সরকারি সেবা পাওয়ার অধিকার সবার আছে
সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল
সরকারি সব সেবা পাওয়া নাগরিকের অধিকার। প্রত্যেক রাষ্ট্র নাগরিকের প্রাপ্য বিভিন্ন সেবা প্রদান করবে এটা সাংবিধানিক দায়িত্ব। কিন্তু নাগরিকরা সঠিকভাবে সরকারি সেবা পাওয়া সম্পর্কে খুব বেশি সচেতন নয়। তারা অনেক সময় জানেন না যে, কোন অধিদপ্তর থেকে কি সেবা পাওয়া যাবে, কোথায় গেলে পাওয়া যাবে, কিভাবে যোগযোগ করতে হবে, কার মাধ্যমে দিয়ে যেতে হবে- এরকম শত শত সমস্যা সামনে হাজির হয় তাদের সামনে। এসব সমস্যা সমাধান করতে না পেরে সব রকমের চেষ্টা বাদ দিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। আবার কিছু ক্ষেত্রে সচেতন ব্যক্তি দেখলে তারা চেষ্টা করলেও সে সেবা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে যেতে যেতে অনেকসময় সমস্যা তৈরি হয়। সরকারিভাবে প্রত্যেক অধিদপ্তরে ভিন্ন ভিন্নভাবে সেবা প্রদান করে থাকে। বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানও বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করে। প্রতিনিয়ত সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষ ও এলাকার উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের ভূমিকা রেখে চলেছে। সরকারি-বেসরকারি সেবা নিশ্চিতকরণসহ এলাকার বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্য ব্যক্তি ও সমষ্টিগতভাবে অনেকে অনেক ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। কখনো একে অন্যের মধ্যে আলোচনা, যোগাযোগ, কাউকে দেখে, কোন জনসংগঠনকে দেখে, অন্যের পরামর্শ নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি সেবা প্রদান করে যেসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অবহিত করার সাথে অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছেন।
তেমনি একটি সংগঠন শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়েনের ‘পাখিমারা পরিবেশবান্ধব আইএফএম কৃষি নারী সংগঠন।’ যার যাত্রা শুরু হয় ২০১৭ সালে কৃষানী রাবেয়া সুলতানার নেতৃত্বে ১৫ জন নারী নিয়ে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে আগ্রহী, নারীদের আয়বর্ধনমূলক কাজে নিজেদের যুক্তত বাড়ানোর সাথে সরকারি ও বেসরকারি সেবা নিশ্চিতকরণ। সংগঠন তৈরির পর বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম চলমান রেখেছেন যেমন দিবস পালন, আলোচনা, অচাষকৃত উদ্ভিদের পাড়া মেলা ও রান্না প্রতিযোগিতা, স্কুল পর্যায়ে কুইজ ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, সঞ্চয় সম্প্রসারণ, জৈব বালাইনাশক তৈরি ও ব্যবহারে প্রশিক্ষণ, চুলা ও হাজল তৈরিতে প্রশিক্ষণ, নদীর চর বনায়ন, স্থানীয় মুরগি জাত সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণে মুরগি গবেষণা, বসতভিটায সবজি চাষ, অভিজ্ঞতা বিনিময় সফর, প্রাণী সম্পদের ভ্যাকশিনেশন ক্যাম্প, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সেবা আদায়ে যোগাযোগ। এই সংগঠনের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ২০ জন।
এই প্রসঙ্গে নারী সংগঠনের সভানেত্রী রাবেয়া সুলতানা বলেন, ‘সংগঠন তৈরির আগে আমাদের কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে তেমন কোন যোগাযোগ ছিল না। এক কথায় বলতে গেলে কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া এবং যখন জন্মনিবন্ধনের সনদ দরকার তখন ইউনিয়ন পরিসদে যাওয়া এই দুই জায়গা ছাড়া আমাদের জানা শোনার মতো আর কোন জায়গা ছিলো না। কিন্তু সংগঠন তৈরির পর বিভিন্ন মানুষ এবং বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনাসহ তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে পারি। তারা বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করে তাদের নিজ নিজ এলাকার মানুষের জন্য বিভিন্ন সহায়তা নিতে পারছেন। যেন মনে হলো আমরাও তো নারী তারা পারলে আমরা কেনো পারবো না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশেষ করে দাঁতিনাখালী বনজীবী নারী সংগঠন ও ধুমঘাট শাপলা নারী সংগটনের কাজ দেখে আগ্রহটা বেড়ে যায়। আর সেখান থেকে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংগঠনের নারীদের নিয়ে যাই এবং তাদের যে সেবা আছে তা কিভাবে পাওয়া যায় তা জানার চেষ্টা করি এবং সেভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করি।’ রাবেয়া সুলতানা আরও বলেন, ‘নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আমি এখন পর্যন্ত স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে সংসদ সদস্যসহ উপজেলার প্রায় সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে গিয়েছি এবং কোন না কোন সহায়তা সেখান থেকে আমার এলাকার মানুষকে পেতে সহায়তা করেছি। এ পর্যন্ত প্রতিবন্ধী কার্ড ৭জন, বয়স্ক ভাতা ২ জন, বিধবা ভাতা ২ জন, গর্ববতী মহিলা ভাতা ৩ জন, হাসপাতালে অসুস্থ রোগী দেখানো ১৪ জনসহ বেসরকারি নবযাত্রা প্রকল্পের ৭৫ জনকে প্রশিক্ষণ ও উপকরণ পেতে সহায়তা করেছি। এছাড়াও গত ২৫ জুলাই ২০১৯ সমাজ সমাজ সেবা অধিদপ্তর কর্তৃক শ্যামনগর উপজলোয় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী বাস্তবায়নের আওতায় উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় শ্যামনগর উপজেলায় ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্টোকে প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের আর্থিক সহায়তায় চেক বিতরণ করা হয়েছে। সেখানেও নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে পাখিমারা গ্রামের ৩ জন ক্যান্সার রোগী ও আটুলিয়া গ্রামে একজন হার্টের রোগীকে সহায়তা করা হয়।’
তিনি জানান, তারা ৫০ হাজার টাকার চেক পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে ক্যান্সার রোগ চিকিংসার চেক প্রাপ্ত মনোয়ারা ও হামিদা বেগম বলেন, ‘জানিনা যে রোগ হয়েছে তা বাঁচবো কিনা। কিন্তু চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা পয়সা খরচ করেছি। শেষ পর্যায়ে নারী সংগঠনের সহায়তায় যে সাহায্য পেয়েছি তা আমাদের অনেক কাজে লাগবে। একটা মহৎ কাজ করে দিয়েছে এ সংগঠন। তাদের সকলের ভালো হোক এই কামনা করি।’
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনেক ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে সে সেবা পাওয়া এবং সেবা সম্পর্কে জানার অধিকার প্রত্যেকের। সেক্ষেত্রে সেবা ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা হলে সেবার মান বৃদ্ধিসহ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও সেবা গ্রহীতার মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক সৃষ্টির করার জন্য সকলের কাজ করা জরুরি।