সাম্প্রতিক পোস্ট

মডেল শতবাড়িতে বৃদ্ধি পাচ্ছে একই ফসলের বৈচিত্র্যময় জাত

রাজশাহী থেকে অমৃত সরকার
একই মাচায় পাশাপাশি চাষ হচ্ছে লম্বা সবুজ লাউ, লম্বা সাদা লাউ, গোল সাদা লাউ ও সাচি লাউয়ের। এর মধ্য থেকে লম্বা সবুজ লাউ, লম্বা সাদা লাউ, গোল সাদা লাউয়ের ফল আসতে শুরু হয়েছে। সাচি লাউয়ের এখনও ফলন আসতে শুরু করেনি। মডেল শতবাড়িতে একই ফসলের জাত বৈচিত্র্য বৃদ্ধি, স্থানীয় এলাকায় ফসল বৈচিত্র্য বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রতিকূলতায় স্থানীয় সহনশীল শস্য-ফসলের চাষাবাদ, বীজ বিনিময় ও চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রায়োগিক কৃষি গবেষণার আওতায় “কৃষক নেতৃত্বে স্থানীয় ফসল বৈচিত্র্য সংরক্ষণ’ কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন হচ্ছে রাজশাহী তানোর উপজেলার সিন্দুকাই গ্রামে। এই গবেষণার পরিচালনার দায়িত্বে আছেন ৬৫ বছর বয়সের একজন আদিবাসী কৃষাণী মরিয়ম মূর্মু। বারসিক ও সিন্দুকাই কৃষাণী সংগঠনের সদস্যরা আশেপাশের এলাকা থেকে ৪টি দেশি লাউ জাতের বীজ সংগ্রহ করে এ কাজটি শুরু করেন।


প্রতি ইঞ্চি মাটি গড়বো সবুজ ঘাঁটি করোনা ও করোনা পরবর্তী সময়ে পরিবারভিত্তিক পুষ্টিব্যাংক কর্মসূচি শুরু হয়। সেই সকল আদর্শ বাড়িগুলোকে মূলত “শতবাড়ি উন্নয়ন মডেল” বাড়ি বলে অভিহিত করা হয়। বাড়ীর প্রতিটি জায়াগা সবুজ করে গড়ে তুলতে কৃষক ও বারসিক মিলে চলতি সময়ের মধ্যই দারুণ উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে। মডেল শতবাড়িতে এখন সারাবছর চাষ হয় বৈচিত্র্যময় মৌসুমী সবজির। এই উদ্যোগ গ্রহণকারী পরিবারগুলো নিজেদের পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি উদ্বৃত্ত্ব সবজিগুলো বিক্রয় করার মাধ্যমে বাড়তি আয় করছে। এলাকায় বৃদ্ধি হচ্ছে ফসল বৈচিত্র্য। নিজেরা ফসলের বীজ সংরক্ষণ করছেন বলে বীজ আর বাজার থেকে কিনতে হচ্ছে না। নিজেরা নিজেদের মধ্যে বীজ বিনিময়ের মাধ্যমে মজবুত করছেন কৃষিতে কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠার ভিত।

লাউ বর্তমান সময়ে সারাবছরই চাষ হয় এবং এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি হিসেবে জনপ্রিয়। লাউয়ের এক একটি জাত আলাদা আলাদা গ্রামে বা পরিবারে চাষ হলেও ৪টি জাতের লাউ জাত এক জায়গায় চাষের ফলে একদিকে স্থানীয় এলাকায় বৃদ্ধি হচ্ছে ফসলের বৈচিত্র্যময় জাত এবং নির্বাচন করা যাচ্ছে কোন জাতটি কোন এলাকায় ভালো হয়। এ বিষয়ে কাজের সাথে সম্পৃক্ত কৃষাণী মরিয়ম মূর্মূ বলেন, “আমি আগে বাজার থেকে লাউয়ের বীজ কিনে নিয়ে এসে চাষ করতাম। এখন আমার কাছে ৪ জাতের বীজ লাউ বীজ আছে। যার কারণে আর বাজার থেকে বীজ কিনতে হবেনা। আমি এখন অন্যদের মাঝে বীজগুলো বিতরণ করতে পারব।’ তিনি আরো বলেন, সাচি লাউ জাতটি গ্রীষ্মে ভালো হবে। বাঁক ৩টি জাত সারাবছর চাষ করা যাবে। এর মধ্য থেকে গোল সাদা লাউয়ের ফলন সব থেকে বেশি।’


সিন্দুকাই নারী সংগঠনের সভাপতি সমঋতি মার্ডি(৩৮) প্রত্যক্ষভাবে এই কাজের সাথে যুক্ত। তিনি বলেন, “আমরা দেখলাম এখন পর্যন্ত ১২৪টি গোল সাদা লাউ বিক্রয় হয়েছে। এটার ফলন অনেক ভালো এবং স্বাদ অনেক বেশি। আমরা সব জাতের বীজ সংরক্ষণের জন্য প্রথম লাউটি বীজ হিসেবে রেখে দিয়েছি। সেখান থেকে সংগ্রহ করার পর আমাদের সংগঠনের সকল সদস্য এবং আগ্রহী সকলের মাঝে বীজ বিতরণ ও বিনিময় করব। কারণ আমরা এর আগে একসাথে এতগুলো লাউ দেখিনি।’ তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স আলনী সরেন সিন্দুকাই নারী সংগঠনের সদস্য। তিনি বলেন, “আমরা বাজারে যখন লাউ কিনতাম দেখতাম প্রায় সব লাউগুলো একই রকম। কিন্তু এবার আমরা একসাথে ৪টি জাতের লাউ দেখতে পাচ্ছি। এ কাজের ফলে আমাদের এলাকায় লাউয়ের জাত বৃদ্ধি হলো।’


happy wheels 2

Comments