পোড়া স্থানে কুলিং এজেন্ট হিসেবে মেহেদি পাতা
সোনিয়া আফরোজ, সাতক্ষীরা থেকে
মেহেদি একটি সুপরিচিত উদ্ভিদ। হাত ও চুল রাঙাতে মেহেদি পাতার বহুল ব্যবহার রয়েছে। মেহেদি পাতা সকল প্রকার চর্মরোগ থেকে মুক্তি দেয়। এছাড়া মাথা ঠাণ্ডা রাখতে, চুল পড়া রোধে, যে কোন ফাংঙ্গাল সংক্রমণে, পোড়া স্থানে কুলিং এজেন্ট হিসেবে, মাথা ব্যাথা দূরিকরণে মেহেদি পাতা ওষুধের মতো কাজ করে।
রাস্তার পাশে, বসত বাড়ির আঙিনায়, শহরে বা গ্রামে প্রায় সর্বত্র মেহেদি পাতা দেখতে পাওয়া যায়। মেহেদিগ একটি চিরসবুজ গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। তবে মাঝে মাঝে এটি বৃক্ষে পরিণত হয়। মেহেদি উদ্ভিদ ১০-১৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এর বাকল মসৃণ ও তামাটে-বাদামি রঙের। এর শাখা-প্রশাখা বেশি দূর বিস্তৃত হতে পারে না।
মেহেদি পাতার প্রতিমুখ ডিম্বাকার বা বিডিম্বাকার হয়। এর শীর্ষ অংশটি সূক্ষ ও পত্রবৃন্ত খাটো। এর পুষ্মমঞ্জরী প্রায় ২৫ সে.মি. পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর ফুল খুবই সুগন্ধিযুক্ত।
মেহেদি ফুল সাধারণত সাদা বা হলুদ রঙের হয়ে থাকে। এর ফল প্রথমে ক্যাপসিউল ও পরে চাপা গোলাকার আকৃতি ধারণ করে। পরবর্তীতে ফল ফেটে গিয়ে বীজ ঝরে পড়ে। ঝরে পড়া বীজ থেকে নতুন উদ্ভিদের জন্ম হয়। গাছে ফুল ও ফল ধরে জুন-ডিসেম্বর মাসে। কলম ও বীজের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার হয়।
মেহেদি বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও ওষুধি গুণাগুণের জন্য চাষ করা হয়। এমনকি এটি বেড়া হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এটি ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফ্রিকা, আরব, মিশর প্রভৃতি স্থানগুলোতে দেখা যায়।
বাংলাদেশের সর্বত্র মেহেদি আবাদ করতে দেখা যায়। ফুলের সৌরভ ও বেড়ার জন্য এটি অনেকের বাড়ির আঙিনায় শোভা পায়। এর ফুল থেকে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে থাকে।
মেহেদির ফুল থেকে পাতন প্রক্রিয়ায় তেল তৈরি করা যায়। যা প্রসাধনী শিল্পে ব্যবহৃত হয়। এমনকি ফুল থেকে সুগন্ধিও তৈরি করা যায়।
মেহেদি পাতা নখ, হাতের তালু, পায়ের পাতা ও চুল রাঙাতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এর পাতা রেশম, পশম ও তুলা রঞ্জিত করার জন্যও ব্যবহৃত হয়।
মেহেদি স্থানীয়ভাবে মেন্দি, মেহেদি, সুদি ইত্যাদি নামে পরিচিত। সাতক্ষীরা অঞ্চলের মানুষের কাছে এটি মেহেদি, মেন্দি, মিন্দি, মুন্দি নামে অধিক পরিচিত।
মেহেদি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে পাইকগাছা উপজেলার শ্রীকণ্ঠপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. আফায উদ্দীন বলেন, “মেহেদি গাছের বাকল জন্ডিস ও প্লীহার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। পাতা বেঁটে ফাংঙ্গাল সংক্রমণ, ব্রণ ও ফোঁড়ার উপর প্রলেপ দিলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। এর কারণ এটি একটি এন্টিফাংঙ্গাল উদ্ভিদ।”
এ ব্যাপারে ব্রহ্মরাজপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. কফিল উদ্দীন আহমেদ বলেন, “শরীরের কোথাও পুড়ে গেলে আ কোন স্থানে জখম হলে সেখানে মেহেদি পাতার প্রলেপ লাগালে পোড়া বা জখম হওয়া স্থান দ্রুত সেরে যায়। শরীরকে শীতল রাখার জন্য মেহেদি পাতার তেল ও নির্যাস ব্যবহার করেন অনেকে।”
সাতক্ষীরা শহরের পুষ্টির ফেরিওয়ালা রুহুল কুদ্দুস বলেন, “মেহেদি পাতা বেটে মাথায় লাগালে মাথা ঠাণ্ডা থাকে ও মাথা ব্যাথা দূর করে। এটি মাথার খুশকি দূর করতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে। মেহেদি পাতা চুলের গোড়া শক্ত করে চুল পড়া প্রতিরোধ করে। মেহেদি পাতা বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে ত্বক রক্ষা করে।”
উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞান কোষের তথ্য মতে, ‘মেহেদির বৈজ্ঞানিক নাম Lawsonia inermis। এর ইংরেজি নাম- Hena, Indian Privent. Mignonette tree। এশিয়া মহাদেশের অধিকাংশ মানুষ এই উদ্ভিদটি সম্পর্কে পরিচিত।
কিছু মুসলিম দেশে বিশেষত ইরান ও আফগানিস্তানের পুরুষগণ তাদের দাঁড়ি রঙ করার জন্য মেহেদি পাতা ব্যবহার করে থাকে। মরক্কোতে চামড়া রঞ্জিত করার জন্য মেহেদি আবাদ করা হয়। কম্বোডিয়াতে এর মূল বা শেকড় গনোরিয়া ও শ্বাসকষ্টের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।’
সব মিলিয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানে বা বিয়ে বাড়িতে ছোট-বড় সকল বয়সের মানুষ বিশেষত মেয়েরা তাদের চুল, হাত ও পা আরও আকর্ষণীয় করার জন্য মেহেদি পাতা ব্যবহার করে থাকে। মেহেদি পাতা সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি পারিবারিক বিভিন্ন চর্মরোগের চিকিৎসায় বেশ উপকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।