইত্যাদি আছে তাঁদের খাবারের তালিকায়। পরিবারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে তাঁরা এখন মতামত দিতে পারেন। পুরুষ সদস্যরাসহ গ্রামের অনেকেই তাঁদের মূল্যায়ন করেন। তাঁরা নিজেরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি হয়েছেন। যে কারণে গ্রামের দরিদ্র পরিবারে বিভিন্ন সময়ে নানা ধরণের সহযোগিতা করতে পারেন। বৈচিত্র্যময় সব্জি চাষ ও বিভিন্ন কৃষিজ পণ্য উৎপাদন, বিক্রি করে উক্ত সংগঠনের নারীগণ এখন অনেক সহজ সরল জীবনযাপন করছেন। পরিবারে বিভিন্ন অবদানসহ গ্রামবাসীদেরকেও সহযোগিতা করছেন।

happy wheels 2

Comments