শিব নদী বিল কুমারীর দখল দূষণ বন্ধ হোক
রাজশাহী থেকে অমৃত সরকার
সম্প্রতি বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ রির্সোস সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক) ও তানোর উপজেলার ১০টি কৃষক ও যুব সংগঠনের আয়োজনে “বরেন্দ্র অঞ্চলের উন্মুক্ত জলাধার সংরক্ষণের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানবন্ধন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা ব্যানার ফেস্টুনে শিব নদী ও বিল কুমারী বিল রক্ষার দাবি লিখে উপস্থাপন করেন।
এ সময় তানোর উপজেলার কৃতী সন্তান বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষক নূর মোহাম্মদ বলেন, “আমরা এক সময় দেখেছি শিব নদী দিয়ে অনেক লঞ্চ-স্টিমার ও বড় বড় বাণিজ্যিক নৌকা চলত। অনেক কৃষিপণ্য এই নদী দিয়ে পরিবহন করে নিয়ে যাওয়া হতো। আজ ভরাট ও দখলের কারণে এই নদী মৃতপ্রায়। নদী বছরের অধিকাংশ সময় পানি থাকে না। সেচ সংকটে অনেক কৃষক ফসল চাষাবাদ করতে পারছে না। আজকে পানি দিবসে আমরা চাই শিব নদী দখল মুক্ত হয়ে খনন হবে এবং নদীটি ফিরে পারে এর প্রাণ প্রবাহ।’
তানোর ও মোহনপুর উপজেলার ৩৫টি গ্রামের মানুষের জীবনের সাথে মিশে আছে বিল কুমারী বিল। এই বিল থেকে ৪টি জেলে গ্রামের জনগোষ্ঠি মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু দিন দিন এই বিলের জমি দখল করে ধান চাষের নামে প্রতিনিয়ত বিলের পানির সাথে কীটনাশক ও রাসায়নিক মিশ্রিত করা হচ্ছে। যার ফলে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এর মাছ বৈচিত্র্য। ফলে জেলে সম্প্রদায় তাঁদের জীবিকা হারাচ্ছে।
এ বিষয়ে তানোর সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ও অধ্যক্ষ অসীম কুমার সরকার বলেন, “বিল কুমারী বিল তানোর উপজেলার বড় পানি আধার, এই বিল থেকে অনেক পানি ভূ-গর্ভে রিচার্জ হয়। কিন্তু দিন দিন এ বিলের পানি বিষাক্ত হয়ে উঠছে। আমরা চাই বিল কুমারী বিল দখল ও দূষণমুক্ত হয়।’
প্রবীণ কৃষক ও গোকুল-মোথুরা কৃষক সংগঠনের সভাপতি শ্রী জিতেন্দ্রনাথ সূত্রধর বলেন, “বিল থেকে সিঙ্গার, লিখার, পদ্ম, শালুক, পানিফল আজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে, প্রান্তিক মানুষ এখন থেকে খাদ্য সংগ্রহ করত এবং তা ছিলো অসেক পুষ্টিকর। আমরা চাই বিলকুমারীর পানি যেন বিষাক্ত না হয়।’
পরে অংশগ্রহনকারীরা প্রতীকি অর্থে হাটুপানির শিব নদীতে কাগজের নৌকা ভাসিয়ে আবার যেন এই নদীতে সারাবছর পানি থাকে সেই দাবি জানান। মানববন্ধন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বারসিক কর্মসূচি কর্মকর্তা অমৃত সরকার। উক্ত মানববন্ধন অনুষ্ঠানে তানোর উপজেলার ১৪টি গ্রামের শতাধিক কৃষক, যুবক সুশীল সমাজের জনগণ অংশগ্রহন করেন।
উল্লেখ্য, তানোর উপজেলার পানির আধার হিসেবে বিল কুমারী বিলের আছে বড় ভূমিকা। আবার এই বিল কুমারীর মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে শিব নদী। নওগাঁ জেলার আত্রাই নদ থেকে উৎপত্তি হয়ে তানোর পবা মোহনপুর উপজেলা দিয়ে নদীটি চলনবিলে মিলিত হয়েছে। ভরাট দখল দূষণসহ নানা কারণে শিব নদী আজ মৃত প্রায়। নদীটি হারিয়েছে পানি প্রবাহের স্বাভাবিক মাত্রা। বর্ষা ছাড়া নদীতে আর পানি প্রবাহ চোখে পড়ে না। একই অবস্থা বিল কুমারী বিলের দখল দূষণে বিলের পানি হারিয়েছে এর স্বচ্ছতা, হারিছে এর বৈচিত্র্যময় মৎস্য সম্পদ। প্রতিনিয়ত ফসল চাষের নামে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের কারণে বিলকুমারী বিলের জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে। রাসায়নিক কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে বিলের অনেক প্রাণবৈচিত্র্য একবারেই হারিয়ে গিয়েছে। শিব নদীর পানি দিয়ে এক সময় শত শত বিঘা জমি চাষাবাদ হলেও আজ এই নদী নালায় পরিণত হয়েছে। খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে সকল প্রাণের জন্য পানি খুবই অপরিহার্য উপাদান। জলবায়ুসহ নানা কারনে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিনিয়ত নিচে নামছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় মাটির নিচের পানির আধার ফুরিয়ে গিয়ে সংকট আরো প্রকট করে তুলবে। এখনই উপজেলার মন্ডুমালা সহ বাধাইর ইউনিয়নের অনেক গ্রামে মাটির নিচের পানি পাওয়া দায় হয়ে পরেছে। দিন দিন সংকট আরো বেশি হচ্ছে।