কৃষকরাই ডাক্তার, তাঁরা প্রকৃতি থেকে শেখেন
নেত্রকোনা থেকে হেপী রায়
জন্মের পর পরই মানুষ হঠাৎ করে বড় হয়ে যায় না। আস্তে আস্তে বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে সে বড় হয়। তেমনি করেই কোনো উদ্যোগ বা প্রতিষ্ঠান শুরুতেই শীর্ষে উঠতে পারেনা। লক্ষ্মীগঞ্জ ইউনিয়নের আতকাপাড়া গ্রামটি আয়তনে খুব বেশি বড় নয়। এর লোকসংখ্যা ১৩১৫ জন। যার অধিকাংশই কৃষির সাথে যুক্ত। এই গ্রামে সারাবছর ধানের পাশাপাশি নানা ধরণের সবজি চাষ হয়ে থাকে। এই গ্রামের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বারসিক’র কর্মপ্রক্রিয়ায় অনেকেই যুক্ত হন। তাঁদের মধ্যে প্রবীণ, যুবক, নারীসহ বিভিন্ন পেশার জনগণও (পল্লী চিকিৎসক, ব্যবসায়ী) রয়েছেন। তাছাড়া ল²ীগঞ্জ ইউনিয়নের শিক্ষা, সংস্কৃতি, পরিবেশ ও বৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির তিনজন (নবীন, প্রবীণসহ) সদস্য এই গ্রামেরই। তাঁদের সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগে গত অক্টোবরে অনুষ্ঠিত বিশ্ব খাদ্য দিবসে কৃষকদের মত বিনিময় সভার আয়োজন হয় উক্ত গ্রামে। আলোচনার এক পর্যায়ে তাঁরা তাঁদের গ্রামে একটি পাঠাগার স্থাপন করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এবং এই কাজে বারসিক’র পরামর্শ ও সহযোগিতা কামনা করেন। বারসিক’র আশ্বাস পাওয়ার পর তাঁরা পাঠাগার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
শুরু হয়ে যায় ঘর খোঁজা। এ গ্রামেরই একজন কৃষক আবুল কালাম বিনা শর্তে তাঁর বাড়িতে একটি ঘর ব্যবহার করার অনুমতি দেন। এই ঘরেই প্রথম যাত্রাশুরু হলো আতকাপাড়া কৃষাণ পাঠাগারের। ১৫ই নভেম্বর কৃষি দিবসে উদ্বোধন হলো পাঠাগারের। গ্রামেরই একজন প্রবীণ ব্যক্তি পাঠাগারের শুভ সূচনা করেন।
গ্রামবাসীদের এই পাঠাগার তৈরি উদ্দেশ সম্পর্কে কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু পাওয়ার জন্য নয়, আমাদের মাধ্যমে যদি কেউ কিছু শিখতে পারে তবেই এর স্বার্থকতা। পাশাপাশি জ্ঞান অর্জন ও মানুষের উপকারের জন্য এই পাঠাগার। এখানে সব বয়সের সকল মানুষের সমান অধিকার থাকবে। তবে এলাকার যুবক ও প্রবীণ কৃষকদের প্রাধান্য দিব আমরা বেশি। কারণ অভিজ্ঞদের কাছ আমাদের শেখার আছে অনেক কিছু। আর নবীনরা তো আগামী দিনের সম্পদ। তারাও জানুক একজন কৃষক কত পরিশ্রম করে খাবার উৎপাদন করেন।’
পাঠাগার সম্পর্কে তাঁরা আরো কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। যেমন প্রতি মাসের ৬ তারিখ রাতে তাঁরা সভা করবে। এই পাঠাগার পরিচালনার জন্য ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কার্যকরী কমিটি গঠন করেছে। তাছাড়া প্রতি মাসে এখানে বিভিন্ন শিক্ষণীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। নবীনদের শিক্ষা দেয়া হবে একজন মানুষ হিসেবে কৃষককে কিভাবে সম্মান দিতে হয়।
বারসিক’র পক্ষ থেকে একটি বুক শেলফ্ সহযোগিতা হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন চেয়ার, টেবিল, বই ইত্যাদি নিজেরাই সংগ্রহ করবে। প্রত্যেক কৃষক একটি করে কৃষি উপকরণ তৈরি করে এখানে রাখবে। যাতে ভবিষ্যতের নতুন প্রজন্ম এ থেকে শিক্ষা নিতে পারে।
‘মায়ের মতো শ্রদ্ধা রেখে তাঁরা এই পাঠাগার তৈরি করতে চায়। এখানে কোনো আর্থিক লেনদেন থাকবে না। থাকবে কৃষি, পরিবেশ সম্পর্কিত কিছু বই। আর থাকবে বø্যাকবোর্ড। এখানে নিরক্ষর কৃষকদের অক্ষর শেখানো হবে।
কৃষককে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। তাঁরাই সমাজের মেরুদÐ। কৃষক আদর্শিক, রাষ্ট্রের সম্পদ। তাঁদের শ্রমে, ঘামে টিকে আছে আমাদের অর্থনীতি।