নগর দরিদ্রদের নাগরিক অধিকার দিতে হবে
ঢাকা থেকে ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল
বারসিক ও জনউদ্যোগের যৌথ আয়োজনে সম্প্রতি ‘নগর দারিদ্র্য ও নাগরিক অধিকার: সরকারের কাছে প্রত্যাশা ও করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক বাবর রোডের এইচকে আরেফিন সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে ঢাকা শহরের বেশ কয়েকটি বস্তিতে বসবাসকারী বস্তি প্রতিনিধিসহ বারসিক এবং জনউদ্যোগের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।
মতবিনিময় সভায় বস্তিবাসীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন পারভীন আক্তার, আসমা আক্তার, সিরাজুল ইসলাম, মো. নুরুল ইসলাম, রাফেজা বেগম, কুলসুম বেগম, আব্দুল কুদ্দস। আইইডির পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন তারিক হোসেন মিঠুল ও জনউদ্যোগের পক্ষে মাহবুব হোসেন প্রমূখ। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন সঞ্চিতা তালুকদার, সুদিপ্তা কর্মকার, হরেন্দ্রনাথ সিং প্রমূখ। মত বিনিময় সভাটি সঞ্চালনা করেন ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল।
মতবিনিময়ে মোহাম্মাদপুর পাইয়োনিয়ার হাউজিং বস্তির প্রতিনিধি আসমা আক্তার বলেন, ‘আমাদের বস্তিতে পানির সমস্যা রয়েছে। এখানকার পরিবেশ খুবই অপরিস্কার। বৃষ্টি হলেই পানি জমে। অনেকসময় ঘরের মধ্যে অপরিস্কার পানি উঠে পড়ে। দূর্গন্ধ ছড়ায়। আমরা ব্যক্তি মালিকানাধীন বস্তিতে থাকি। যে কোন সময় ভেঙ্গে দিতে পারে।
টেনশন নিয়ে কাটে আমাদের সময়।’ হাজারিবাগ বস্তির বাসিন্দা এবং বস্তিবাসী অধিকার সূরক্ষা কমিটির সভাপ্রধান রাফেজা বেগম বলেন, ‘আন্দোলন ছাড়া আমরা বস্তিবাসীরা টিকে থাকতে পারবো না। তাই আমরাদের সবাইকে এক হয়ে মানববন্ধন করতে হবে। প্রধাণমন্ত্রীর সাথে দেখা করে তার নিকট থেকে আমাদের অধিকার নিয়ে আসতে হবে।’
গাবতলির বেঁড়িবাঁধ বস্তির বাসিন্দা এবং বস্তিবাসীদের পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে আসা নেত্রী কুলসুম বেগম, ‘আমরা এই দেশের নাগরিক। আমাদের জন্য সরকার থাকার ব্যবস্থা করতেই হবে।’ রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘আন্দোলন করতে হলে প্রতিটি বস্তিতে কমিটি করতে হবে, সবাইকে একতাবদ্ধ করলেই সরকার বস্তিবাসীদের জন্য কাজ করবে।’ কল্যাণপুর পোড়া বস্তির বাসিন্দা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এই শহরে টিকে থাকার জন্য অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। অনেকবার আমাদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তুপারেনি। কারণ আমরা বস্তিবাসীরা সবাই মিলে প্রতিরোধ করে আমাদের বস্তিকে রক্ষা করেছি। এখনও অনেক বাধা আসে। তারপর আমরা টিকে আছি। একতাবদ্ধ না হলে আমরা আমাদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারবো না।’
মতবিনিময়ের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য উপস্থাপন করেন বারসিকের প্রকল্প সমন্বয়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি তার সূচনা বক্তব্যে বলেন, ‘বিবিএস এর ২০১৪ সালের হিসাব মতে মোট বস্তিবাসীর সংখ্যা ছিল ৩৪,২০,৫২১ জন, যা ঢাকার মোট জনসংখ্যার ৩৭.৪%। নগর এবং গ্রামের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানাবিধ প্রাকৃতিক আপদ যেমন; বন্যা, নদীভাঙ্গন, জলাবদ্ধতা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, শৈতপ্রবাহ, লবণাক্ততা কারণে মানুষ জীবিকার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে শহরে ভিড় করছেন। কিন্তু রাষ্ট্র এই দরিদ্র জনগোষ্ঠির জীবনকে সচল রাখার জন্য উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপই নেয়নি।’ তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ঢাকা শহরে বিত্তবানরাও যেমন থাকবেন; তেমনি বস্তিবাসীরাও থাকবেন। কারণ তারাও তো মানুষ। কেবল বড়লোকেরাই ফ্লাটে থাকবে এবং বহুতল ভবনে থাকার সুয়োগ পাবে, তা হবে না। মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা যাতে দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে ফ্লাটে থাকতে পারে আমরা এই সুবিধা করে দিচ্ছি। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ১০ হাজার ফ্ল্যাট তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।’