সাম্প্রতিক পোস্ট

কাগজের ঠোঙ্গায় স্বপ্ন দেখে গৌরি মন্ডল

কলমাকান্দা নেত্রকোনা থেকে গুঞ্জন রেমা
নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের নলছাপ্রা গ্রামে বাস করেন শ্রীমতি গৌরি মন্ডল। পেশায় একজন গৃহিনী। স্বামী-স্ত্রী ও ২ছেলে নিয়ে তাঁর সংসার। তাঁর স্বামী পেশায় একজন কাঠ মিস্ত্রি। বড় ছেলে ঢাকায় একটি কোম্পানিতে কাজ করেন। ছোট ছেলে ডিগ্রিতে লেখাপড়া করছেন। সহায় সম্পত্তি বলতে তার স্বামীর পৈত্রিক ভিটা আছে। এখানেই দুইটি ঘর তৈরি করে বাস করেন গৌরি মন্ডল। তবে গত বছর সরকারি আবাসন প্রকল্পের একটি ঘর সহযোগিতা পেয়েছেন। একসময় একটি বিদ্যালয়ে খন্ডকালীন চাকুরী করতেন। কিন্তু করোনার কারণে সে চাকুরি হারিয়েছেন।


বাজার থেকে প্রতিদিন যে পরিমাণে পলিথিন বাড়িতে নিয়ে আসা হচ্ছে সেটির কারণে চারপাশ দূষিত হচ্ছে। প্রতিদিন কম করে হলেও প্রতিটি পরিবারে ৩/৪টি পলিথিন ব্যাগ বাড়িতে নিয়ে আসা হচ্ছে। সেটি আবার যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হচ্ছে। ফলে আমাদের পরিবেশ ও মাটি উভয়ই দূষণ হচ্ছে। মাটির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। সেসব পলিথিন আগুনে পুড়ালে বায়ু দূষণ হচ্ছে।


পলিথিন দূষণ থেকে পরিবেশ রক্ষার জন্য ছোট্ট উদ্যোগ হিসেবে ২০২১ সালের প্রথম দিকে বারসিক’র আয়োজনে কাগজের ঠোঙ্গা তৈরির একটি প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয় নলছাপ্রা গ্রামে। ৩০ জন প্রশিক্ষণার্থীর মধ্যে শিউলি কস্তা, রেখা রিছিল ও গৌরি মন্ডল স্থানীয় বাজারে দোকানদের কাছে এসব কাগজের ঠোঙ্গা তৈরি করে বিক্রি করতেন। উপজেলা প্রশাসনের তত্ত¡বধানের এ সময় পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। যার কারণে কাগজের ঠোঙ্গার চাহিদাও বেশ ভালো ছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে পলিথিনের ব্যবহার আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এসব কাগজের ঠোঙ্গার চাহিদাও কমে যায়। শিউলি কস্তা ও রেখা রিছিল কাগজের ঠোঙ্গা তৈরির ছেড়ে দেন। কিন্তু হাল ছাড়েন নি গৌরি মন্ডল।


তিনি কাগজের ঠোঙ্গা তৈরি করে বিক্রি করার জন্য বাজার খোঁজতে থাকেন। একদিন এক ব্যবসায়ী সাথে পরিচয় হয়্ যে একদিনে ৫ হাজার টাকার কাগজের ঠোঙ্গা নিয়ে যান তার কাছ থেকে। ওই ব্যবসায়ী মাঝেমধ্যে ঘরে এসে এই কাগজের ঠোঙ্গা কিনে নিয়ে যান। বাজারজাত করার জন্য গৌরি মন্ডলের বাবার বাড়ি ময়মনসিংহ শহরে যোগাযোগ করেন। এরপর থেকে ময়মনসিংহে তাঁর বাবার বাড়িতে বেড়াতে গেলে বস্তা ভরে নিয়ে যান কাগজের ঠোঙ্গা। সেখানে নাকি এ কাগজের ঠোঙ্গার বেশ চাহিদা আছে। তাই বস্তা ভরে নিয়ে ময়মনসিংহের বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করেন গৌরি মন্ডল। কিন্তু স্থানীয় বাজারে বা উপজেলা শহরে যদি বিক্রি করা যেত তবে ভালো হতে বলে জানান তিনি। বড় সাইজের কাগজের ঠোঙ্গা বিক্রি করেন প্রতি পিস ৬০ পয়সা করে, মাঝারী গুলো ৫০-৪০ পয়সা প্রতি পিস আর ছোট গুলি ৩০-২৫ পয়সা প্রতি। কাগজ সংগ্রহ করেন গ্রাম থেকেই। পুরনো বই খাতা প্রতি কেজিপ্রতি ৬০ টাকা দরে কিনে তৈরি করেন এসব ঠোঙ্গা। ১ কেজি কাগজে তৈরি করা যায় বড় সাইজের ঠোঙ্গা ২৫০টি, মাঝারী সাইজের ৩৫০টি, ছোট সাইজের ৫৫০টি। প্রতিদিন ইচ্ছা করলে ৫০০টি বা তারও বেশি তৈরি করা সম্ভব বলে জানান তিনি। পলিথিনের ব্যাপক ব্যবহারের কারণে কাগজের ঠোঙ্গার চাহিদা কম বলে জানান তিনি। তারপরও এসব ঠোঙ্গা তৈরি করে জমিয়ে রাখেন সময়মত তা ময়মনসিংহে গিয়ে বিক্রি করেন। ফলের দোকান, ঔষধের দোকান ও বাদামের দোকানে এসব ঠোঙ্গার প্রচলন আছে।


গৌরি মন্ডল পুরনো কাগজের ঠোঙ্গা তৈরি ও বিক্রি করে কিছুটা হলেও আর্থিকভাবে আয় করছেন। তিনি বলেন, ‘যখন এ কাজ শুরু করেছিলাম তখন বাজারে পলিথিন ব্যবহারে প্রশাসন অনেক সোচ্চার ছিলো। অনেক দোকানদারকে জরিমানা করেছিল যার ফলে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার কমে গিয়েছিল এবং ওই সময় ভালো টাকা আয় করেছিলাম কাগজের ঠোঙ্গা বিক্রি করে। কিন্তু এখন স্থানীয় বাজারে এসব ঠোঙ্গা নিতে চায় না। তবে যদি ময়নসিংহ শহরে থেকে এ কাজ করতে পারতাম তবে ভাল টাকা আয় করতে পারতাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘তারপরও ঘরে বসে যা পারছি তৈরি করে বিক্রি করছি। হাতের কাজ জানা থাকলে কোন সমস্যায় পড়তে হয় না। আমি কৃতজ্ঞ বারসিক’র কাছে। কারণ এ কাজটি আমি বারসিক’র কাছ থেকেই হাতে কলমে শিখেছিলাম। পলিথিন পরিবেশবান্ধব না কিন্তু আমার তৈরি করা এসব কাগজের ঠোঙ্গা পরিবেশবান্ধব ও পচনশীল।’


গৌরি মন্ডল পুরনো কাগজ সংগ্রহ করে সেগুলো পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করছেন তার বেধা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে। পরিবারের হাজারো চাহিদা পূরণে স্বামীর আয়ের পাশাপাশি তার এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও অবদান রাখছে। তবে বাজারজাত করার জন্য যদি কোন যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। তবে কাগজ দিয়ে আরো অনেককিছু করার পরিকল্পনা আছে তার।

happy wheels 2

Comments