ছাগল পালনে সফল নারী ডালিয়া বেগম
মানিকগঞ্জ থেকে আছিয়া আক্তার
যুগ যুগ ধরে নারীরা অবহেলিত হয়ে আসছে । এ অবহেলা শুরু হয় প্রৃৃথমে নিজের পরিবার থেকে, তারপর স্বামীর পরিবারে। নারীদের নিজেস্ব কোন বাড়ি নেই, নেই নিজেস্ব কোন জমি। ভাসমান পানার মত ভাসতে থাকে বিয়ের আগে বাবার বাড়িতে, আর বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে। জন্ম থেকেই শুরু হয় এ অবহেলা। একটা মেয়ে শিশু জন্ম নিলে সারা বাড়িতে পরে যায় কান্নার শোরগোল। পরিবারে দেখা যায়, ছেলেটাকে বেশি প্রধান্য দেওয়া হয়। তাকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য সবই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অথচ মেয়ে হলে তাকে স্বল্প বয়সে বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবে সবাই। তার বয়স ১৫ বছর হলেই শুরু হয় তার জন্য পাত্র দেখা। যে সময়ে মেয়েটা নিজেকেই গোছাতে পারে না সে সময় গোছাতে হয় পুরো একটা সংসারকে।
এমনই এক অবহেলিত নারী ডালিয়া বেগম। মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার বায়রা ইউনিয়নের সানাইল গ্রামে বসবাস করে ডালিয়া বেগম। বাবার নাম হাবিবুর রহমান। ছোটবেলা থেকেই অভাব অনটনে দিন অতিবাহিত করতো তারা।এভাবেই আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে ডালিয়া বেগম। বাবা হাবিবুর রহমান তাকে বিয়ে দেয় সিংগাইর উপজেলার চারিগ্রামে। হয়তো তিনি ভাবেন ‘আমি তো মেয়েটাকে নিজে সুখ দিতে পারলাম না, পরের ঘরে গিয়ে সুখ করবে।’ কিন্তু নিয়তির কি নির্রমম পরিহাস ,সুখ নামের সেই অচিন পাখি নেই তার স্বামীর ঘরেও।বিয়ের কয়েক বছর হয়ে গেলো কিন্তু সন্তান হচ্ছে না,স্বামীর মন খারাপ সাথে আছে মানসিক নির্যাতন। এভাবেই কাটতে থাকে আরও কিছু দিন, মাস, বছর। একটা সময় স্বামী তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। কি করবে ভেবে না পেয়ে চলে আসলেন বাবার বাড়ি। কয়েক দিন পরে জানতে পারলেন তার স্বামী আর একটা বিয়ে করেছে। কষ্টের আর সীমা রইলো না তার। তিনি নিজেকে স্থির করল আর অন্যের বোঝা হবেন না; নিজেই কিছু করবেন।
মাত্র ১০০০ টকা সঞ্চয় ছিলো। সেই টাকা দিয়ে তিনি একটি ছাগল কিনেন। শুরু করেন ছাগল পালন। আস্তে আস্তে ছাগলটা বড় হতে থাকে। তার এ ছাগল ৬ মাস পর পর ২টি করে বাচ্চা দিতে থাকে। ৩ বছরের মধ্যেই তার ছাগলের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে তার ছোট বড় ২০টি ছাগল আছে যার বর্তমান বাজার মুল্য কমপক্ষ্যে ৫০,০০০ টাকা। অত্যন্ত যত্ন সহকারে তিনি ছাগলগুলো পালন করছেন। বাবার বাড়ি থেকে আশ্রয় না পেয়ে তিনি এখন তাঁর ছাগলগুলো নিয়ে প্রতিবেশীর বাড়ি থাকেন।
নিজের বাড়ি না থাকলেও বর্তমানে তিনি বারসিক কর্মীদের তথ্য সহযোগিতায় যুব উন্নয়ন থেকে গবাদিপশু যেমন হাঁস, মুরগি পালনের ওপর প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। তবে উপজেলা থেকে ঋণ সহযোগিতার সুযোগ পেলেও সেটি ফিরিয়ে দেন। এই প্রসঙ্গে ডালিয়া বলেন, ‘আমার স্বল্প সঞ্চয় দিয়েই আমি এগিয়ে যেতে চাই। প্রশিক্ষণ আমাকে স্বাবলম্বী হওয়ার শিক্ষা দিয়েছে। আমি অবশ্যই পারব।’
সারাদিন তিনি ছাগলগুলোকে মাঠে চরান। তার এ ছাগল পালন দেখে গ্রামের কিছু মানুষ তিরস্কার করলেও সচেতন ও উন্নয়ন কর্মীরা তাকে উৎসাহিত করছেন এবং স্থানীয়ভাবে তিনি পুরুস্কারও পেয়েছেন। ডালিয়ার এখন পেছনে তাকানোর সময় নেই। ছাগলই তার বন্ধু। তিনি ছাগলের ক্ষুধার কথা বুঝেন এবং তাদেরকে সন্তানের মত যত্ন করেন। তার এই সফলতা দেখে অনেক গ্রামীণ নারী ছাগল পালনে উৎসাহিত হচ্ছেন এবং ছগল পালন করছেন। স্বামী, সন্তান ছাড়া ডালিয়া বেগম নিজেই তাঁর ভাগ্য পরিবর্তন করতে সমর্থ হয়েছেন।