গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পরামর্শ
নেত্রকোণা থেকে রুখসানা রুমী
নেত্রকোনা জেলায় বিভিন্ন গ্রামের জনগোষ্ঠী সংগঠিত হয়ে তাদের সমস্যা দূরীকরণে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন উদ্য্যোগ গ্রহণ করে আসছে। নেত্রকোনা জেলার আশুজিয়া ইউনিয়নের ভুগিয়া গ্রামের এমনই একটি সংগঠন ‘শাপলা শালুক কৃষাণী সংগঠন’। সংগঠনের মাধ্যমে এ গ্রামের নারীরা তাদের সমস্যাগুলো সমাধানে বিগত কয়েক বছর ধরে স্থানীয়ভাবে কাজকরে আসছেন। সংগঠনের সভায় তারা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। এলাকার কৃষি প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষায় তারা সংগঠনের উদ্যোগে বৈচিত্র্যময় বৃক্ষ ও লতাগুল্ম রোপণ করেন।
সংগঠনের উদ্যোগে গ্রামের ৬ জন নারী গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ক পরামর্শ প্রদানের লক্ষ্যে এক স্বাস্থ্য বিষয়ক ক্যাম্পেইন আয়োজন করে। সূর্যের হাসি ক্লিনিকের একজন ডাক্তার ও প্যারমেডিকের সহায়তায় ক্যাম্পেইন এ ৬ জন গর্ভবতী মাকে শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা যেমন-ওজন পরিমাপ, রক্তচাপ পরিমাপ করা এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। যাদের ওজনের সাথে উচ্চতার সামঞ্জস্য নেই তাদের এবং যাদের রক্তচাপ কম বা বেশি সেসব গর্ভবতী মা ও নারীদেরকে ডাক্তার ও প্যারামেডিকগণ প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করেন।
এই প্রসঙ্গে ডাক্তার ইয়াসিম আক্তার বলেন, “ওজন স্বাভাবিক রাখতে হলে সব সময় পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। শাকসবজি এবং ভিটামিনযুক্ত খাবার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “একজন মানুষের উচ্চতা ও বয়সের সাথে ওজনের বিষয়টি জড়িত। তাই বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী প্রত্যেকের ওজন সঠিক হতে হবে। গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভের শিশুটি প্রতিনিয়ত বেড়ে ওঠায় গর্ভবতী মায়ের ওজনও নিয়মিত বৃদ্ধি পায়। তাই গর্ভবতী মায়ের ওজন স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রত্যেক নারীকে অবশ্যই তার খাবারের তালিকায় পুষ্টিকর খাবার রাখতে হবে। পরিবারের পরিবারের প্রত্যেক সদস্যদেরও গর্ভবতী মায়ের প্রতি আন্তরিক হতে হবে। ওজন যদি স্বাভাবিক না থাকলে সন্তান প্রসবের সময় মা ও সন্তানের বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই প্রসবের দিন ঘনিয়ে আসলেই সময়মত তাকে কোন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রাখাতে হবে।”
ডাক্তার ইয়াসমিন আক্তার গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য সেবা ও নবজাতকের পরিচর্যা বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেন। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, শারীরিক পরিশ্রম, ঠিকমত ঘুম না হওয়ার কারণে রক্তচাপের মাত্রা বেড়ে যায়। ঘাড় ব্যথা, মাথা ঘোরা, হঠাৎ করে চোখে অন্ধকার দেখা এগুলো হলো রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ। এরকম হলে সাথে সাথে বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে। বেশি সময় ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলে মাথায় পানি দিতে হবে এবং রক্তচাপ পরীক্ষা করে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে। যাদের রক্তচাপ কম তাদেরকে তিনি প্রথম ৩ দিন দুই বেলা করে খাবার স্যালাইন খাওয়ার পরামর্শ দেন এবং যে পর্যন্ত রক্তচাপ স্বাভাবিক অবস্থায় না আসে ততদিন পর্যন্ত একটি করে স্যালাইন খেতে বলেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই রক্তচাপ পরীক্ষা করে নিতে হবে। আবার স্যালাইন বেশি খেলেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। তিনি পরিবারের সকল সদস্যদের রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের প্রয়োজনীয়তাসহ বিভিন্ন রোগ-বালাই নিরাময় ও প্রতিরোধে করণীয় বিষয়েও আলোচনা করেন।
ডাক্তার ইয়াসমিন আক্তার বলেন, “একজন সুস্থ্ মানুষ তিন মাস পরপর রক্ত দিতে পারে। রক্ত দিলে তার শারীরিক কোন ক্ষতি হয় না। তাই প্রত্যেককেই নিজের রক্তের গ্রুপ সর্ম্পকে জানা থাকা খুবই জরুরি। একজন গর্ববতী মায়ের রক্ত গ্রুপ জানা থাকলে নিজেদের মধ্যে রক্ত সংগ্রহ করা যায়। হাসপাতালে যেসব রক্ত পাওয়া যায় সেসব রক্ত ভালো নাও হতে পারে। গ্রামের মানুষের ধারণা যে, রক্ত দিলে শরীরের ক্ষতি হয়, এটা ঠিক নয়। আমাদের প্রত্যেকের শরীরের রক্তে কিছু নির্দিষ্ট কণিকা থাকে। তিন মাস পর পর তা নষ্ট হয়ে পুনরায় জন্মায়। রক্তের ঘাটতি পূরণ করতে হলে প্রচুর পরিমাণ পানি ও কচুঁশাক খাওয়া দরকার। তাছাড়া দেশীয় ফলমূল, সবুজ শাক সবজি নিয়মিত খেলে শরীরে রক্তের কোন ঘাটতি হবে না। তিতা জাতীয় খাবার খেলে শরীরের রক্ত ভালো থাকে।”
আলোচনা শেষে সংগঠনের সকল সদস্য তাদের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করেন এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ নাম ও ঠিকানা সম্বলিত রক্তের গ্রুপ উল্লেখিত কার্ড গ্রহণ করেন। মাত্র ২০ (বিশ) টাকার বিনিময়ে প্রত্যেক সদস্য গ্রামে বসেই তাদের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করতে সক্ষম হয়েছেন। সংগঠনের সদস্যরা ছাড়াও গ্রামের ৪০জন নারী ও পুরুষ তাদের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করেন।